
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আধুনিক রাজনীতিতে, বিশেষ করে ১৯৭০–এর পরে বিভিন্ন দেশের এমন বেশ কয়েকজন নেতা আছেন, যারা নির্বাসন শেষে ফিরে এসে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হয়েছেন।
বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ছিলেন প্রভাবশালী পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং আধুনিক ইতিহাসে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়া প্রথম নারী। তার স্বামী আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয়।
প্রথমবার ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনজির ভুট্টো।
বেনজির ভুট্টো তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম নির্বাসনের মুখোমুখি হন ১৯৮৪ সালে। ১৯৭৭ সালে তার বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ১৯৭৯ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর বেনজির ভুট্টো পাকিস্তান পিপলস পার্টির হাল ধরেন। সেনাশাসক জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক এর প্রশাসনের সময় তাকে বারবার ‘হাউস আরেস্টে’ রাখা হয়। স্বাস্থ্যের অবনতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে চলে যান বেনজির ভুট্টো।
১৯৮৬ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানে ফেরেন বেনজির, আর ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস রচনা করেন।
দুই দফায় (১৯৮৮–১৯৯০ এবং ১৯৯৩–১৯৯৬) প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পর, বেনজির ভুট্টো আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মামলা মোকদ্দমার মুখে পড়েন। ১৯৯৮ সালে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনে যান, ছিলেন লন্ডন ও দুবাইতে। ১৯৯৯ সালে তাকে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে (অনুপস্থিতিতে) তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এসময় ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনার পর এবং জাতীয় পুনর্মিলন অধ্যাদেশ (এনআরও) অনুযায়ী অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এ প্রত্যাবর্তন ঘিরে করাচিতে হাজার হাজার মানুষ উৎসাহের সঙ্গে তাকে স্বাগত জানান। কিন্তু তার গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা হয়, যাতে প্রাণ হারান বহু মানুষ। অল্পের জন্য সেই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বেনজির ভুট্টো।
যদিও এর মাত্র দুই মাসের মাথায় ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী সমাবেশের পরে বেনজির ভুট্টোকে গুলি ও আত্মঘাতী বোমা হামলায় হত্যা করা হয়।
নওয়াজ শরিফ
পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম বড় নির্বাসন ঘটে ২০০০ সালে। ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ‘সন্ত্রাসবাদ’ ও দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে নওয়াজকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০০০ সালের ডিসেম্বর, সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির আওতায় নওয়াজ শরিফকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তির শর্ত ছিল ১০ বছর নির্বাসনে থাকা। এরপর তিনি সৌদি আরবে বসবাস শুরু করেন। তার প্রথমবারের দেশে ফেরার চেষ্টা ব্যর্থ হয় ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই সময় পাকিস্তানে ফেরার সাথে সাথেই তাকে ফেরত পাঠানো হয়। তবে একই বছরের নভেম্বরে মোশাররফের ক্ষমতা শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাকিস্তানে ফিরতে সক্ষম হন।
২০১৭ সালে পানামা পেপার্স তদন্তের পর দেশটির সর্বোচ্চ আদালত নওয়াজ শরিফকে পদত্যাগে বাধ্য করে। পরের বছর আল-আজিজিয়া স্টিল মিলস দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সাজা ভোগকালে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজকে চার সপ্তাহের মেডিকেল জামিনের অনুমতি দেন লন্ডনে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু চার সপ্তাহের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আর দেশে ফেরেননি এবং পরে পাকিস্তানি আদালত তাকে ‘পলাতক আসামি’ ঘোষণা করে।
এর চার বছর পর ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর দুবাই হয়ে পাকিস্তানে ফেরেন নওয়াজ শরিফ। ফেরার পর তাকে দেয়া পূর্বের এভেনফিল্ড ও আল-আজিজিয়া মামলার দণ্ড বাতিল করে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন নওয়াজ। ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ থেকে লাহোর হেরিটেজ রিভাইভাল অথরিটির ‘প্যাট্রন-ইন-চিফ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
অং সান সু চি
রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং লেখক অং সান সু চি, যিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তার রাজনৈতিক জীবন বহু উত্থান-পতনে ঘেরা।
