
ডেস্ক নিউজ : দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। আগমন করল আরেকটি নতুন বছর। চলে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে বিগত বছর অনেককে ভাবিয়ে তোলে। জাগিয়ে তোলে জাগতিক ব্যর্থতার অনুশোচনা। মগ্ন রাখে গভীর আত্মসমালোচনায়। অনুশোচনা শেষে অনেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পরবর্তী কর্মে আত্মনিয়োগ করে। অনেকে আবার সফলতার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে দৃঢ়ভাবে নতুন পরিকল্পনায় নতুন কর্মে নিমগ্ন হয়। কিন্তু জাগতিক ব্যর্থতা বা সফলতার পরিণতি ক্ষণস্থায়ী।
কালের আবর্তে তা আবার পরিবর্তিত হতে পারে। ইহকালীন সমগ্র জীবনেরও সফলতা বা ব্যর্থতা আছে, যার প্রতিফল কখনো পরিবর্তিত হবে না। সেই ব্যর্থতা বা সফলতা পরিবর্তনের জন্য কোনো সুযোগ থাকবে না। তার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা।
শান্তির আবাস কিংবা শাস্তির আবাস। পরকালীন সফলতার জন্য গত বছরকে কি সঞ্চয় বৃদ্ধির কাজে লাগাতে পেরেছি? নাকি গতানুগতিকভাবেই কেটেছে গত বছরটা? কতটা সময় কাজে লেগেছে আর কতটা সময় অপচয় করা হয়েছে- এসব বিষয়ে আত্মসমালোচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামী কালের জন্য সে কী প্রেরণ করে তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে থাকো। তোমরা যা করো, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)
আল্লাহর ভয় ও পরকালীন জবাবদিহির এই অনুভূতি সর্বদা অন্তরে ধারণ করতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক আমাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখতে পারে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু সময় নিজস্ব গতিতে চলমান। আবেগের মোহ কিংবা অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তি তাকে আটকাতে পারবে না।
কাজেই সময়ের সদ্ব্যবহার কতটুকু করতে পেরেছি, সৎকাজে কতটুকু সময় ব্যয় করেছি, আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে সফলতার সঙ্গে পৌঁছার জন্য কী পরিমাণ পাথেয় সংগ্রহ করেছি- এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখন থেকেই চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। তা না হলে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাতারে শামিল হতে পারি।
আল্লাহ বলেন, ‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সত্কর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা : আসর)
অন্যের সমালোচনায় আমরা সর্বদা মগ্ন থাকি, কিন্তু নিজের ভুলত্রুটির দিকে নজর দিই না। নিজের দোষত্রুটি নিয়ে ভাবার সময় পাই না। অথচ এই ভুলগুলো আমার পরকালের নাজাতের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন করবে। আমাকে অনাকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
জাগতিক অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগেই গত বছর কত মানুষ অনন্ত জীবনের পথে পাড়ি জমিয়েছে! যেকোনো সময় আমাদেরও অনন্ত জীবনের পথে যাত্রা শুরু হতে পারে। সেই যাত্রাপথ কণ্টকমুক্ত করতে কতটুকু চেষ্টা করেছি, আমাদের গন্তব্য কোথায় হবে?
সেই গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কতটুকু পাথেয় সংগ্রহ করেছি- এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত, যা পরকালের মুক্তির কারণ হতে পারে। তা ছাড়া আমল বাড়ানোর জন্যও পরিকল্পনা করা দরকার। তা না হলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে পরকালীন অনন্ত জীবন। পরিশেষে বিদায় ২০২৪, স্বাগত ২০২৫। ২০২৫ আমাদের সবার জীবনে অনাবিল শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনুক, সেই কামনা করি।
লেখক : প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর।
কিউটিভি/অনিমা/০১ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ১০:৪৩