ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু কুড়িগ্রামে নবগঠিত জেলা বিএনপির আহবায়কের বিরুদ্ধে মশাল মিছিল

ব্যাংকক জীবনের উপাখ্যান : পর্ব-৫, তুমি চাওফিয়া নদী হয়ে যাও বয়ে

admin | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ - ০৫:৪৭:২৫ পিএম

সজল ভালোভাবে পৌঁছে ফোন করেছে। এজন্যে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। জুয়েলের কোন খবর নেই। সে কি ঢাকায় আছে না সাতক্ষীরাতে ? ওর সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। জুয়েলকে নিয়ে আমাদের অনেক চিন্তা হচ্ছে। ক্যাম্পাস জীবন থেকে জুয়েল পাগলাটে স্বভাবের। কখন কোন ঘটনা ঘটাবে কিছুই বলা যায়না। জুয়েলের বাবাও একজন চমৎকার মানুষ ছিলেন। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে জুয়েলকে দেখতে আসতেন। সাতক্ষীরার এক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন জুয়েলের বাবা। সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবির সাথে সাদা কেডস পড়তেন জুয়েলের বাবা। মধুর কেন্টিন থেকে আমাদের মিছিল বের হলে জুয়েলের স্লোগান শুনে ওর বাবা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে হাত তালি দিত। এমন বাবা কয়জনের হয় ?

বড়ভাই, সাঈদ, অশোক সহ আমরা বান্টিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একটু পরে আমরা এটিএম এ গেলাম চা সিঙ্গাড়া খেতে। এটিএম মার্কেটের এস্কেলেটরে আমরাই প্রথম উঠেছি। ঢাকায় কোথাও এস্কেলেটর ছিলনা। প্রথম প্রথম এস্কেলেটরে উঠতে অস্বস্তিবোধ করতাম। পরে আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে গেছে। এটিএম মার্কেটের এস্কেলেটরে আমরা উঠব, এমন সময় দেখি ছাত্রনেতা জলিলভাই আরেক এস্কেলেটর দিয়ে নামছে। আমাদের দেখেই তিনি বললেন, আরে তোমরা ? জলিল ভাই আবারো আমাদের সাথে এস্কেলেটরে উঠলেন। আমরা চার তলায় ফুডকোর্টে বসলাম।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জ-লু) এর সভাপতি ছিলেন এম এ জলিল ভাই। জাগপার ছাত্র সংগঠন এটি। এরশাদ নিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিল ”সংগ্রামী ছাত্রজোট ”। এই ছাত্রজোটের অন্যতম মারদাঙ্গা ছাত্রসংগঠন ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জলিল-লুৎফর) । এরশাদের পদত্যাগের আগেই ছাত্র রাজনীতি শেষ করে জলিল ভাই বিএনপিতে যোগ দিলেন। দিনাজপুরের মানুষ জলিল ভাইকে ম্যাডাম খালেদা জিয়া খুব স্নেহ করতেন। জলিল ভাই দায়িত্ব পেলেন ম্যাডাম জিয়ার বিশেষ সহকারীর।

আমরা চা সিঙ্গাড়া খেলাম। জলিল ভাই আমাদের সকলের কুশলাদী জানলেন। তিনি বললেন, আমি ফিলিপাইন থেকে ঘুরে আসলাম। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনোর অভিষেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জলিল ভাই প্রতিনিধিত্ব করতে ফিলিপাইন গিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া নিজে যেতে না পেরে জলিল ভাইদের পাঠিয়েছিলেন। ফিরতি পথে তিনি এখন ব্যাংককে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একদা স্লোগান দিতাম, বাংলার কোরাজন, খালেদা জিয়া লও সালাম। কোরাজন একুইনো ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান প্রায় একই রকম। দুজনে প্রয়াত স্বামীর প্রতিনিধিত্ব করে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছিলেন। জলিল ভাই কোরাজন একুইনো একুইনো সম্পর্কে কিছু ধারণা দিলেন। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে বড়ভাই কোরাজন একুইনোর উপর নাতিদীর্ঘ একটি বক্তব্য দিয়ে ফেললেন।

মারিয়া কোরাজন সুমুলং “কোরি” কোজুয়াংকো-অ্যাকুইনো ২৫ জানুয়ারি, ১৯৩৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ফিলিপাইনের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। ফিলিপাইনের একাদশ প্রেসিডেন্টরূপে দায়িত্ব পালন করেন। ফিলিপাইন তথা এশিয়া মহাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ভোট বিপ্লবে তিনি ক্ষমতাসীন সাবেক স্বৈরশাসক ফার্দিন্যান্দ মার্কোসকে গদিচ্যুত করার পাশাপাশি ফিলিপাইনে গণতন্ত্র সুসংহত করেন। ১৯৮৬ সালে বিখ্যাত টাইমস সাময়িকীর পক্ষ থেকে তিনি বছরের সেরা নারী ব্যক্তিত্বরূপে মনোনীত হন।

