ব্রেকিং নিউজ
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন হুমায়ুন কবির  মেয়েকে ধর্ষণ, নরপিশাচ পিতার কারাদণ্ড কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার

যুদ্ধের চেহারা বদলে দিচ্ছে ড্রোন, আনছে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:৫৪:৪০ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘এটি এক প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সামরিক উদ্ভাবন।’ গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক প্রকাশ্য সত্য স্বীকার করেছিলেন—ড্রোন শুধু সামরিক শিল্প নয়, ২১ শতকের যুদ্ধের চেহারাকেও বদলে দিয়েছে। 

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য শুধু সামরিক আধিপত্য নয়, অর্থনৈতিকভাবে বিলিয়ন ডলারের বাজারও। অসংখ্য স্টার্টআপ এই বিশাল শিল্পে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে মরিয়া। ড্রোন প্রযুক্তির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা দিন দিন আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। নবীন প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ঐতিহ্যবাহী অস্ত্রশিল্পের বড় কোম্পানির সঙ্গে সফলভাবে প্রতিযোগিতা করছে। এতে বিনিয়োগকারীদেরও নজর পড়েছে।

এর উদাহরণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন নির্মাতা অ্যান্ডুরিল। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির সর্বশেষ অর্থায়ন পর্বে বাজারমূল্য ছুঁয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপেও তিনটি অতি-মূল্যবান কোম্পানি রয়েছে (১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্য): জার্মানির কোয়ান্টাম সিস্টেমস, হেলসিং এবং পর্তুগালের টেকেটার।

ঐতিহ্যবাহী প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো নতুন খেলোয়াড়দের আগ্রাসন সীমিত করার চেষ্টা করছে এবং তথ্যকে ঘোলাটে করছে। তারা বলছে, ড্রোনগুলো নিচে ও ধীরে উড়ে, কিছু স্টার্টআপের মূল্যায়ন অযৌক্তিক, এবং ডিভাইসগুলো ‘অপ্রচলিত’ হয়ে যেতে পারে।

ব্রিটিশ কনসালট্যান্ট ও সাংবাদিক জিলিয়ান টেট ফাইনান্সিয়াল টাইমসে বলেছেন, ‘(ড্রোন যুদ্ধ) যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন করেছে। সস্তা ড্রোন যদি ব্যয়বহুল জাহাজ ও বিমান ধ্বংস করতে পারে, যুদ্ধের ক্ষমতা ও অর্থনীতি উভয়ই বদলে যায়।’ এটি বোঝায়, ঐতিহ্যবাহী কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তিতে নিজেদের স্থান হারানোর সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও ড্রোন প্রস্তুতকারকদের পক্ষে কাজ করছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ভন ডার লেন ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য ২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করা হবে। বিশেষত্ব হলো, অর্থ মূলত সামরিক ড্রোন ক্রয় ও উন্নয়নে ব্যবহার হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামূলক বাহিনী তাদের সংখ্যাগত ও সামরিক সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য দূরপাল্লার যানবাহন ব্যবহার করছে। এতে ছোট কিন্তু কার্যকর ফোর্স বড় শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হচ্ছে।

স্পেনের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্দ্র–এর অস্ত্র ও গোলাবারুদের পরিচালক ম্যানুয়েল রদ্রিগেজ সারেজো বলেন, ‘২০২৪ সালে ইউক্রেন দুই মিলিয়ন ড্রোন উৎপাদন করেছে, যা ২০২৫ সালে দ্বিগুণ হবে। সবকিছুই যুদ্ধের চাহিদা থেকেই উদ্ভূত হয়েছে।’

রাশিয়াও—কৌশলগত অস্ত্র হারিয়ে এবং অর্থনীতি যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় টলমল—সস্তা দূরপাল্লার যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। এসব তারা নিজস্বভাবে তৈরি করছে বা চীন ও ইরান থেকে কিনছে।

অনেক ড্রোন কেবল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তেও হানা দিচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যেমন সাবমেরিন কেবল, ধ্বংসের হুমকি সৃষ্টি করছে। তাই ইউরোপ সীমান্তে একটি ‘অ্যান্টি-ড্রোন প্রাচীর’ তৈরি করছে, যার জন্য ৬ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ হয়েছে এবং এটি ইউক্রেনের সঙ্গে সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হবে। ইউক্রেন প্রতিদিন এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করছে।

