খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক —

superadmin | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১২:৫৫:৫১ এএম

খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক —

কুড়িগ্রামে অনেক পদধারী নেতা আছেন। তাদের অনেকেই পদের কোটায় টেন্ডারের ভাগ পেয়ে আসছেন। আমার দুঃখ এখানেই, এরা যদি ১০টি টাকাও যদি ঢাকায় শ্রম দিয়ে আর তদবির করে এলাকার উন্নয়নের জন্যে নিয়ে আসত, তাহলে শান্তনা পেতাম আর তাদের হালুয়া রুটির ভাগাভাগিকে কিছুটা হলেও জায়েজ মনে করতাম।

কিন্তু না, এরা নিতেই জানে। দিতে জানেনা। আর উন্নয়ন বরাদ্দ নেয়ার জন্যে যে যোগ্যতা প্রয়োজন, সেটাও তাদের নেই। উপদেষ্টা, সচিব অথবা সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তাদের দপ্তরের বারান্দায় যেতে গেলেও তাদের অনেকের বুক কাঁপে ব্যক্তিত্বের অভাবে।

ব্রম্মপুত্র,ধরলা,তিস্তা দুধকোমর সহ ১৬টি নদ-নদী বিধৌত কুড়িগ্রাম জেলার মূল সমস্যা নদী ভাঙ্গন। এবারে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান সাহেব পূর্ব-সতর্কতামূলক ১৩টি প্রকল্পের একটা তালিকা আমার হাতে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, বরাদ্দ নিয়ে আসতে পারলে কুড়িগ্রামের নদী ভাঙ্গন কবলিত অনেক মানুষের আহাজারি থেমে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইয়ারমেট, পানি সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সিনিয়র সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করে এলাকার নদী ভাঙ্গনের কথা বলতেই – উপদেষ্টা আর্থিক অসঙ্গতির একটা চিত্র তুলে ধরলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে অর্থপাচারের শিকার এখন হাহাকারময় দেশের আর্থিক খাত। তারপরেও চললো – আমার প্রচেষ্টা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম চৌবে। পাবনার মানুষ। একদা আমরা পাবনায় একই পাড়ায় থাকতাম। সিনিয়র এই বড়ভাইয়ের তড়িৎ পদক্ষেপে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে ১৩টি প্রকল্পের মাঝে মাত্র একটি প্রকল্পের বরাদ্দ পেলাম। আমাকে চয়েজ করে কুড়িগ্রাম জেলার যে কোন একটি প্রকল্প তিনি নিতে বললেন।

আমি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের খারুয়ার পাড় এলাকাটির প্রকল্পটি বেছে নিলাম। অতঃপর এই এলাকার মানুষগুলো ভাঙ্গনের শব্দ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের দ্রুত পদক্ষেপে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু করলেন। এখন প্রকল্পটির কাজ চলমান। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হাসানের আন্তরিকতার সাথে প্রকল্পটি সম্পন্নের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ আন্তরিকতা ও চৌকষতা লক্ষ্য করেছি।

 

প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, নির্বাহী প্রকৌশলী, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

আমি নির্মল ও নির্ভেজাল আনন্দ পাই -মেধা ও শ্রমের স্বীকৃতি মিললে। আজ অবধি আমি জানিনা এই প্রকল্পটির ঠিকাদার কে? চাইলে আমি এই কাজটি নিজেই নিতে পারতাম অথবা পছন্দের কাউকে নিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি শৈশব কৈশোরেই শিখেছি, শুধু দান খয়রাত করলেই ছদ্কায়ে জারিয়া আদায় হয়না – ছদ্কায়ে জারিয়া মেধা শ্রমের মাধ্যমেও অর্জিত হতে পারে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমি আমার মেধা শ্রম দানের বিনিময়ে কোন প্রাপ্তির প্রত্যাশা রাখিনি।

কুড়িগ্রামে কলকারখানা নেই। ব্যবসায়ীদের বিরাট একটা অংশ ঠিকাদার। একটা টেন্ডার বের হলে কামড়াকামড়ি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগে সকলে মিলে যদি আমরা কুড়িগ্রামের উন্নয়নে সামান্য মেধা শ্রম দান করি তাহলে খারুয়ার পাড়ের প্রকল্পের মত অনেক প্রকল্পই কুড়িগ্রামের চেহারা পাল্টে দিত।

কুড়িগ্রামের বর্তমান নেতাদের শুধু নেওয়ার সুতীব্র আকাংখার পাশাপাশি কিছু দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টির জন্যে অনুরোধ করছি। টাকা পয়সা কিছুই দিতে হবেনা কাউকে। আপনারা কুড়িগ্রামের উন্নয়নে একটু মেধা ও শ্রম দিন। আমাকে পরামর্শ দিন, সাহস দিন, সময় দিন -কথা দিলাম কুড়িগ্রামের চেহারা আমরা সকলে মিলে পাল্টে দিতে পারব ইন্শাআল্লাহ।

 

লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে চারটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত পাঠক মহলে। গঠনমূলক ও ইতিবাচক লেখনীতে তিনি এক নতুন মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

 

রাজ /১৩.০৯.২০২৫/রাত ১২.৫০

▎সর্বশেষ

ad