
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিহারের নির্বাচনী প্রচারে সোমবার এমন এক মন্তব্য করে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন বিরোধী শিবিরের মুখ রাহুল গান্ধী, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। মুজফফরপুরে মহাজোটের জনসভায় রাহুলের সরাসরি বক্তব্য, ‘ভোটের জন্য সব করতে পারেন মোদি, এমনকি মঞ্চে উঠে নাচতেও পারেন তিনি।’ প্রায় দু’মাস পর মাঠে নেমে এই এক মন্তব্যে কার্যত ঝড় তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
রাহুলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন আদায়ের জন্য ধর্মীয় আচার থেকে শুরু করে জনপ্রিয় সংস্কৃতির সবকিছুকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদবও। রাহুলের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘ভোটের জন্য প্রধানমন্ত্রী সব কিছু করতে পারেন। তিনি দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট, দারিদ্র্য বা বেকারত্বের চেয়ে বেশি ভাবেন কিভাবে জনতার আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোট পাওয়া যায়।’
বিরোধী নেতার এই বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, তা নিয়ে চলছে নানা ব্যাখ্যা। অনেকেই মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা রাহুলের জন্য রাজনৈতিকভাবে উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। তবে কংগ্রেস শিবিরে ভিন্ন সুর। তাদের মতে, রাহুল কেবল বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন— ক্ষমতায় টিকে থাকতে শাসকদল আজ অভিনয় ও প্রচারণার সীমাহীন প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, রাহুলের এই মন্তব্যে বিরোধী রাজনীতি কিছুটা প্রাণ ফিরে পেলেও শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছে এমন অভিযোগও উড়ছে। এদিকে শাসক দলের নেতারা রাহুলের মন্তব্যকে ‘অসভ্য ও দায়িত্বহীন’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
তাদের বক্তব্য, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার বিরোধী নেতার মানসিক দেউলিয়াপনার প্রমাণ। একইসঙ্গে বিজেপি শিবির মনে করছে, রাহুলের বক্তব্য তাদের প্রচারে উল্টোভাবে কাজে দেবে, কারণ সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত আক্রমণ পছন্দ করেন না।
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে যখন বিহারের নির্বাচনে শেষ পর্যায়ের ভোটপ্রচারে সব দলই মরিয়া। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার পর হঠাৎ করে রাহুলের প্রচারে ফেরা বিরোধী শিবিরে নতুন জোয়ার এনেছে। এর আগে ভোটার অধিকার যাত্রা শেষে তিনি কার্যত জনসম্মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। কংগ্রেসের অনেক নেতা পর্যন্ত তেজস্বী যাদবের প্রচারে সক্রিয় ছিলেন না। আরজেডির সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে বিরোধই তার প্রধান কারণ বলে দলের ভেতরের সূত্রে জানা গেছে।
এখন সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে রাহুল আবার মাঠে ফিরেছেন, তবে তার এই তীব্র ভাষা নতুন বিতর্ক ডেকে এনেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাহুলের বক্তব্য আসলে বিরোধী রাজনীতির হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। গত এক দশকে একাধিক নির্বাচনে পরাজয়ের পর কংগ্রেস নেতৃত্ব জনসংযোগে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে রাহুলের এই বক্তৃতা হতাশাগ্রস্ত বিরোধীদের নতুন উদ্দীপনা দিলেও এর রাজনৈতিক সুফল পাওয়া কঠিন হবে।
মুজফফরপুরের জনসভায় রাহুলের উপস্থিতিতে জনতার ভিড় চোখে পড়ার মতো ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ ধর্ম, উৎসব, নদী— সবকিছুকে ভোটের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। জনগণের সমস্যা নিয়ে তার কোনও আগ্রহ নেই, তিনি কেবল চান ভোটের মঞ্চে অভিনয় করতে।’
রাজনৈতিক মহলে কেউ কেউ বলছেন, রাহুল এবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন— তিনি আর নরম ভাষায় সমালোচনা নয়, সরাসরি সংঘাতের পথে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এই ভাষা ভোটারদের সহানুভূতি নয়, বিরক্তি ডেকে আনতে পারে। একইসঙ্গে রাহুলের এই মন্তব্যে মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদব কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন বলেও জানা গেছে। যদিও তেজস্বী শিবির আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, রাহুল যা বলেছেন তা জনমানসের অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন।
অপরদিকে রাজধানী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত এখন গরম এই মন্তব্য নিয়ে। কেউ বলছেন, রাহুলের মুখে এমন স্পষ্ট আক্রমণ বিরোধী রাজনীতির নতুন দিশা, আবার অনেকে মনে করছেন, এটি তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাবের প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মন্তব্যে একদিকে বিরোধী শিবির কিছুটা চাঙা হবে, অন্যদিকে শাসক দল এর সুযোগ নেবে নির্বাচনী প্রচারে নিজেদের পক্ষে আবেগ গড়ে তুলতে।
মুজফফরপুরের সভা শেষে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে রাহুল আবারও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর চোখে ধুলো দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নাটক নয়, বাস্তব কাজ চাই। দেশের মানুষ নাচ দেখতে নয়, সমাধান দেখতে চায়।’ এভাবেই বিহারের প্রচারে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণের আবহে রাজনীতি আরও তপ্ত হয়ে উঠছে।
আয়শা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:১২






