ডেস্ক নিউজ : অর্থাৎ উস্তাদ-গুরুর তত্ত্বাবধানে ছাত্র–শিষ্যের ঘরোয়া পদ্ধতির শিক্ষা দীক্ষার প্রচলনটা চোখে পড়বে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিও কিন্তু তাই বলে। বাদশাহ আলমগির ও তার পুত্রকে নিয়ে রচিত প্রসিদ্ধ কবিতাটিও আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয়। বরং এর সঙ্গে উস্তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। তাঁর সেবা যত্ন করাও একজন ছাত্রের গুরু দায়িত্ব।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা হজরত খিজির আ. ও হজরত মূসা আ. এর ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। শিষ্যের আচরণ কেমন হবে তার উস্তাদের সঙ্গে। সেই আদব কায়দা উঠে এসেছে আয়াতে। হজরত মুসা (আ.) তাকে (খিজির আ.কে) বললেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে। তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন- এ শর্তে আমি কি আপনার অনুসরণ করব? সে (খিজির আ.) বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবে না! আর যে বিষয় তোমার জানা নেই, সে বিষয়ে কীভাবে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে? (সুরা কাহাফ : ৬৬–৬৮)
ঠিক এভাবেই নবী মুসা (আ.) কে আল্লাহ তায়ালা শিক্ষাদান করেছেন, অজানা বিষয়ের ইলম। এখান থেকে সূক্ষ্ম একটি বিষয় উঠে এসেছে যে, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের আচরণ কেমন হবে? ছাত্র হিসাবে চূড়ান্ত ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আর কোনো শিক্ষকের সব কাজই হয়তোবা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভালো ও কল্যাণকর মনে হবে না।
এটাই স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যেও যে কল্যাণ ও রহস্য লুকিয়ে আছে। তা মুসা (আ.) ও খিজির আ. এর এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে। এজন্য শিক্ষক, বয়সে বড়, মুরব্বি; এ জাতীয় লোকজন সম্মানিত। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলা। আদবের সঙ্গে কথা বলা। আগে সালাম করা। বাবার বয়সী বা বৃদ্ধ লোককে শ্রদ্ধা করা জরুরি। এগুলো পারিবারিক শিক্ষার অপরিহার্য বিষয়ও বটে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। হাদিসে এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সাহাবি হজরত আবু মূসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলমানকে সম্মান করা, কুরআনের ধারক-বাহক (তথা হাফেজ-আলেমদেরকে) সম্মান করা ও ন্যায়পরায়ণ শাসক (রাষ্ট্রপ্রধানের) প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৪৩)
আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বেয়াদবি ও বড়োদের প্রতি অশ্রদ্ধা ইত্যাদির ভয়াবহ অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এখন। এমনকি শিক্ষক ও মা বাবার প্রতি তরুণ প্রজন্মের অভক্তি অশ্রদ্ধা অসম্মান বেড়ে চলছে। তাদের ভুল খুঁজে বের করা। দোষ ধরা। কোনো কাজের অহেতুক সন্দেহ ও সমালোচনা করা ইত্যাদি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্ববর্তী শিক্ষক মনীষী বিজ্ঞানীদের ভুল আবিস্কার করা। অযথা সন্দেহ এবং অশোভনীয় শব্দে সমালোচনা করা।
এজন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। ছেলে মেয়ের আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষার অভাব পূরণ করতে হবে। তাদেরকে সঠিক শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন বড়োদের সম্মান রক্ষা করেন। মুরব্বিদের সঙ্গে আন্তরিকতা পূর্ণ ব্যবহার করেন। এসব বিষয়ে আলোচনা করা। তাদেরকে উৎসাহিত করা। এগুলো আমাদের প্রত্যেকটি পরিবার ও অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব।
অন্যথায় এরা আরও বেপরোয়া উশৃংখল হয়ে উঠবে। এজন্য শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের এসব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বড়োদের প্রতি অনাস্থা অবিশ্বাস ও সমালোচনা থেকে যাতে আমাদের উঠতি প্রজন্ম বেরিয়ে আসতে পারে। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণে আমাদের সকলের সচেতনতা জরুরি।
লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর
কিউটিভি/আয়শা/১৫ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৪:৫২