
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে উপাধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী পদে চাকুরী দেয়ার নামে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রাম মজিদা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবেদ আলী ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হাসিবুর রহমান হাসিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। কুড়িগ্রামে তোলপাড় চলছে এই ঘটনা নিয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ১ ও অফিস সহকারী ১ পদে গত ৫ মে গণমাধ্যম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। উপাধ্যক্ষ পদে ১৩ জন আবেদন করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের কৌশল ও ভীতির সঞ্চার করে সেই ১৩ জনের মধ্য পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭ জন। এদের মধ্যে এটি এম মো. আসাদুল ইসলামকে উপাধ্যক্ষ ও আউয়াল হোসেনকে অফিস সহকারী পদে নির্বাচিত করা হয়। সদ্য নির্বাচিত উপাধ্যক্ষের নিকট ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ও অন্য দিকে হত্যা মামলার আসামী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন মঞ্জুর ভাতিজা, আওয়ামী ঘরনা পরিবারের লোক হওয়ায় নির্বাচিত এটিএম আসাদুল ইসলামকে অপসারন চায় শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
নিয়োগ কমিটির সদস্য কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন জানান, আমিসহ জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আবু বক্কর সিদ্দিক নিয়োগ পরীক্ষায় নিযুক্ত জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল শাহিনকে প্রশ্নে পত্রের ব্যাপারে বলেছিলাম, আমাদের কোন ভূমিকা আছে কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি প্রশ্নে ভুল ত্রুটি না হওয়ার কথা।
তবে অধ্যক্ষ আবেদ আলী একজন আওয়ামী লীগের সক্রীয় সদস্য হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ তাকে নিয়োগ প্রদান করেন। কমিটির এক মিটিং এ জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে জানতে পেরেছি একমাত্র আবেদ আলী আ’লীগপন্থি, বাকি ৩ জন ছিল বিএনপিপন্থি এ কারণে আবেদ আলীকে অধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। জনশ্রূতি আছে ওই সময় আ’লীগ প্রভাবশালী নেতার কাছে অধ্যক্ষ আবেদ আলী ৪০ লাখ টাকার দফারফা করেছে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছে উপাধ্যক্ষ নিয়োগে।
কুড়িগ্রাম মজিদা কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বলাভের পূর্বে আবেদ আলী কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং সেখানেও তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করে কলেজটিকে ধ্বংস করে এখন মজিদ কলেজকেও ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাঁঠালবাড়ির বাসিন্দা বলেছেন।
উপাধ্যক্ষ পদে পরীক্ষার্থী সহকারী অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান সুজন বলেন, এটা ধ্রূব সত্য যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েছে আসাদুল। কেননা অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষক হয়ে ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তার কাছে দুরূহ ব্যাপার। এমন মন্তব্য অনান্য পরিক্ষার্থীদেরও ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ৮৬৪ জনকে খুন ও ১৪ হাজার আহত ছাত্রজনতার মধ্য দিয়ে এই অন্তবর্তিকালীন সরকার এসেছে। এই ফ্যাসিস্টের দোসর অধ্যক্ষ আবেদ আলী ঘুষ নিয়ে কৌশলে আসাদুলকে উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত করার ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রজনতা এ নিয়োগ বাণিজ্য মেনে নিবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গভর্নিং বডির সদস্য বলেন, আমাদের কোন মতামত না নিয়ে উপাধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে ৪০ লাখ টাকার রফাদফা মানুষের মুখে মুখে শুনতেছি। বর্তমান অধ্যক্ষ আবেদ আলী কুড়িগ্রামের আদর্শ বিদ্যাপীঠ মজিদা কলেজটিকে সুকৌশলে আওয়ামীকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
গভর্নিংবডির সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তবে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান হাসিব পরীক্ষার আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে পরিক্ষার্থীকে আতিকুর রহমান সুজনকে টাকা রেডি করার কথা বলে। কিন্তু বিএনপি ঘরনার বলে টাকা কম পাওয়ার আশঙ্কা মনে করে সভাপতি হাসিবুর রহমান হাসিব। এমন কথোপকথনের কথা স্বীকার করেন পরীক্ষার্থী আতিকুর রহমান সুজন।
জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল শাহীন বলেন, বিমানে যাতায়াত ব্যবস্থা ও সবার সামনে আমাকে একটি খাম দিয়েছে অধ্যক্ষ ও সভাপতি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.এ এস এম আমান উল্লাহ নিয়োগে কোন্দলের বিষয়টি অবগত আছেন। প্রশ্ন আমি করেছি ঠিকই কিন্তু এখানে কোনো দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয় নাই।
কুড়িগ্রাম মজিদা কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ আলী জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া মেধাভিত্তিতে হয়েছে। টাকা লেনদেন বিষয়ে মানুষ বললে তো আর মুখ আটকানো যেতে পারে না।
Quicktv/রাখি ১৮.০৯.২০২৫/রাত ৯.৪০