লংকার লণ্ঠনে পুড়ছে কর্তৃত্ববাদ মসনদ, ভয়ে কাঁপছে ভারতও

Ayesha Siddika | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৫:৪৮:২৯ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিক্ষোভে আগুনে জ্বলছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজপথ। একের পর এক তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন ভেঙে দিচ্ছে গণতন্ত্রের চাদরে মোড়ানো দীর্ঘদিনের ক্ষমতার দুর্গ। তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের সুতিকাঘার শ্রীলংকা। সেখান থেকে বাংলাদেশ। এরপর নেপাল। প্রজন্মের ক্ষোভ আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পথ ধরে জেন-জিদের হাতে ঘটছে সরকার পতনের ঘটনা। 

তারা প্রমাণ করছে, লণ্ঠনের আলো যেমন অন্ধকার ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি শ্রীলংকার সংগ্রামের সেই স্ফুলিঙ্গ এখন গোটা অঞ্চলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ভয়ে কাঁপছে ভারতের মোদি সরকারও। ইতোমধ্যেই ১৯৭৪ পরবর্তী ভারতের সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোদি বন্ধু অমিত শাহ। আল জাজিরা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ একই সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি এবং বয়স্ক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের বিচ্ছিন্নতা। জেন-জিরা জীবনের শুরুতেই দুটি অর্থনৈতিক মন্দা দেখেছে। 

২০০৮-০৯ এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে। সেই সঙ্গে দুটি বছর তারা ছিল সামাজিক বিচ্ছিন্নতায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতি তাদের নির্ভরতা ও দক্ষতা বেড়েছে। অথচ তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সত্তরের ঘরে থাকা রাজনীতিকরা কেপি শর্মা অলি ৭৩ (নেপাল), শেখ হাসিনা ৭৬ ৯ বাংলাদেশ) ও গোতাবায়া রাজাপাকসে ৭৪ (শ্রীলংকা) বছর বয়সে ক্ষমতায় ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ খুঁজে পায়নি। এই বিচ্ছিন্নতাই আন্দোলনে আগুন জ্বালিয়েছে।’ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমেলা সেন বলেন, ‘এই আন্দোলনগুলো কেবল ক্ষোভ নয়, বরং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার এক গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা।’ 

গত সপ্তাহে নেপালের বিক্ষোভ নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে। এর আগে ২০২২ সালে শ্রীলংকায় আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশে এমন দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী। ২০২২ সালে শ্রীলংকার আর্থিক বিপর্যয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ১২ ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাট, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতি সবমিলিয়ে শুরু হয় ‘আরাগালায়া’ (সংগ্রাম) আন্দোলন। 

আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবন দখল করে নেয় বিক্ষোভকারীরা। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশের দমনপীড়ন শত শত মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে এবং আন্দোলন রূপ নেয় শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি শাসনের অবসানের দাবিতে। 

এতে ছাত্রনেতারা আলটিমেটাম দেন, এবং বিরোধীরা সমর্থন জোগায়। ইন্টারনেট বন্ধ থেকে শুরু করে দমনপীড়ন সবকিছু পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে। অবশেষে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে গিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। 

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রবাসীসহ প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ গেমিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে অনলাইন ভোটের মাধ্যমে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে টানা তিন দিনের আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলিপদত্যাগ করতে হয়। 

কাঠমান্ডুতে আন্দোলন শুরু হয় যখন সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তরুণদের ক্ষোভ ছিল মূলত গভীরে চরম বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাস্তায় নেমে আসে হাজারো স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, বিভিন্ন নেতার বাড়ি ও সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউজ পুড়িয়ে দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ভাঙচুর করেন। 

 

আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /বিকাল ৪:৪৫

▎সর্বশেষ

ad