
ডেস্ক নিউজ : দেশে গড়ে ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। প্রায় ৩৯ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন বা প্রায় চার কোটি (তিন কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার) মানুষ এই দারিদ্র্যের শিকার।
দেশে প্রথমবারের মতো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ সূচকে ব্যক্তির আয়-রোজগারের ভিত্তিতে দারিদ্র্য নিরূপণ করা হয় না, বরং বিভিন্ন সেবার প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দারিদ্র্য নির্ধারণ করা হয়। মোট ১১টি সূচকের সমন্বয়ে এই দারিদ্র্য হিসাব করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এটি প্রকাশ করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশের ইউএনডিপির প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস। আলোচক ছিলেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. একে এনামুল হক।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ (হেইস) এবং ২০১৯ সালের বহু সূচকবিশিষ্ট গুচ্ছ জরিপের (মিকস) ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। যে ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিরূপণ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, স্যানিটেশন, পানির প্রাপ্যতা, আবাসনের মান, রান্নার জ্বালানির প্রাপ্যতা, সম্পদের প্রাপ্যতা, ইন্টারনেট সংযোগ, বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতির হার, শিশুদের শিক্ষাকালের ব্যাপ্তি, পুষ্টি এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে ২৪ শতাংশ মানুষ গড়ে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। এই দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে এবং সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে। বয়সভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হার বেশি। শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে এ হার ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এমপিআই হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে জেলাভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, বহুমাত্রিকতার বিচারে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য হার বান্দরবানে। সেখানে এ হার ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে থাকা কক্সবাজারে এ হার ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে আরও আছে যথাক্রমে সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৬, রাঙামাটিতে ৪৫ দশমিক ৮৯, ভোলায় ৪৫ দশমিক ১২, নেত্রকোনায় ৩৮ দশমিক ২১, হবিগঞ্জে ৩৭ দশমিক ৪৮, খাগড়াছড়িতে ৩৬ দশমিক ৯১, কিশোরগঞ্জে ৩৬ দশমিক ১১ এবং কুড়িগ্রামে ৩৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
সবচেয়ে কম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে হার ঝিনাইদহ জেলায়। জেলার ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। এর পরের কম দিক থেকে শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে যথাক্রমে ঢাকায় ৯ দশমিক ১৯, গাজীপুরে ৯ দশমিক ৬৩, যশোরে ১০ দশমিক ৫৮, মেহেরপুরে ১১ দশমিক ০৮, কুষ্টিয়ায় ১২ দশমিক ২২, চুয়াডাঙ্গায় ১৩ দশমিক ৫১, মানিকগঞ্জে ১৪ দশমিক ০৭, ফেনীতে ১৪ শতাংশ এবং দিনাজপুরে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এই পদ্ধতিতে দারিদ্র্য নিরূপণ পদ্ধতি একটি সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী কৌশল। এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজ করা সহজ হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কিছু জেলায় কেন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার বেশি সেটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।
আয়শা/৩১ জুলাই ২০২৫,/রাত ১০:৫৮