
বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। কারো কারো কর্মকান্ডে নিজ সংসদীয় এলাকায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এম.পি’র অর্জন ম্লান হওয়ার আক্ষেপ করে উপজেলার চেয়ারম্যান বক্তব্য দেওয়ার দুইদিন পর এবার ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বাররা তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, যাদের আঁতে ঘা লেগেছে তারাই এসব করাচ্ছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যানরা বলছেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো আগে থেকেই তারা অভিযোগ করে আসছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একসঙ্গে অভিযোগ আনতে দেরি হয়ে যায়।শুক্রবার সকালে মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উদ্যোগে এ আয়োজনের কথা বলা হলেও আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল, জেলা পরিষদ সদস্য আতাউর রহমান নাজিমসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগের কয়েক নেতা এতে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি তাকজিল খলিফা এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
একটি সূত্র জানায়, তাকজিল খলিফার পছন্দের লোক হিসেবে আবুল কাশেম ভূঁইয়া দলীয় ‘মনোনয়ন’ পাওয়ার পাশাপাশি এখন তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা টানাপোড়েনের আলোচনাও আছে এলাকায়। তাকজিল খলিফা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নতুন কাউকে চেয়ারম্যান পদে দেখতে পান বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বিতর্কিত অন্যান্য কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে চাকরি দিতে কেউ কেউ সহযোগিতা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভালো অর্জনকে ম্লান করা হচ্ছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কারো নাম উল্লেখ করেননি।
এ সময় মন্ত্রীর বিভিন্ন কাজের প্রশংসা ও কিছু উদাহরণ এবং মন্ত্রীর প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা তুলে ধরে আরো বলেন, ‘আইনমন্ত্রী মহোদয় একজন অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। নি:স্বার্থভাবে তিনি উন্নয়ন কাজ থেকে শুরু করে চাকরি দিয়ে যাচ্ছেন। ওনার কাজে আমাদের মতো এলাকার মানুষ খুশি। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে কারো কারো কারণে মন্ত্রীর এসব অর্জন ম্লান হতে চলেছে। চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রীকে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে।’ এ অবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়। অভিযোগ করা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকায় কাজ করতে পারছেন না। উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজ এলাকায় কাজ নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া একই প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করছেন। নিয়ম অনুযায়ি প্রকল্প কমিটিও করা হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আখাউড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ‘উনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে আমি বলে আসছি সমবন্টন করার জন্য। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। তিনি বেশ অনিয়মের জড়িয়ে গেছেন।’
তবে মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মতিন জানিয়েছেন, চেয়ারম্যানের করা সংবাদ সম্মেলনের বক্তবের সঙ্গে এ সংবাদ সম্মেলনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আরো আগে থেকেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি বলেছি যে কারো কারো কারণে মন্ত্রীর ভালো অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আর আমার কথায় যাদের আঁতে ঘা লেগেছে তারাই এখন উঠেপড়ে লেগেছে। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে কোথায় কিভাবে কি কি অনিয়ম হচ্ছে সেগুলো তুলে ধরবো। এরপর ওনি যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবে আমি এগুবো।’
কিউটিভি/অনিমা/১৩ই মে, ২০২২/৩০ বৈশাখ, ১৪২৯/সন্ধ্যা ৬:৫৩