কিশোরী অবস্থায় কোরি ম্যানিলার সেন্ট স্কলাস্টিকা’জ কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি শীর্ষস্থানীয় ছাত্রী ছিলেন। এরপর অ্যাসাম্পটন কলেজে প্রথম বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপণের জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। সেখানে তিনি তার কলেজ জীবন অতিবাহিত করেন। নিউইয়র্ক সিটির মাউন্ট সেন্ট ভিনসেন্ট কলেজে গণিত ও ফরাসী বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালীন কোরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী থমাস দেওয়ের প্রচারণা কর্মে স্বেচ্ছাসেবকদলের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ঐ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান বিজয়ী হয়েছিলেন।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কোরি রোমান ক্যাথলিক ধর্মালম্বী ছিলেন। ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তাগালগ, কাপামপাঙ্গান ও ফরাসী ভাষায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। কোরাজন নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গৃহিণীরূপে আখ্যায়িত করেছেন।সিনেটর বেনিগনো অ্যাকুইনোর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। বেনিগনো অ্যাকুইনো তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফার্দিন্যান্দ মার্কোসের তুখোড় সমালোচক ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার বছর নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসার পরপরই ২১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে বেনিগনো অ্যাকুইনো নিহত হন। এরপর কোরাজন মার্কোস সরকারের বিপক্ষে প্রবল প্রতিপক্ষীয় নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রাষ্ট্রপতি ফার্দিন্যান্দ মার্কোসকে গণতান্ত্রিক ভাবে পরাভূত করে তিনি ফিলিপাইনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হন। বড়ভাই আমাদের সকলের উদ্যেশ্যে বললেন, মিলিয়ে দেখ, ম্যাডাম জিয়া আর কোরাজন একুইনোর রাজনৈতিক জীবনে কত মিল।

জলিল ভাই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমরা দুলাল ভাই সহ শেষ দুপুরে একসঙ্গে লাঞ্চ করলাম। লাঞ্চ করে আমরা বান্টিতে ফিরতেই কাঞ্চন ভাই জানালেন, কোরিয়া থেকে আমিন ভাই ফোন করেছেন। উনি খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকক ফিরবেন। তোমাকে ২/১ দিনের মধ্যে সিউলে ফ্লাই করতে হবে। আমিন ভাই থাকতে তুমি গেলে আমি ওখানে তোমার সব ব্যবস্থা উনি করবেন। সংবাদটা শুনে এক নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এবার বন্ধন ছিড়তে হবে। আমি কাঞ্চন ভাইকে বললাম, আপনি টিকেট কনফার্ম করেন। আমি যাব। কাঞ্চন ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দর্শন বিভাগের দুই বছরের সিনিয়র বড়ভাই। উনি ব্যাংককেই থাকেন। সাঈদ,অশোক আমি ব্যাংককে এসেছি কাঞ্চন ভাইয়ের পরামর্শক্রমে। ব্যাংকক থেকে অন্যকোন দেশে যাওয়ার বিষয়ে তিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন।

এক নিমিষেই আমাদের পৃথিবীটা বদলে গেল। আমি চলে যাব এবার। সজল গতকাল গিয়েছে। জুয়েল গিয়েছে দেশে। এবার আমি যাব সিউলে। আমাদের পৃথিবীটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। পড়ন্ত বিকেল। কিছু ভাল লাগছেনা। ফাওরাতের সামান্য উত্তরে চাওফিয়া নদী। মাঝে মাঝে আমরা চাওফিয়া নদীর তীরে বেড়াতে আসি। চাওফিয়ার তীরে বসে আমরা আমাদের অতীত জীবনে ফিরে যাই প্রায়শঃই।

সূর্য ডুবু ডুবু ভাব। সূর্যের লালআভা ছড়িয়ে পড়ছে চাওফিয়ার বুকে। সাঈদ সোহরাব খুব ভাল গান গায়। সুবীরনন্দী আর হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া জনপ্রিয় গানটি গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করল সাঈদ।

তুমি চাওফিয়া নদী হয়ে যাও বয়ে
আমার মনের তীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আমি গান শুনিয়ে যাব, সুরের কাকন বাজিয়ে।
আমি ছিলাম ঠিকানা বিহীন, মন আমার ছিল তুমি বিহীন
তুমি দিলে ঠিকানা, মরু জীবন হল রঙ্গিন।
তুমি চাওফিয়া নদী হয়ে যাও বয়ে —-

ছবিঃ ১. চাওফিয়া নদীর ব্রিজ।২.সাবেক ছাত্রনেতা এম এ জলিল ৩. এটিএম মার্কেটের এস্কেলেটরে আমি ও ৪. ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো।লেখকঃ লুৎফর রহমান। লেখক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ।

বিপুল/১৩ই এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ |বিকাল ৫:৪৪

▎সর্বশেষ

ad