স্পোর্টস ডেস্ক : টালমাটাল অবস্থায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সঙ্গে কত শঙ্কা। রক্ষণে ঘাটতি, স্ট্রাইকিংয়ে সমস্যা। ড্রেসিংরুমেও ভাঙন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে যখন খেলোয়াড়-কোচের দ্বন্দ্ব প্রকট, ঠিক সেই মুহূর্তেই অধিনায়কত্ব আসে আফঈদা খন্দকারের কাঁধে। ১৮ বছরের তরুণী সেটি সামলেছেন প্রশস্ত কাঁধে। এতদিন বাংলাদেশ যা করতে পারেননি, তা-ই করেও দেখিয়েছেন।

এবার তারা সেই শঙ্কা, হতাশা সব উড়িয়ে দিয়েছেন এক ঝটকায়। অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লড়ার সুযোগ তো এসেছেই, গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও বনে গেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। সম্ভবনা ও শঙ্কা নাকি বাস্তবতার কাছে পাত্তা পায় না। সেটিই হয়েছে। গ্রুপপর্বের বাধা উতরাতে বাংলাদেশের সামনে ছিল তিন কঠিন প্রতিপক্ষ। যাদের দুটি দল আবার বাংলাদেশ থেকে র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগোনো। একটি দল আবার স্বাগতিক।
পাথর হয়ে জমা সেইসব শঙ্কা তারুণ্যের জোয়ারে বাধা হয়নি। র্যাঙ্কিংয়ের ৩৬ ধাপ এগোনো বাহরাইনের মেয়েদের চোখের জলে নাকের জলে করে ছাড়ে লাল-সবুজের দল। ৭-০ গোলের বন্যায় ভাসিয়েই শুরু। ইয়াঙ্গুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের হারানো যেন অসম্ভবই ছিল ভাবনাজুড়ে। দুঃসাহসিক সেই যাত্রায় ঋতুপর্ণাদের সামনে টিকতে পারেনি শক্তিশালী মিয়ানমার এরপর মিয়ানমারকে বুধবার স্তব্ধ করে দিয়েছেন আফঈদারা। ইয়াঙ্গুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের হারানো যেন অসম্ভবই ছিল ভাবনাজুড়ে। দুঃসাহসিক সেই যাত্রায় ঋতুপর্ণাদের সামনে টিকতে পারেনি শক্তিশালী মিয়ানমার।
র্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমারের অবস্থান ৫৫ ও বাহরাইনের ৯২। বাংলাদেশ সেখানে ১২৮ নম্বরে। কিন্তু ম্যাচে যেন ওসবের রেশই ছিল না। রক্ষণ সামলানো, প্রতিপক্ষের রক্ষণকে তটস্ত করা, মাঝমাঠ, বল দখল, গোলে শট কিংবা আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ—সব বিভাগে দাপট দেখিয়েছে পিটার বাটলারের শিষ্যরা। যার ফল প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ। যা আগে কখনো হয়নি। আফঈদা ঠিক এই কারণেই বেশি খুশি।

বুধবার নিজের বিশ্বাসকে বাস্তব করার দিনে আফঈদা বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে নারী দলকে এই জয় এনে দেওয়া আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। অধিনায়কত্ব দারুণভাবে উপভোগ করছি। সত্যি বলছি। এই জয়টি আমাদের সবার লক্ষ্য ছিল।’ এমন সুখের দিনে দুঃখের সঙ্গী দর্শকদেরও ভোলেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক, ‘দর্শকরা যেভাবে আমাদের সমর্থন করেছেন সবটার জন্য ধন্যবাদ। যারা আমাদের সাহস জুগিয়েছেন তাদেরও ধন্যবাদ।’
আফঈদার নেতৃত্বে আসা তো বটেই, জাতীয় দলে খেলার সুযোগটাই বিলম্বিত হতে পারত। তবে সবকিছুই ঘটে গেছে এক ঝটকায়। কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে এক হয় ১৮ ফুটবলার। সেই দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের তখনকার অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। কোচ-খেলোয়াড় দ্বন্দে বাদ পড়েন অনেকেই। অধিনায়ক সাবিনা আসেননি। মাসুরা পারভিন বাদ পড়েন, আঁখি খাতুন চলে যান চীনে। রক্ষণের এই ফাঁকা জায়গা এবং নেতৃত্ব—দুই জায়গার দায়িত্ব পেয়ে যান আফঈদা। বিদ্রোহী ফুটবলারদের অনেকে ফিরলেও নেতৃত্বে তাকেই রাখেন কোচ বাটলার।

দলের অস্বস্তিকর পরিবেশে এমন গুরুদায়িত্ব, তার ওপর বয়সটাও কম। আফঈদার কাছে তখন জানতে চাওয়া হয়, চাপ কেমন অনুভব করছেন? জবাব ছিল সহজ ও নিরেট, ‘চাপ নিলেই চাপ, না নিলে কিছুই না।’ আসলেই যেন তা-ই। অনূর্ধ্ব-২০ সাফের সেই নেতা এখন জাতীয় দলকে পথ দেখাচ্ছেন। দলকে নিয়ে লড়েছেন, কঠিন সব প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন। জায়গা করে নিয়েছেন সেরাদের কাতারে। আফঈদার বিশ্বাস ছিল, তারা পারবেন। পেরেছেনও। বহুদূর হাঁটা লাগবে খন্দকার। এই তো সবে শুরু।
কিউটিভি/আয়শা//০৩ জুলাই ২০২৫,/কিকাল ৫:০০