প্রবৃদ্ধি

২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় টানা দশ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৩ বিলিয়ন ইউরোতে (৩৯৯ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে। ২০২৫ সালে এটি ৩৮১ বিলিয়ন ইউরো (৪৪৩ বিলিয়ন ডলার) হতে পারে।

একই প্রবণতা ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা খাতের কোম্পানির বাজারমূল্যেও প্রতিফলিত হয়েছে; ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাজারমূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মেলা ফেইন্ডেফ–এ সামরিক বা দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য ড্রোন উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানির সংখ্যা বিস্ফোরণমূলক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে সব প্রতিষ্ঠানই মানববিহীন যানবাহনের বিপ্লবকে সমান উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করছে না। জার্মান প্রতিরক্ষা জায়ান্ট রাইনমেটাল–এর সিইও আর্মিন পাপারজার সেপ্টেম্বরে লন্ডনে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদর্শনীতে ‘ড্রোন বাবল’–এর সতর্কবার্তা দেন।

তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ড্রোনের হামলা থামানোর প্রযুক্তি শীঘ্রই এই ডিভাইসের কৌশলগত ও বাজারমূল্য হ্রাস করবে। তবে পাপারজার তখন তার স্কাইনেক্স অ্যান্টি-ড্রোন কামান সিস্টেম বিক্রি করছিলেন, যা ইউক্রেনে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।

‘কেউ স্পষ্ট বলতে পারছে না, অ্যান্টি-ড্রোন প্রাচীর কেমন হওয়া উচিত,’ বলেন মিগুয়েল তেজেইরো, স্পেনের টিআরসি–এর ইনোভেশন ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ‘পরম্পরাগত ড্রোন (বিমান) নিরপেক্ষ করা সহজ, কিন্তু মধ্যম বা ছোট ড্রোন যেমন ইরানের শাহেদ, যা মাত্র ৩০০ ইউরো বা কম মূল্যের এবং বিস্ফোরক সংযুক্ত করা যায়, তা পুরোপুরি আলাদা চ্যালেঞ্জ।’

ইসরাইলের আয়রন ডোম ব্যবহার করলে প্রতি সক্রিয়তায় প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো খরচ হয়। প্রশ্ন ওঠে, ৫০ হাজার ইউরো মূল্যের ড্রোনের ঝাঁক ঠেকাতে ১ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার যৌক্তিক কি?

অন্যদিকে, আরকুইমেয়ার–এর ডিফেন্স ডিরেক্টর ম্যানুয়েল মার্টিন পাপারজারের সংশয়ে একমত নন। তিনি বলেন, ‘বাজারে পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়েছে; তিন বছরে চাহিদা ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এতে উৎপাদন ক্ষমতা ও স্বয়ংক্রিয়করণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে বছরে এক ড্রোন অর্ডার হত; এখন ছয় মাসে হাজারটি ডেলিভারি সম্ভব। আমরা উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করেছি, কর্মী বাড়িয়েছি, সুবিধা মানিয়ে নিয়েছি এবং কিছু প্রক্রিয়ার রোবটিককরণ করেছি।’

মধ্যম ও ছোট ড্রোনগুলো অ্যাসেম্বলি লাইন–এ সহজে তৈরি করা যায়, প্রযুক্তি প্রায় সবার কাছে প্রবেশযোগ্য এবং ছোট ও মাঝারি কোম্পানির জন্য সুবিধাজনক। এট্রেয়ার গ্রুপ–এর রাফায়েল গার্সিয়া বলেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতে ৯৫ শতাংশ কোম্পানি এসএমই। নতুন খেলোয়াড়দের উত্থান ঘটেছে, তবে প্রযুক্তি নির্ভরযোগ্য ও শক্ত ভিত্তিতে থাকা জরুরি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-যুক্ত সিস্টেমে।

বড় কোম্পানিগুলো ছোট কোম্পানি অধিগ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, জুলাইতে ইন্দ্রা স্পেনের অভিজ্ঞ ড্রোন উৎপাদনকারী আর্টেক ডিএএস কে অধিগ্রহণ করেছে। সারেজো বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ হিউম্যানলেস ভেহিকলস–এ উদ্ভাবন এনেছে যা আগে দেখা যায়নি। তবে প্রতিরক্ষা পরিবর্তন ধীরে ও সতর্কভাবে হওয়া উচিত।’

