ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও সভ্যতা

Ayesha Siddika | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৫:২৬:৫৫ পিএম

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা শরিফ হাসান শাহীন

গৃহহীন মানুষের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। শিশুদের কোলাহল আজ রূপ নিয়েছে করুণ আর্তনাদে, মায়েরা সন্তান হারিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে, পিতারা বুকভরা শোক চাপা দিয়ে কবর খুঁড়ছে।
 
এ লাইনগুলো নিছক শব্দ নয়; এগুলো হলো হাজারো নিরীহ প্রাণের রক্তমাখা আর্তনাদ। এমন মানুষের আর্তনাদ, যাদের আজ ঘুম নেই, শান্তি নেই, নেই কোনো নিশ্চয়তার ভবিষ্যৎ। অথচ দুনিয়ার এক বিশাল অংশ এখনো নিশ্চুপ, নির্বিকার, ঘুমে বিভোর।
 
ফিলিস্তিন মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীনতম বসতি। আরিহা (أريحا) শহরকে বলা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম নগরী, যার ইতিহাস প্রায় ৯,০০০–১০,০০০ বছর আগে পর্যন্ত প্রসারিত। এখানে মানুষ কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতার নানা নিদর্শন গড়ে তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে কানানিয় (كنعانيون), ফিলিস্তিনীসহ বহু জাতি এই ভূমিতে বসতি গড়ে। ইতিহাস বলছে, এই অঞ্চল ৫,০০০-৭,০০০ বছর আগে থেকেই নগরায়ণের সাক্ষী। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলো প্রমাণ করে যে ফিলিস্তিন ছিল সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্র। কিন্তু আজ সেই হাজার বছরের বসতি, ঐতিহ্য ও জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দখলদার শক্তির নিষ্ঠুর আগ্রাসনে।
 
দখলদারিত্বের ৭৭ বছর
 
১৯৪৮ সালে অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা। লাখো মানুষকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে শরণার্থী করা হয়। তারপর থেকে ক্রমাগত দখল, হত্যা, বসতি ধ্বংস, মসজিদ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার মতো বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। আজকের গাজা যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা কারাগার,যেখানে মানুষ পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও ওষুধের জন্য হাহাকার করছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই অত্যাচারী জনপদ থেকে মুক্ত করো। (সুরা নিসা:৭৫) এই আয়াত স্পষ্ট যে, মজলুমের পাশে দাঁড়ানোই মুমিনের দায়িত্ব। গাজার আজকের বাস্তবতা যেন এই আয়াতের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, 

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَّا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ আর তোমরা ফিতনা থেকে সাবধান হও, যা শুধু জালিমদের গায়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তা সবার ওপর এসে পড়বে। (সুরা আনফাল:২৫) এ আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, জুলুম চলতে দিলে তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।

 

রাসুলের বাণী
 
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

 إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى মুসলমানরা এক দেহের মতো। শরীরের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে পুরো শরীরই জ্বরে আক্রান্ত হয়। (সহিহ মুসলিম:২৫৮৬) আজ গাজায় রক্ত ঝরছে, শিশুরা অনাথ হচ্ছে, নারীরা সর্বস্ব হারাচ্ছে,তাহলে মুসলিম উম্মাহর অন্য অংশ নিশ্চুপ থাকতে পারে না। প্রকৃত মুমিনের অন্তর ব্যথিত হবেই।

বর্তমান গাজার চিত্র

 
প্রতিদিন শিশু ও নারীর লাশ উঠছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। হাসপাতালগুলো রক্ত ও ওষুধের সংকটে মৃত্যুপুরীতে পরিণত। হাজার বছরের পুরোনো মসজিদ, বাজার, ঘরবাড়ি মুহূর্তেই মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। জীবন্ত মানুষের চোখের সামনে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
 
ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাচীনতম ঠিকানা। সেই ৫,৭৭৫ বছরের ইতিহাস আজ ধ্বংস হচ্ছে মাত্র ৭৭ বছরের অবৈধ দখলদারিত্বে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং ঈমানের পরীক্ষাও। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের দোয়া,

হে আল্লাহ! ফিলিস্তিনের মজলুমদের জন্য সাহায্যকারী প্রেরণ করুন। দখলদারদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করুন এবং মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করুন। আমিন।

 

 

আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /বিকাল ৪:২৩

▎সর্বশেষ

ad