মহানবীর আখলাক

Ayesha Siddika | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ - ০৩:৫৫:৫৬ পিএম

ডেস্ক নিউজ : আবদুল্লাহ বিন আলমগীর

আখলাকে হাসানাহ বা উত্তম চরিত্র তিন প্রকার। এক. খুলুকে হাসান। অর্থাৎ ভালো কাজের প্রতিদান ভালো কাজের মাধ্যমে দেওয়া আর খারাপ কাজের প্রতিশোধও সমানভাবে নেওয়া। দুই. খুলুকে কারিম। অর্থাৎ খারাপ কাজের প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। তিন. খুলুকে আজিম। অর্থাৎ খারাপ কাজের প্রতিদান ভালো কাজের মাধ্যমে দেওয়া। 
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন খুলুকে আজিমের গুণে গুণান্বিত। তিনি কারও থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। সবাইকে ক্ষমা করে দিতেন। এমনকি কেউ তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলেও তিনি এর প্রতিদান দিতেন ভালো আচরণের মাধ্যমে। কোরআনে তাঁর চরিত্রকে ‘মহান চরিত্র’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম চরিত্রের রোলমডেল বানিয়েছেন কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰہَ وَالۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَذَکَرَ اللّٰہَ کَثِیۡرًا বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।  (সুরা আহ্‌জাব – ২১)

অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ (হে নবী) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সুরা কলম, আয়াত: ৪) আম্মাজান হজরত আয়েশা রা.-কে মহানবীর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

خلقه القرآن অর্থাৎ কোরআনই হলো রাসূলের চরিত্র।(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৩০৮) কোরআনের প্রতিটি বিধান পরিপূর্ণভাবে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। এতে তিনি কোনো ধরনের কষ্ট-ক্লেশ ও চাপ অনুভব করতেন না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম চরিত্রের অনেক দৃষ্টান্ত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে।

এক. হজরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)বলেন,ما رئي رسولُ اللهِ ﷺ مقدّمًا رُكبته بينَ جليس لَه  قطُّ ولا صافح رجلًا فنزع يده من يده حتّى يَكونَ الرَّجلُ هُوَ الَّذي ينزِعُها রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো সামনে উপবিষ্ট লোকদের দিকে পা দুটো প্রসারিত করে বসতেন না। যে ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মুসাফাহা করত, ঐ ব্যক্তি স্বীয় হাত টেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজের হাত টেনে নিতেন না। (তবক্বাতে কুবরা, হাদিস: ৮৮৯)

দুই. মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন। তাঁর এ কাজ শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার অসুস্থতায় তিনি এগিয়ে যেতেন। তাদের খোঁজখবর রাখতেন।  হজরত আনাস (রা.) বলেন, মদিনার এক ইহুদি বালক মহানবীর খেদমত করত। বালকটি একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি তাকে দেখতে যান। বালকটিকে দেখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেন, সে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অতিক্রম করছে। শিয়রে বসে তিনি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। 
সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নিজের বাবার দিকে। এতে বাবার সম্মতি আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করে। পিতা যদিও ইহুদি, কিন্তু তার জানা ছিল মুহাম্মদ সত্য নবী। ছেলেকে সে ইসলাম গ্রহণের অনুমতি দেয়। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে বালকটি দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইসলাম গ্রহণে অনেক খুশি হন, আল্লাহ তাআলার প্রশংসার বাক্য পাঠ করেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস – ১৩৫৬)

শিক্ষার্থী : জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা।

 

 

কিউটিভি/আয়শা//৩০ জুন ২০২৫, /বিকাল ৩:৫৫

▎সর্বশেষ

ad