
ডেস্ক নিউজ : একেকজন মানুষের অপরাধের তালিকা একেকরকম হয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, যারা অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে থাকেন, তারা কীভাবে তওবা করবেন? আর সেসব সম্পদই বা কী করবেন? অনেকে ধারণা করে থাকেন যে, তওবা করলে উপার্জিত সম্পদের আর হিসাব দিতে হবে না। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তওবা করলে নিজের কৃত পাপ যতটুকু সম্ভব মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিকভাবে যেসব পাপ করা হয়েছে, তা সহজে মিটিয়ে ফেলা।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ঘুষগ্রহীতা ও ঘুষদাতা উভয়কে লানত করেছেন (তিরমিজি)। রসুলুল্লাহ (সা.)বলেন ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে পরে তা দান করবে, সে এই দানের জন্য কোনো সাওয়াব পাবে না এবং তার পাপ তাকে ভোগ করতে হবে।’ (ইবনু হিব্বান) অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বৈধ আয়ের ইবাদত ছাড়া কোনো প্রকার ইবাদত আল্লাহর কাছে উঠানো হয় না’ (বুখারি)। রসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন ,‘অজু-গোসল ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না, আর অবৈধ উপার্জনের কোনো দান কবুল হয় না’ (বুখারি)।
হারাম ভক্ষণ করে ইবাদত করলে তা কবুল হয় না। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না।’ (নাসায়ি) রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হে মানুষেরা, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র (বৈধ) ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন, যে নির্দেশ তিনি নবী ও রসুলদের দিয়েছেন।
এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (হজ, ওমরা ইত্যাদি পালনের জন্য, আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলি ধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দুটি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দোয়া করতে থাকে, হে প্রভু, হে প্রভু বলে। অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংস গড়ে উঠেছে। তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে!’ (মুসলিম)।
অবৈধ সম্পদ কী করবেন?
সুদ দিলে বা সুদ নিলে সেই পাপ থেকে বাঁচার জন্য সুদের টাকা ফেরত নিতে হবে অথবা ফেরত দিতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে যে সুদ দিয়েছেন তিনি তওবা করবেন। আর যিনি সুদ নিয়েছেন তিনি সুদের টাকা গরিব কাউকে দিবেন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া। কোনোভাবে দান করা যাবে না।
একই বিষয় কেউ যদি ঘুষের ক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়েন। কোনো কাজের টাকা ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করলেও একই নিয়ম। এক্ষেত্রে ঘুষ বা দুর্নীতির কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কাজের যে ক্ষতি হয় তার জন্য খাস দিলে তওবা করবেন। অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ, টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিজের করে ফেললে সেসব সম্পদ মালিকদের কাছে পৌঁছাতে হবে। একান্ত পৌঁছাতে না পারলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব মিসকিনদের দিতে হবে।
তওবা কীভাবে করবেন?তওবা করার জন্য তিনটি ধাপ রয়েছে।
এক. কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। নিজের মধ্যে যদি এমন অনুভব হয় যে এ কাজ করে তো আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে তো আমি হিসাব দিতে পারব না। এরকম অনুশোচনা আসলে তওবার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
দুই. তওবার নিয়ত করার সাথে সাথে গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। সুদে টাকা ইনভেস্ট দেয়া থাকলে সুদ নিবেন না বলে জানিয়ে দিতে হবে। অবৈধ উপায়ে নেয়া কারও সম্পদ নিজের কাছে থাকলে তা ফেরত দিতে হবে।
তিন. ভবিষ্যতে আর গুনাহের কাজ করবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কোনোভাবেই এ কাজ করা যাবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে তা থেকে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা করতে হবে।
এই তিনটা ধাপ পরিপূর্ণ হলে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে রোনাজারি করে তার কাছে ফিরে আসার কথা জানাতে হবে। মনের কথা দৃঢ়ভাবে জানাতে হবে। এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ তাআলা সব শুনছেন।
তওবা ও দোয়া করার পর যদি মনে হয় আল্লাহ তাআলা আপনার কথা শুনেছেন; তাহলে এই বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমাও করেছেন। তিনি ক্ষমা করেননি ভেবে হতাশ হওয়া যাবে না।
কেননা যে যত বড় গুনাহ করুক না কেন আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করবেন। তবে এ জন্য তওবার ওই তিন ধাপ পূরণ করতে হবে।
কিউটিভি/আয়শা/১১ জুলাই ২০২৪,/রাত ৮:৫৪