
নিজস্ব প্রতিবেদক : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে করা অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকার দাবি অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক । জানাগেছে, গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ রোকসানা আকতার একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ জেসমিন আরা বেগমের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করেন।
পরে উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি তদন্ত করে অভুযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত প্রতিবেন জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠায়। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোছাঃ জেসমিন আরার দাবি তাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার সহকর্মী রোকসানা আক্তার ও তার স্বামী মজিবর রহমান প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেনের সাথে যোগসাজশ করে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছেন।
২৪ আগস্ট সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের আলীর নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে আমি লিখিত জবাব দাখিল করি। কিন্তু তিনি এক তরফাভাবে আমাকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আমি এই মনগড়া প্রতিবেদন প্রত্যাহার করার দাবী করছি।”ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের আচরণ দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়ে অস্বস্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। এজন্য বাধ্য হয়ে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তার মতে, তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিক তথ্যই উঠে এসেছে। তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি অভিযুক্তের লিখিত জবার পত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা জেসমিন আরা দাবি করেন, গত ১৮ আগস্ট তদন্তের নোটিশ অভিযোগকারী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রদান করলেও তাকে কোন নোটিশ প্রদান করা হয় নাই। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষককে কেন নোটিশ প্রদান করা হয় নাই – জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের বলেন, প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল। অভিযুক্ত শিক্ষিকা জেসমিন আরার অভিযোগ – ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন রোকসানা আকতারের পক্ষ নিয়ে অভিযোগের ঘটনা সত্য বলে সুপারিশ করেছেন । সহকারী শিক্ষক জেসমিন আরা বেগমের স্বামী মোঃ আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, মজিবর রহমান ও তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার স্ত্রী জেসমিন আরার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন করিয়েছেন।
এরই মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শ্রী স্বপন কুমার রায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য স্থানীয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে মৌখিক নির্দেশ দিলে স্থানীয় শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের একজন নেতা জানান, অভিযোগকারী রোকসানা আক্তারের স্বামী মজিবর রহমানকে বিভিন্ন সময় সুরাহা প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি ইতিবাচক সাড়া দেননি। ফলে বিষয়টি মিমাংসা করা সম্ভব হয় নি। তবে অভিযোগকারী শিক্ষিকা রোকসানা আক্তারের স্বামী মজিবর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- তাকে এবিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি।
এদিকে ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট গত ১৪/০৯/২০২৫ ইং তারিখে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতারুজ্জামান জানান, দাখিলকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়েছে এবং প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের আত্মপক্ষসমর্থনে লিখিত জবাব পত্র কেন জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়নি- জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন তাই জবাব পত্রটি পাঠানো হয়েছে কিনা সেটি তার জানা নেই।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শ্রী স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুনরায় সেটি সংশোধন করে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত শিক্ষিকা জেসমিন আরার লিখিত বক্তব্য সেটিতেও কেন সংযুক্ত করা হয়নি এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে শো-কোজ করা হবে। [বিদ্র: নিউজে প্রতিবেদকের নাম/ ঠিকানা ব্যবহার করবেন না।
আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /বিকাল ৩:৫০