
ডেস্ক নিউজ : সরকার যখন পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ বাজারে আনার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখন উল্টো চিত্র চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। সেখানে কৃষকরা পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যদিও উপজেলা কৃষি বিভাগের মতে, বিগত বছরের চেয়ে চলতি বছর পাটের আবাদ বেড়েছে।
জানা গেছে, এক সময় ব্যাপক হারে ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের চাষ হতো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে। নদী-খাল ও পুকুর-ডোবায় সারিবদ্ধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাটের আঁশ ছাড়াতেন। পাটের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো আশপাশে। এ দৃশ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। দিন যত যাচ্ছে, পাটের আবাদ ততই কমছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় কৃষকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে এ ফসলের প্রতি।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত, সার, বীজ ও প্রণোদনা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ায় তারা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কিন্তু কৃষি কার্যালয়ের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাট চাষ হয়েছে ১৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর দুই হেক্টর বেড়ে ১৪৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, গত বছর এক একর জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। এ বছর চাষ করেছি ৭০ শতক জমিতে। কৃষি প্রণোদনা ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছি।একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছর পাটপাতায় পোকার আক্রমণ হয়েছিল। অনেক পাট নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি অফিসের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না। যদি কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের পাশে থাকেন, তাহলে পাটের চাষ বাড়বে।
কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম ত্রিশ বছর ধরে পাট চাষের সঙ্গে জড়িত। বলেন, এবার মাত্র দুই একর জমিতে পাট চাষ করেছি। শ্রমিকের মজুরি এখন ৬০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম, লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হয়। এছাড়া অন্তত ১০ জন পাটচাষির সঙ্গে কথা হয়, তারা জানিয়েছেন, আগের চেয়ে পাটের চাষ কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, গত বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪৫ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ১৪৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ টন। পাটের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও আগ্রহী করার চেষ্টা চলছে।
আয়শা/১ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৬: ২২