
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেরিতে হলেও অবশেষে কার্যকর হচ্ছে গাজার যুদ্ধবিরতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘প্রথম দফা’ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে (বৃহস্পতিবার) গাজার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইল। বহুল অপেক্ষিত এই খবরে উল্লাসে ফেটে পড়েছে গাজা। জেগে উঠেছে ‘নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন’। তবে যুদ্ধবিরতি হলেও গাজার ভবিষ্যৎ এখনো বন্ধুর। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ‘পুনর্গঠন’। বৃহস্পতিবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধ্বস্ত গাজাকে বাসযোগ্য করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লেগে যাবে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস জানিয়েছে, ইসরাইল গাজার প্রায় প্রতিটি উৎস ধ্বংস করে দিয়েছে। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক স্থানগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে ৯০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেছে তারা। জাতিসংঘ বলছে, গাজার পুনর্গঠনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি প্রয়োজন হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপে কর্মরত (দোহা) গাজার বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওয়ি বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্মাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরাইলের ওপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন। ফিলিস্তিনিরা তাদের জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে সক্ষম। কিন্তু পুনর্গঠনের ইচ্ছা থাকাই যথেষ্ট নয়…এটি শুধু তাদের ওপর নির্ভর করে না।’
অপরাধী গোষ্ঠী ও দলাদলি
ট্রাম্প প্রস্তাব মোতাবেকে, হামাস ক্ষমতা ছেড়ে দিলে এই ভূখণ্ড সংঘাত ও অরাজকতায় ডুবে যাবে। গাজা থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক ইয়াসির আল-বান্না এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘গাজায় হামাসের শাসনের একটি সুবিধা হলো- তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’
এছাড়াও এ গণহত্যার সময় ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যা করেছে। কুখ্যাত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে। যারা গাজায় আসা সামান্য ত্রাণ চুরি করে সর্বোচ্চ লাভে বিক্রি করেছে। এ সম্পর্কে দোহায় কর্মরত গাজার বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওয়ি সতর্ক করে বলেন, গোষ্ঠীগত সংঘাত; বিশেষ করে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে সংঘাত বড় এক সমস্যা হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা
বিশেষজ্ঞ মন্তব্যের জেরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় থাকতে যারা বাধ্য হবেন, তাদের ভয়াবহ এক জাতিগত নিধনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াবে। দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করতে হবে মানসিক ট্রমার সঙ্গে। ইসরাইলের অবিরাম আক্রমণে তারা পরিবার, বন্ধু, ঘরবাড়ি অনেক কিছু হারিয়েছেন। এসব নিয়ে ভাবার বা শোক করার মুহূর্ত খুব কম মানুষই পেয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের নির্বিচার হামলার শুরুর আগে ২০২২ সালে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, গাজার প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে চার শিশুই হতাশা, ভয় ও শোক নিয়ে জীবনযাপন করছিল। এ বিষয়ে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) মতে, এই জাতিগত নিধনের কারণে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যে সম্মিলিত মানসিক আঘাত এসেছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গবেষণা বা দেখা কোনোকিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়। গাজায় অভিভাবকহীন কমপক্ষে ১৭ হাজার শিশু রয়েছে। তারা কখনো নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ পাবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
সূত্র: আল-জাজিরা
আয়শা/০৯ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:২২