তারা এখনও টারসিস ড্রোন উৎপাদন চালাচ্ছে এবং ভ্যালেরো সিস্টেম–এর মাধ্যমে মধ্যম আকারের বহুমুখী এরিয়াল ড্রোন ব্যবহার করছে, যা সোয়ার্ম এটাক এবং ফাইটার জেট–সহ পরিচালনা উভয়েই সক্ষম। সারেজো ‘ড্রোন বাবল’–এর আশঙ্কা দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘এরা এখানেই থাকবে, যদিও ইউক্রেনের মতো ব্যবহার নাও হতে পারে। তবে আমরা তাদের কর্মকাণ্ড থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি—যেমন আটকানো এড়ানো বা স্যাটেলাইট-নির্ভরতা কমানো।’

যদিও সরবরাহ খাত প্রস্তুত, চাহিদা কি সমানভাবে প্রস্তুত? রাষ্ট্র ক্রেতা হলে অর্থ সমস্যা নয়, তবে বাজেট, পরিকল্পনা, চুক্তি ও আইনগত নিয়ন্ত্রণ ধীরগতি সৃষ্টি করে। ডেভিড আয়ালা, ইনসা–এর জেনারেল ডিরেক্টর বলেন, ‘নীতি পরিবর্তন জরুরি হলেও তা হঠাৎ করা যায় না। নতুন প্রযুক্তি ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে।’

স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মোট ৩৬ বিলিয়ন ইউরোর ৩১টি স্পেশাল মডার্নাইজেশন প্ল্যান (এসএমপি) চালু করেছে, যার মধ্যে ১০.৪৭ বিলিয়ন ইউরো এ বছরে বিনিয়োগ হবে। এসব এসএমপি মূলত সেল্ফ-প্রোপেলড আর্টিলারি, এয়ার ট্রান্সপোর্ট, মানববিহীন যানবাহন এবং তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম আধুনিকীকরণের জন্য।

দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন চক্র

‘আমাদের নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং ইউরোপীয় কাঠামো ভালো, কারণ এরা গুণগত মান ও ভিত্তি স্থাপন করে যা অনেক নিশ্চয়তা দেয়, তবে বর্তমান পরিস্থিতির মতো ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হতে পারে,’ বলেন মিগুয়েল তেজেইরো।

ম্যানুয়েল রদ্রিগেজ মনে করেন, ডিফেন্স মিনিস্ট্রি–এর উন্নয়ন চক্র দ্রুত করা যেতে পারে, তবে শিল্পকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। ম্যানুয়েল মার্টিন বলেন, ‘স্পেনে আমরা ধীরগতির নই। সমস্যা হলো, হুমকি এখনও অনেক দূরে এবং আমরা শান্তিকালীন সময়ের গতিতেই এগোচ্ছি।’

ইউরোপীয় মিত্ররা এখনও একমত নয়, সীমান্তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ড্রোন প্রাচীর কেমন হবে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে ড্রোন অ্যালায়েন্স কিভাবে গড়ে তোলা যাবে তা নিয়ে। ইউক্রেন জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে সাহায্য পেতে সদা প্রস্তুত।

কিছু সামরিক কর্মকর্তা আরও কঠোর মত দেন। স্পেনের ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ–এর পরিচালক ও আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভিক্টর মারিও বাদোস মাদ্রিদ ফ্যামিলি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন–এর এক মধ্যাহ্নভোজে বলেন, ‘সামরিক সক্ষমতা হঠাৎ তৈরি করা যায় না। ইউরোপে আমাদের কমান্ড ও কন্ট্রোল, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, ড্রোন এবং স্যাটেলাইটের মতো মৌলিক উপাদান নেই। আমরা শান্তির লভ্যাংশ ভোগ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপ পুতিনের কাছে দৃঢ় হতে পারেনি, তাই বিচলন সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ইউরোপ কঠিন সময় পার করছে এবং মস্কো এটি ভালোভাবে জানে।’

 

 

আয়শা/২৪ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:৩৩

▎সর্বশেষ

ad