এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যাকান্ডের মামলার আসামিদের হাতে ২২ বছর পর তার ছোট ভাই আনিসুর রহমান (৫৫) খুন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে কুপিয়ে জখম করা হয় তাকে। আজ বুধবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আনিসুরের ফুপাতো ভাই আব্দুস সালাম আহত হয়েছেন।
নিহত আনিসুর রহমান চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। এবং ২২ বছর আগে হত্যাকান্ডের শিকার ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশার সেজো ভাই। হতাহতরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন চেয়ারম্যান আশা হত্যা মামলার আসামি এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ হত্যাকান্ডের তথ্য নিশ্চিত করেন চৌগাছা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক মেহেদি হাসান। তিনি জানান, হামলার শিকার আনিসুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে মারা গেছেন। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে অভিযান শুরু করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আশা হত্যাকান্ডের দুই আসামি লেন্টু ও হাদির নাম এসেছে তার ভাই আনিসুর খুন হওয়ার ঘটনায়।
নিহত আনিসুরের ছোট ভাই আশিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আনিসুর রহমান ও তার ফুপাতো ভাই আব্দুস সালাম জগন্নাথপুর উত্তরপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে চা পান করতে যান। চা পান শেষে আনিসুর রহমান বাড়ির উদ্দেশ্যে দোকান থেকে বের হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আশা চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি বিএনপি সমর্থক লেন্টু, হাদি, আমিন ও কোরবানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন এই হামলা চালায়। তাকে রক্ষা করতে যান ফুপাতো ভাই আব্দুস সালাম। সন্ত্রাসীরা তাকেও কুপিয়ে আহত করে।
আশিকুর রহমান আরও জানান, স্থানীয়রা আনিসুর রহমান ও আব্দুস সালামকে উদ্ধার করে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সঞ্জিতা তাদেরকে চিকিৎসা প্রদান করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় আনিসুর রহমানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর-রশিদ বলেন, নিহতের শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছার সিংহঝুলীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০০২ সালের ২৪ জুলাই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন আশা। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লেন্টু ও হাদি। ২২ বছর পর তাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী মঙ্গলবার রাতে আনিসুর রহমানের ওপর হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আশা হত্যাকান্ডের পর ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিজ দলের সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন একই ইউপির চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। চেয়ারম্যান মিন্টু হত্যাকান্ডের তিন দিন আগে (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩) আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন যুবদল কর্মী আতিয়ার রহমান (৪৫)। ধারাবাহিক এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে একটির সঙ্গে আরেকটি স¤পর্কযুক্ত বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
চৌগাছা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক মেহেদি হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যাতে আইন সৃংখলার কোন অবনতি না হয় সে জন্য ঘটনা স্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি, মামলা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউটিভি/আয়শা/৩০ অক্টোবর ২০২৪,/বিকাল ৩:৫০