
তোবারক হোসেন খোকনদুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস (রাখাল) (৫৭) ময়মনসিংহের সিবিএমসি হাসপাতালে পাঁচদিন নিবিড় পর্যবেক্ষনে থেকে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ০৭ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন। স্যারকে ময়মনসিংহে নেয়ার সময় তার বাম হাতে ও গলায় বিভিন্ন কাটা চিহ্ন থাকায় এই মৃত্যু রহস্যজনক দাবী করে, এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সীমান্তবর্তী বারোমারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ কর্মসুচী অনুষ্ঠিত হয়। চন্দন কুমার দাস পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের আমলাপাড়া এলাকার মৃত চন্দ্র শেখর দাসের বড় ছেলে।
ওই স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০ ঘটিকার সময় প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী শেলী রানী দাস স্কুলের এক শিক্ষক কে মুঠোফোনে বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ্য দ্রুত তাঁর বাসায় চলে আসতে। পরবর্তিতে ওই শিক্ষক হেড স্যার অসুস্থ্য বলে তার অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাসায় যান, হেড স্যারের স্ত্রী তাদের স্যার কে দেখতে বারণ করেন এবং তাড়াাতাড়ি ডাক্তার কে খবর দিতে বলেন। পরে এলাকাবাসী এবং ওই সহকারী শিক্ষকগণ স্যারকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তার স্ত্রী হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতেই ডাক্তার আনতে বলেন। পরবর্তিতে এ বিষয়টি কারো কারো সন্দেহ হলে, একপ্রকার জোর করেই কয়েকজন ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পান, স্যারের শরীর প্রায় ঠান্ডা হয়ে আসছে।
ওনার হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটাচিহ্ন রয়েছে এবং রক্ত ঝড়ছে। পরে দ্রুত অটোরিক্সাযোগে তাকে দুর্গাপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত ময়মনসিংহে নেয়ার পরমর্শ দেন। পরবর্তিতে রোগীর স্বজনরা দুপুর ১২ঘটিকার দিকে এ¤ু^লেন্সের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে নিয়ে কমিউনিটি বেসড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রায় ৫দিন নিবিড় পর্যবেক্ষনে থেকেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকগন। একাধিক এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রচন্ড বাগ-বিতন্ডতা শুনতে পাই এবং কিছু জিনিষপত্র ভাংচুরেরও শব্দ পেয়েছি। তবে মাঝে মধ্যেই তার স্ত্রীর এমন আচরণ আমরা লক্ষ করি। যার কারনে আমরা ওইদিন রাতে ওই বাড়িতে কেউই যাইনি। পরদিন সকালে বিস্তারিত জানতে পারি।
প্রধান শিক্ষকের সহকর্মী মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, চন্দন স্যারকে তার বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর দেখতে পাই তার গলায় এবং বাম হাতে কাটা চিহ্ন রয়েছে এবং কাটার ক্ষতস্থান দিয়ে তখনো রক্ত ঝরছিলো, সেইসাথে মুখ দিয়ে গন্ধযুক্ত লালা বেরোচ্ছো। তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষককে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ চেতনানাশক কোন কিছু খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে। আমাদের স্যারকে হয়তো অজ্ঞান করার পর, নির্যাতনও করা হয়েছে। স্যারের মৃত্যু রহস্যজনক, আমরা শিক্ষক সমাজ, এলাকাবসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের একটাই দাবী তদন্ত সাপেক্ষে এর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি।
ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছিনা। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ সহ ন্যায় বিচারের দাবীতে বারোমারী এলাকায় আমরা মানবন্ধন শুরু করেছি। এই মৃত্যু রহস্যজনক। প্রশাসন অনতিবিলম্বে যদি দোষিদের গ্রেফতার না করে, তাহলে পুরো উপজেলায় হরতাল দিবো। দুর্গাপুরের প্রানপ্রিয় প্রধান শিক্ষকের নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অচিরেই নিতে হবে।
উপজেলা বিএনপি‘র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন মুকুল বলেন, চন্দন দাস আমার প্রতিবেশি, তার ছোট ভাই টুকন চন্দ্র দাস গত ছয় মাস আগে আকষ্মিক মৃত্যুবরণ করেন। বিবাহিত জীবনে চন্দন দাসের কোন সন্তানাদি না থাকায়, একমাত্র ছোট ভাইয়ের মেয়ে টুম্পা দাস কে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করতেন। এটি দেখেই তার স্ত্রী শেলী দাস, ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রায়ই ওই শিক্ষকের সাথে ঝগড়া বিবাদ করে সংসারে অশান্তি লাগিয়ে রাখতেন। আমরা এই মৃত্যুর বিচার চাই।
উল্লেখ্য : গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাখাল স্যার স্কুলে ক্লাশ নিয়েছেন। স্যারের এই হঠাৎ মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছিনা। প্রাণপ্রিয় প্রধান শিক্ষক রাখাল স্যারের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য, পৌরশহরের প্রেসক্লাব মোড়ে গতকাল রাত থেকে আজকে বিকাল পর্যন্ত শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া রাখাল স্যারের মৃত্যুর তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবীতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে মানববন্ধন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক সাইদ হাসান।
আয়শা/১৫ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ৮:০০