
মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পলিথিন বিক্রি। আশুলিয়ার প্রায় প্রতিটি হাঁট-বাজার থেকে শুরু করে অলিগলির প্রতিটি দোকানেই মিলছে অবৈধ ঘোষিত পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন। এর ব্যবহার মানুষের জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর করলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নীরব থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সরকারী ভাবে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে দেদারছে প্রায় সর্বত্রই বিক্রি হচ্ছে এসব ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ। সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বহনের জন্য আশুলিয়ায় প্রতিটি বাজারে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
অপচনশীল এসব পলিথিন যত্রতত্র ফেলার কারণে পানি মাটি ও বাতাস দূষিত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধিতে। এ ছাড়াও পানি চলাচলের নালা, নর্দমায়, যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে এতে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় ড্রেন। জমে থাকা পানিতে ব্যাকটেরিয়াসহ নানা রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। ক্রেতা সাধারণকে অনেকটা বাধ্য হয়েই পণ্য বহনের জন্য পলিথিনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ না হলে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশ চরম হুমকিতে পড়বে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আশুলিয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাইপাইল পাইকেরী কাঁচাবাজার, পল্লীবিদ্যুৎ কাঁচাবাজার, বলিভদ্র বাজার, বগাবাড়ী কাঁচাবাজার ও জামগড়া কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন হাঁট-বাজার, পাইকারি ও খুচরা দোকানে মাছ, মাংস, সবজি ও মশলাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পলিথিন ব্যাগে ভরে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে বা অজ্ঞাতসারে তা বহন করছে। অপরদিকে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতারা পলিথিনকে নিত্যপণ্য বহনের সহজলভ্য মাধ্যম হিসেবে পেয়ে আইনত দন্ডনীয় হওয়া সত্তেও পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করছে না। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকারি দোকানিকে পলিথিন মজুদ করে রাখতেও দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন শপিং সেন্টারেও নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে পলিথিনের শপিংব্যাগ ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইন অনুযায়ী পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সর্বনিম্ন শাস্তি দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করারও বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে আশুলিয়ার প্রায় সর্বত্রই ছেঁয়ে গেছে এ পলিথিন।
জামগড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ শাহীন আলম বলেন, ‘বাজারের জন্য বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসা হয় না। দোকানিরা পণ্যদ্রব্যের সাথে পলিথিন ব্যাগ দেওয়ায় এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করতে হয়। দোকানিরা পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ না করলে অবশ্যই এর ব্যবহার কমে যেতো। এজন্য আইনের প্রয়োগের অভাব এবং প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেন তিনি। পলিথিন ব্যবহারের পর তা ড্রেনসহ যত্রতত্র ফেলার ফলে প্রায়ই পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং ময়লা পানি উপচে পড়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দিনের পর দিন পলিথিন বর্জ্য ফেলা হলেও সংশ্লিষ্টরা তা সরাতে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। পলিথিনের ব্যবহার সচেতনার সাথে ও যেখানে সেখানে ফেলা ও ব্যাবহার না করার পাশাপাশি নির্ধারিত স্থান তৈরী সহ কঠোর নজরদারিতে আনার দাবীও জানান তারা।
এবিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা শীঘ্রই অভিযানে নামবো। একটি নিরাপদ, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করা হবে। সড়কসহ আবাসিক এলাকায় ময়লা না ফেলানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কিউটিভি/আয়শা/০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪,/দুপুর ২:১৮