প্রাথমিকভাবে অং সান সু চি’র প্রবাস জীবনের শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন তিনি তার মায়ের সাথে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) ছেড়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তার মা রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ব্রিটিশ একাডেমিক মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৮৮ সালে ইয়াঙ্গুনে ফিরে আসেন সু চি। তার প্রত্যাবর্তনের সময় দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার হয় এবং ১৯৮৮ সালের আগস্টে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যা তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা বলা যায়। প্রজাতন্ত্রকামী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) পার্টি গঠনের পর, সামরিক জান্তা ১৯৮৯ সালের জুলাইয়ে তাকে প্রথমবার ‘হাউস আরেস্টে’ রাখে। এই সময়কালে (১৯৮৯–২০১০) তিনি মোট ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছর হাউস আরেস্টে ছিলেন। স্বামী মাইকেল অ্যারিসকে ভিসা না দেয়ায় তার সঙ্গে মিয়ানমারে দেখাও করতে পারেননি সু চি।
১৯৯৭ সালে স্বামীর ক্যানসার ধরা পড়লে মিয়ানমার সরকার সু চি-কে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেয়, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তার আশঙ্কা ছিল, জান্তা সরকার তাকে আর দেশে ফেরার অনুমতি দেবে না এবং এটি তার স্থায়ী নির্বাসনে রূপ নিতে পারে। ১৯৯৯ সালে মারা যান তার স্বামী।
সু চি-কে হাউস আরেস্ট থেকে সবশেষ মুক্তি দেয়া হয় ২০১০ সালের নভেম্বরে। দেশটির নতুন রাজনৈতিক সংস্কারমূলক সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের মে মাসে তিনি ২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবার বিদেশ সফরে যান। এসময় তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করেন এবং নিজ হাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেন। পরে তিনি আবার মিয়ানমারে ফিরে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।
২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বড় জয় পায়। ২০১৬ সাল অং সান সু চি’র রাজনৈতিক উত্থানের বছর ছিল, যেখানে তিনি মিয়ানমারের ক্ষমতা কাঠামোতে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আসেন। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটে ভূমিকা তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখেও ফেলে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সু চি’র নাগরিক নেতৃত্বের অধ্যায় শেষ হয়। তিনি গ্রেফতার হন এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যজনিত কারণে কারাগার থেকে হাউস আরেস্টে স্থানান্তরিত হন। এখন পর্যন্ত তিনি হেফাজতেই আছেন।
থাকসিন সিনাওয়াত্রা
ভূমি চুক্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড এড়াতে ২০০৮ সালে দেশ থেকে পালিয়ে যান থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।
স্বেচ্ছানির্বাসনের ১৫ বছরের বেশিরভাগই তিনি কাটান দুবাই এবং লন্ডনে। তবে এই সময়েও ‘পর্দার আড়াল’ থেকেই থাই রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে যান। যদিও বিদেশে থাকা অবস্থায় থাকসিনকে ক্ষমতা অপব্যবহার এবং স্বার্থবিরোধী আচরণের মতো একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যার একত্রিত শাস্তি ছিল মোট আট বছরের কারাদণ্ড।
২০২৩ সালের ২২ আগস্ট দেশে ফেরেন থাকসিন, তার ব্যক্তিগত বিমান অবতরণ করে ব্যাংককের একটি বিমানবন্দরে। দেশে ফেরার পর থাকসিনকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে কারাগার থেকে পুলিশ হাসপাতালের ভিআইপি উইং-এ স্থানান্তরিত করা হয় থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে।
একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে থাকসিনের আট বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে এক বছর করেন থাই রাজা। হাসপাতালে এক বছরের কারাদণ্ডের ছয় মাস পূর্ণ করার পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। ২০২৫ সালের শেষের দিকে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, ২০২৩ সালে হাসপাতালে থাকার সময় কারাদণ্ডের মধ্যে গণ্য হবে না। ফলে এক বছরের সম্পূর্ণ শাস্তি ভোগের জন্য থাকসিনকে ফের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
এসব আইনি চ্যালেঞ্জের মাঝেই থাকসিনের মেয়ে পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে চলতি বছর সংবিধানিক আদালতের আদেশে ‘নৈতিকতা লঙ্ঘনের কারণে’ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
রুহুল্লাহ খোমেনি
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান ও নির্ধারক ঘটনা ছিল রুহুল্লাহ খোমেনির দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময়ের স্বেচ্ছানির্বাসন এবং ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন। ১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাসন শেষ হয় শাহ শাসনের পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে।
রুহুল্লাহ খোমেনি ছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির সরকারের একজন তীব্র সমালোচক। বিশেষ করে শাহ’র ঘোষিত ‘হোয়াইট রেভল্যুশন’ সংস্কার কর্মসূচিকে তিনি ইসলামবিরোধী ও অতিরিক্ত ধর্মনিরপেক্ষ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে দেয়া এক আবেগঘন ভাষণের পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ক্রমাগত বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। খোমেনিকে গোপনে আঙ্কারায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে তিনি বুরসা শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি তুরস্কের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারিতে ছিলেন। এই সময়েই তিনি ধীরে ধীরে ধর্মীয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে তার চিন্তাভাবনা গুছিয়ে নিতে শুরু করেন।
