
ডেস্ক নিউজ : দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সংকটকালীন সময়ে কারো হঠকারিতার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল এই সরকারকে মুক্তি দিতে পারে।’শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত পার্টির গণমিছিলপূর্ব ঢাকা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা আজও প্রতিবিপ্লব ও প্রতিঅভ্যুত্থানের ভয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের অদূরদর্শিতা ও একাংশের লোভের কারণে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য বিপন্ন হচ্ছে। সরকারের কিছু অংশ যেমন লোভে পড়েছে, তেমনি গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যেও ক্ষমতালিপ্সা উসকে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অভাবে সরকার জনগণের বিপুল সমর্থনকে শক্তিতে রূপ দিতে পারেনি; বরং সেটিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেছে। এর ফলে সামাজিক নৈরাজ্য বাড়ছে, আর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী অপশক্তির তৎপরতা জোরদার হচ্ছে।’
সাইফুল হক সতর্ক করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যদি রাজপথ বা এলাকা দখলের সহিংস প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়, তাহলে রাজনৈতিক নৈরাজ্য বাড়বে এবং গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে।’তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, গণভোট ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সরকারকে পক্ষপাতহীন ভূমিকা নিতে হবে এবং সব পক্ষকে আস্থায় নিয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা আর কোনো টাকার খেলা দেখতে চাই না। যদি অতীতের মতো পেশীশক্তি ও অর্থের প্রভাব চলে, তাহলে আগামী সংসদ বিত্তবান ও ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত হবে।’তিনি গণঅভ্যুত্থানের অর্জন রক্ষায় জনগণকে ‘অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সমাবেশে পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী বলেন, ‘গত ১৪ মাসে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও না-খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। বাজারের আগুনে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। পাশাপাশি নারীবিদ্বেষও নতুন রূপে মাথাচাড়া দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে সংসদে নারীদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সুযোগও এবার হয়নি।’
আরেক সদস্য আকবর খান বলেন, ‘উন্নত ব্যবস্থাপনার নামে দেশের সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। আমরা অবিলম্বে এসব জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই।’সমাবেশের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জনগণের জীবন জীবিকা নিশ্চিত, বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সমগ্র প্রশাসন ঢেলে সাজানো, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব উচ্ছেদ, দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার তৎপরতা বন্ধ, গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আট দফা আশু দাবিতে এই সমাবেশ ও গণমিছিলের আয়োজন করা হয়।
সাইফুল হকের সভাপতিত্বে এবং আকবর খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, মাহমুদ হোসেন, এডভোকেট মাহবুবুল করিম টিপু, মাহমুদুল হাসান পিপলু, সজীব সরকার রতন, মাসুদুর রহমান মাসুদ, সাইফুল ইসলাম, জুঁই চাকমা, অরবিন্দু বেপারী বিন্দু, শেখ মোহাম্মদ শিমুল, মীর রেজাউল আলম, এমডি ফিরোজ ও কবি জামাল সিকদার।
সমাবেশ শেষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীদের গণমিছিল হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, দৈনিক বাংলা, নয়া পল্টন ও বিজয়নগর হয়ে সেগুনবাগিচায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
আয়শা/২৪ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:৩৩






