মূলত এই হাদিসের মাধ্যমে নবী করিম (সা.) আমাদের জানিয়েছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি যথা—গণহত্যা, ফিতনা ও অলসতার সময়ের ইবাদত হিজরতের সওয়াব সমতুল্য।

ডেস্ক নিউজ : অনুকূল পরিবেশ বা পরিস্থিতি মানুষের কাজকর্ম ও মনমানসিকতায় বিরাট প্রভাব ফেলে। সমসাময়িক ও কাছের মানুষজন যদি দ্বিনের ব্যাপারে সচেতন থাকে এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলে তাহলে নিজেরও দ্বিনের ওপর অটল থাকা সহজ হয়। আবার এই মানুষগুলোই যদি উদাসীন হয় এবং আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, তখন দ্বিন মেনে চলা কঠিন হয়ে যায়। কেননা এ অবস্থায় দ্বিনের ব্যাপারে অনুসরণীয় সচেতন ব্যক্তিদের সংখ্যা কমে যায়।
২. ইমাম ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিসে হিজরতের সঙ্গে তুলনা দেওয়ার কারণ হলো ইসলামের শুরু যুগের মুহাজিররা দারুল কুফর ও তার অধিবাসীদের ত্যাগ করে দারুল ঈমান ও তার অধিবাসীদের নিকট হিজরত করতেন। তেমনিভাবে ফিতনার যুগে মানুষ ওই ফিতনা সৃষ্টিকারী সম্প্রদায় ও সময়কে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দ্বিন রক্ষার্থে ইবাদতের আশ্রয়ে পলায়ন করবে।
৩. ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘ফিতনার সময়ে সমস্ত মানুষ ইবাদত থেকে উদাসীন ও অনাগ্রহী থাকে। কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু লোক দ্বিনের ওপর অটল থাকে। তাই তাদের এই ইবাদত হিজরতের সমতুল্য।’ (শরহুন নববি, বর্ণনা : ২৯৪৮)
৪. হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘ফিতনার যুগে সাধারণত মানুষ নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে থাকে। দ্বিনের প্রতি উদাসীন থাকে। তাদের অবস্থা তখন জাহেলি যুগের মানুষের মতো হয়ে যায়। বেশির ভাগ মানুষ তো পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। তবে কিছু লোক দ্বিনের ওপর অবিচল থাকে, নিজ প্রভুর ইবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি তালাশ করে এবং অসন্তোষের কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। মূলত তাদের অবস্থার তুলনা এ হাদিসে। অর্থাৎ জাহেলি যুগের কাফিরদের মধ্যে থেকে কেউ আল্লাহর নবী (সা.)-এর সব আদেশ-নিষেধ মানার প্রতিজ্ঞা করে তাঁর নিকট হিজরত করে এসেছে, ঠিক ফিতনার যুগে ইবাদতকারী ব্যক্তির অবস্থাও এই ঈমানদারের মতো।’ (লাতাইফুল মাআরিফ : ১/১৩২)
৫. ইমাম ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে তখন মানুষের মনেও গাফিলতি ছেয়ে যায়। এ অবস্থায়ও যদি কেউ ইবাদতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে তাহলে এটা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মজবুত বন্ধনের প্রমাণ বহন করে। তাই এর প্রতিদান এত বেশি।’ (কাশফুল মুশকিল : ২/৪২)
তাই অনুকূল পরিবেশের ন্যায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আল্লাহর প্রিয় ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া একজন মুমিনের জন্য একান্ত কর্তব্য। কারণ আল্লাহ তাআলার মানুষকে সৃষ্টি করার প্রধান উপলক্ষ হলো তাঁর ইবাদত করা। এ মর্মে তিনি বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।
কিউটিভ/আয়শা/০৪ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৫:০৮