এরপর ইরাকের পবিত্র শিয়া নগরী নাজাফে চলে যান খোমেনি, যেখানে তিনি ১৩ বছরের বেশি সময় কাটান। নাজাফে অবস্থানকালে তিনি তার বিখ্যাত তত্ত্ব ‘ভেলায়াত-ই ফকিহ’ (ইসলামী আইনজ্ঞের শাসন) বিকশিত করেন। তিনি ক্যাসেট টেপে রেকর্ড করা ভাষণের মাধ্যমে গোপনে ইরানের জনগণের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেন এবং এর মাধ্যমে একটি বিস্তৃত বিরোধী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
শাহের চাপে ইরাকের তৎকালীন সরকার খোমেনিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। তিনি প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সহজ প্রবেশাধিকার পাওয়ায় খোমেনি বিশ্ব গণমাধ্যম ব্যবহার করে বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্যায় সমন্বয় করেন এবং শাহের পতনের আহ্বান আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে দেন।
পরবর্তীতে দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মঘট ও গণবিক্ষোভ ইরানকে কার্যত অচল করে তোলে। এর ফলেই শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর দুই সপ্তাহ পর, জনতার চাপের মুখে বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলে খোমেনি দেশে ফেরেন। ফ্রান্সের একটি চার্টার্ড বিমানে করে তিনি তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তেহরানের রাস্তায় আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ তাকে স্বাগত জানায়, যা ইরানের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাবেশ হিসেবে বিবেচিত। আগমনের পর তিনি শাহ সরকারের বৈধতা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজের মনোনীত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।
১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের সামরিক বাহিনী নিরপেক্ষতা ঘোষণা করলে পাহলভি রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়েই ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় এবং রুহুল্লাহ খোমেনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
ইয়াসির আরাফাত
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত প্রায় ২৭ বছর (১৯৬৭–১৯৯৪) নির্বাসন কাটানোর পর ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রত্যাবর্তন করেন। এই প্রত্যাবর্তন ছিল মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
নির্বাসনকালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার একাধিক দেশ থেকে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইয়াসির আরাফাত। ছয় দিনের যুদ্ধের পর তিনি জর্ডানকে তার রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। তবে জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ (ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামে পরিচিত) ঘটলে ১৯৭১ সালে পিএলওকে দেশটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর পিএলওর সদর দফতর স্থানান্তরিত হয় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে সামরিক অভিযান চালালে পশ্চিম বৈরুত প্রায় ১০ সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকে। আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আওতায় ইয়াসির আরাফাতকে শেষ পর্যন্ত লেবানন ত্যাগ করতে হয়।
১৯৮২ সালের ৩০ আগস্ট ইয়াসির আরাফাত তিউনিসে আশ্রয় নেন। পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় তিউনিসিয়াই পিএলওর প্রধান দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই সময়কালে আরাফাত সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে ধীরে ধীরে কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হন, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক অসলো চুক্তি। এই চুক্তির একটি প্রধান শর্ত ছিল ইয়াসির আরাফাতের প্রত্যাবর্তন এবং ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অথরিটি (পিএএ) গঠন।
মিশর থেকে রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছিলেন আরাফাত। সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন লাখো ফিলিস্তিনি। ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তিনি পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে যান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
তবে ইয়াসির আরাফাতের প্রত্যাবর্তনের পরও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় সহিংসতা তীব্র হলে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসরাইলি বাহিনী তাকে রামাল্লাহর মুকাতা সদর দফতরে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখে। ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে গুরুতর অসুস্থতার কারণে তাকে জরুরি ভিত্তিতে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ইয়াসির আরাফাত।
নুরি আল-মালিকি
