
ডেস্ক নিউজ : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে খীরু নদী। শুকনা মৌসুমে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ পারাপারের নাম করে মাটিবাহি ট্রাক পারাপারের উদ্দেশ্যে উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের সাতেঙ্গা-কোঁচকালি গোদারাঘাট এলাকায় ওই নদীতে সড়ক নির্মাণ করেছেন কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী। স্থানীয় চাষীগণের দাবি, সড়কটি নির্মিত হলে সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে উজানের ক্ষেত-খামারে ফসল উৎপাদনে ব্যপক সমস্যা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভেকু মেশিন লাগিয়ে উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের সাতেঙ্গা-কোঁচকালি গোদারাঘাট এলাকায় খীরু নদীতে ১০-১২ ফুট উচ্চতায় মাটি ফেলে প্রায় ২০ ফুট প্রস্থের সড়ক নির্মাণ করেছে স্থানীয় কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী। মাটি ব্যবসায়ীদের মাটিবাহি ড্রাম ট্রাক পারাপারের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের বিনা অনুমোতিতে নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে ওই সড়ক। আল এমরানসহ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী ওই সড়কটি নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে জমে থাকা পানি সেচ দিয়ে তারা পাশের জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন। এছাড়া, উজান থেকে নেমে আসা প্রায় শতাধিক মিল ফ্যাক্টরীর বর্জ্যপানি লাউতি খাল হয়ে খীরু নদীতে পড়ে এবং পরে ওই এলাকা হয়ে ভাটিতে চলে যায়। স্থানীয় চাষী হারুন অর রশীদ জানান, সাতেঙ্গা-কোঁচকালি গোদারাঘাট এলাকায় উজানে তাদের দুই ভাইয়ের আট একর জমিতে বোর আবাদ করেন।
ওই সড়ক নির্মিত হলে সামান্য বৃষ্টিতে বা উজানের পানি জমে তাদের বোরো ধানের বীজতলাসহ বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। একই দশা হবে, ওই এলাকার কৃষক মোস্তফার দুই একর, হালিমের আড়াই একর, আকরাম হোসেনের আট একর, জাফর হাজীর ২০একর, মোস্তফা মেম্বারের ১৫ একরসহ পানিভান্ডা, জগৎবের, পাঁচগাঁও, সোইল, সাতেঙ্গা ও ভায়াবহ এলাকার শত শত কৃষকের হাজারো একর বোরো ধানের জমির।
স্থানীয়রা জানান, মাটি ব্যবসায়ী চক্রটি কয়েকদিন আগে খীরু নদীর সাতেঙ্গা-কোঁচকালি গোদারাঘাট এলাকায় মাটি ভরাট শুরু করলে তারা বাধা দেন। কিন্তু, তারা তাদের বাধা না মেনে সড়ক নির্মাণের জন্যে নদীতে মাটি ফেলা অব্যাহত রাখে। পরে, ত্রিপল নাইনে কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই স্থানে মাটি ফেলতে নিষেধ করে যায়। কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই তারা পুনরায় মাটি ফেলা শুরু করে।
মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. শামছুল হক জানান, এমরানসহ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী ওই সড়কটি নির্মান করছে। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোতি ব্যতিরেকে ওই সড়ক নির্মান না করার জন্যে তাদেরকে বলেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন জানান, ওই স্থানে খীরু নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের বিষয়টি তার জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আবদুল্লা হেল বাকিউল বারী জানান, বিষয়টি জানতে পারার সাথে সাথেই ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে ভরাট করা মাটি দ্রুত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। মাটি সরানো না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আল এমরান জানান, রাজনীতির পাশাপাশি তিনি চলতি বছর থেকে মাটির ব্যবসা শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ পারাপারের পাশাপাশি মাটিবাহি গাড়ি আসা যাওয়া করার জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোতি নিয়ে তিনি ওই স্থানে মাটি ভরাট সড়ক তৈরী করছেন। মল্লিকবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার ফোন পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনারের সাথে কথা বলে কাজটি তিনি আবারো শুরু করবেন বলে জানান।
কিউটিভি/আয়শা/০২ জানুয়ারী ২০২৩/দুপুর ১:০৮