
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল আমদানি আপাতত স্থগিত করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো। বৃহস্পতিবার একাধিক বাণিজ্যিক সূত্র জানায়, রাশিয়ার বৃহত্তম দুটি তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকোইলের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারত—যা এখন রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল আমদানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা—তারাও একই কারণে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমাতে যাচ্ছে। ফলে রাশিয়ার তেল রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লাগতে পারে এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি এবং ঝেনহুয়া অয়েল আপাতত রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল কেনা বন্ধ রাখবে। তারা নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত ঝুঁকি এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীন প্রতিদিন সমুদ্রপথে প্রায় ১৪ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করে। এর বেশিরভাগই কিনে থাকে স্বতন্ত্র পরিশোধনাগারগুলো, বিশেষ করে ছোট ছোট ‘টি-পট’ নামে পরিচিত রিফাইনারিগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর তেল আমদানির পরিমাণ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার হিসাব আলাদা হলেও, ভারটেক্সা অ্যানালিটিকস জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলেরও কম রুশ তেল কিনেছে। এনার্জি অ্যাসপেক্টসের হিসাবে এই পরিমাণ ৫ লাখ ব্যারেল।
দুই বাণিজ্যিক সূত্র জানায়, ব্রিটেন সম্প্রতি রসনেফট, লুকোইল, তাদের ছায়া বহরভুক্ত জাহাজ এবং কয়েকটি চীনা সংস্থাকে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করার পর সিনোপেকের ট্রেডিং ইউনিট ইউনিপেক গত সপ্তাহেই রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ সময় রসনেফট ও লুকোইল সরাসরি ক্রেতাদের নয়, বরং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে চীনে তেল বিক্রি করে। এদিকে, স্বতন্ত্র রিফাইনারিগুলোও আপাতত নতুন কেনা স্থগিত রাখছে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব যাচাইয়ের জন্য। তবে তারা শিগগিরই পুনরায় রুশ তেল কেনার সুযোগ খুঁজবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগ পর্যন্ত নভেম্বর মাসের সরবরাহের জন্য রুশ ইএসপিও ক্রুডের দাম আইস ব্রেন্টের প্রতি ব্যারেল দামে ১ ডলার প্রিমিয়ামে বিক্রি হচ্ছিল—যা অক্টোবরের শুরুতে ১.৭০ ডলার প্রিমিয়ামে বিক্রি হয়েছিল। চীন রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমেও প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করে, যা কেবল পেট্রোচায়না গ্রহণ করে। বাণিজ্যিক সূত্রগুলো বলছে, এ অংশটি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে তুলনামূলকভাবে মুক্ত থাকবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও চীন এখন মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিকল্প উৎসগুলোর দিকে ঝুঁকবে। এতে এসব অঞ্চলের তেলের দামও বেড়ে যেতে পারে।
আয়শা/২৪ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৫:০৫






