স্পোর্টস ডেস্ক : বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পান মিরাজ। জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি নিজেই। যেহেতু দেশের ক্রিড়াঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এখন মিরাজের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এই সম্পর্কিত প্রশ্নের। অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে মিরাজের উত্তর অনেকটা এমন, কাজটা কঠিন। তবে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে উন্নতি করতে। অনেকের সমর্থন পাচ্ছেন। নেতৃত্ব নিয়ে খুব বড় পরিকল্পনা নেই তার। তবে সুযোগ পেলে টেস্টেও নেতৃত্ব করতে চান।
মিরাজ বলেন, ‘প্রথমদিকে যখন নেতৃত্ব দিয়েছি তখন অনেক কঠিন লাগত। যত বেশি অধিনায়কত্ব করব, ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। যারা বাংলাদেশে কিংবদন্তি অধিনায়ক ছিল, তারা আমাকে পেছন থেকে অনেক সমর্থন করছে। মাশরাফি ভাই আমাকে সমর্থন করছেন। তামিম ভাই ফোন করেছেন, বলেছেন কিভাবে এগোতে হবে। তারা দুজনই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। গত দুইটা সিরিজে অনেক কিছু হয়েছে; তারা হয়তো এসব কাছ থেকে দেখেছেন, তাই আমাকে সমর্থন করছেন। বিষয়টা ভালো লাগছে।’
প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে থাকলেও নেতৃত্বের শুরুটা ভালো হয়নি মিরাজের। ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজের অধিনায়কত্ব টেকাতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরাজ বলেন, ‘আমি অতদূর পর্যন্ত ভাবছি না। আমাকে যখন নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে তখন আমাদের দলের পজিশন ছিল ১০ নম্বর। এখনও ১০-ই আছে। তবে হ্যাঁ, মাঝে আমরা অনেক ম্যাচ হেরেছি। সবাই যদি সবার পারফর্মটা করত, সবাই যদি সবার খেলাটা খেলত তাহলে… দিন শেষে অবশ্যই দল ভালো না খেললে অধিনায়কের ওপরই দায় আসে।
তবে দল ভালো খেলে সবাই একত্রে ভালো খেললেই। এটা (অধিনায়কত্ব) নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। অধিনায়কত্ব যে আমার অনেকদিন করতে হবে, এমন কিছু না। হয়তো আজকে আমি আছি, আমার জায়গায় আরেকজন আসবে। সামনে বিশ্বকাপ আছে এবং চূড়ান্ত পর্বে আমরা এখনও অনিশ্চিত। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেরা আটে থাকা এবং সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা।’
নতুন হেড কিউরেটর টনি হেমিং আসার পর এবারই প্রথম মিরপুরে কোনো সিরিজ খেলল বাংলাদেশ। হেমিংয়ের হাত ধরে মিরপুরের উইকেটে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা দেখা গেলেও এবারও উইকেট নিয়ে সমালোচনা ছিল তুঙ্গে। এ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘আমরা তো সবাই জানি মিরপুরের উইকেট কেমন হবে। এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু না। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ৯ বছর খেলেছি। আমার অভিষেকও এখানে, এই উইকেটেই। পার্থক্যটা খুব বেশি না। এই উইকেটে আগে যখন খেলেছি তখন একটু ঘাস দিত। এখন সেটা নেই। ঘাস থাকলে অনেক সময় বল স্কিড করে। ঘাস না থাকলে বল একটু ধীরে আসে। এছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই।’
এমন উইকেটে খেলে পারফরম্যান্সে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মিরাজ বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমরা যে সিরিজটা খেলেছি, ওরা কিন্তু আমাদের কোনো পেস বোলিং উইকেট দেয়নি। অনেক ধীরগতির উইকেট দিয়েছে যেন স্পিনাররা সুবিধা পায়। এটা দলগত পরিকল্পনা, দোষের কিছু না। পৃথিবীর যে দেশেই যান না কেন, সবাই হোম অ্যাডভান্টেজই নেয়। আমাদের তো আরও অনেক সিরিজ আছে। সব ম্যাচ যে এখানে খেলব এমন তো না। বাইরেও অনেক সিরিজ খেলব। যেহেতু আফ্রিকাতে খেলা (বিশ্বকাপ) আছে। আফ্রিকাতে খেলার আগে টিম ম্যানেজমেন্টে এবং আমরা আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারব। বিশ্বকাপ তো অনেক দেরি। সামনে যে সিরিজগুলো আছে সেগুলোতে ফোকাস করা উচিত। আমাদের অবস্থানটা আগে ঠিক করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাইরে অনেক ম্যাচ জিতেছি। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের সিরিজ হারিয়েছি। আরও অনেক ম্যাচ আমরা জিতেছি। বিশ্বকাপে ম্যাচ জিতেছি। আমাদের যে ফলাফল করার কথা ছিল সেটা হয়তো করতে পারিনি। কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। আপনাকে পরিকল্পনা অনেক সুন্দরভাবে করতে হবে। ঘরের মাঠের সুবিধা যে আমরা সবসময় নেই এমন না। ভারতের সঙ্গে যখন খেলেছি, তখন তো ট্রু উইকেটে খেলেছি। মিরপুর মাঠেই কিন্তু ট্রু উইকেটে খেলেছি। চট্টগ্রামেও ট্রু উইকেটে খেলেছি। সবসময় যে ঘরের মাঠের সুবিধা নেই এমন না। আমরা ট্রু উইকেটেও বাইরের দলের সঙ্গে খেলেছি।’
টেস্টের অধিনায়কত্ব পেলে গ্রহণ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরাজ বলেন, ‘যদি দেয় অবশ্যই আমি করব। কিন্তু সেটার একটা পরিকল্পনা আছে…..তারা কিভাবে চায়, আমি কিভাবে চাই। এটা সম্পূর্ণ ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত, তারা কাকে চিন্তা করছে। যেহেতু আমি ওয়ানডের অধিনায়কত্ব করছি, যদি এরকম প্রস্তাব আসে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। দুই পক্ষ যদি কথা বলে মানসিকভাবে একই জায়গায় থাকি, তাহলে ভালো হবে।’
আয়শা/২৪ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৪:০০