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা নুরি আল-মালিকি সাদ্দাম হোসেনের শাসনামল থেকে পালিয়ে প্রায় ২৪ বছর নির্বাসনে জীবন কাটান। দীর্ঘ এই প্রবাস জীবনের অবসান ঘটে ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনে সাদ্দাম সরকারের পতনের পর।
নুরি আল-মালিকি ১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে (কিছু সূত্র অনুযায়ী ১৯৮০ সালে) স্বল্প সময়ের জন্য গ্রেফতার হওয়ার পর ইরাক ত্যাগ করেন। ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত’ ইসলামিক দাওয়া পার্টির একজন শীর্ষ সদস্য হওয়ায় ১৯৮০ সালে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের (অনুপস্থিতিতে) আদেশ দেয়া হয়।
ইরাক ছাড়ার পর তিনি প্রথমে জর্ডানে আশ্রয় নেন, পরে সিরিয়ায় চলে যান। ১৯৮২ সালে আল-মালিকি ইরানের রাজধানী তেহরানে স্থানান্তরিত হন। ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন সময়ের বড় অংশ তিনি সেখানেই কাটান। ১৯৯০ সালে আবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ফিরে যান। সেখানে তিনি ইসলামিক দাওয়া পার্টির সিরিয়া শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দলীয় পত্রিকা ‘আল-মাওকিফ’-এর সম্পাদক ছিলেন।
নির্বাসনকালজুড়ে নুরি আল-মালিকি ‘জাওয়াদ’ ছদ্মনামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এই সময় তিনি বাথ পার্টির শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা সংগঠিত করা এবং গোপন কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন অভিযানে সাদ্দাম হোসেনের সরকার উৎখাত হওয়ার পরপরই নুরি আল-মালিকি ইরাকে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর দ্রুতই তিনি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
পরে তিনি সংশ্লিষ্ট একটি কমিশনের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যার লক্ষ্য ছিল সাদ্দাম হোসেনের অনুগতদের সরকারি ও সামরিক পদ থেকে অপসারণ। নুরি মালিকি ২০০৫ সালে অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হন এবং ইরাকের নতুন স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালের মে মাসে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা
অন্য অনেক রাজনৈতিক নেতার মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রথাগত রাজনৈতিক নির্বাসনে ছিলেন না নেলসন ম্যান্ডেলা, বরং তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ভেতরেই ২৭ বছর কারাবন্দি ছিলেন। তার জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।
দীর্ঘ কারাবাসের আগে নেলসন ম্যান্ডেলা প্রায় ছয় মাস গোপনে বিদেশে অবস্থান করেন। এই সময় তার লক্ষ্য ছিল বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন এবং সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ। ১৯৬২ সালের শুরুতে তিনি ইথিওপিয়া, আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়াসহ একাধিক আফ্রিকান দেশ সফর করেন। তিনি যুক্তরাজ্যেও যান।
আলজেরিয়া ও ইথিওপিয়ায় তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) গঠিত সশস্ত্র শাখার জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ম্যান্ডেলা ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে আসেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর ৫ আগস্ট একটি সড়ক অবরোধ করে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রথমেই তাকে অবৈধভাবে দেশত্যাগের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
জনজীবন থেকে নেলসন ম্যান্ডেলার অনুপস্থিতির সময়টি মূলত তার ২৭ বছরের কারাবাসের মাধ্যমে নির্ধারিত, যা তিনটি প্রধান স্থানে কেটেছে। বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ কারাগারে একটি ছোট সেলে তিনি ১৮ বছর কাটান এবং চুনাপাথরের খনিতে কঠোর শ্রমে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে কেপ টাউনের একটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কারাবাসের শেষ ১৪ মাস তিনি কারাগার প্রাঙ্গণের একটি ব্যক্তিগত কটেজে কাটান। এই সময় তিনি গোপনে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের ঘোষণার পর ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নেলসন ম্যান্ডেলা ভিক্টর ভার্স্টার কারাগার থেকে মুক্তি পান। স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলার হাত ধরে বেরিয়ে আসেন কারাগার থেকে। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি কেপ টাউন সিটি হলের বারান্দা থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন। বর্ণবাদমুক্ত, অ-নৃগোষ্ঠীগত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
মুক্তির চার বছর পর, ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম বহুজাতিক নির্বাচনে নেলসন ম্যান্ডেলা দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এলেন জনসন সারলিফ
রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার নির্বাসন ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দমন-পীড়নের পেছনে ছিল লাইবেরিয়ার ধারাবাহিক স্বৈরশাসক স্যামুয়েল ডো ও চার্লস টেলর-এর বিরুদ্ধে তার অবস্থান।
১৯৮০ সালে সামরিক কর্মকর্তা স্যামুয়েল ডো’র নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্ট ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে এলেন জনসন সারলিফ লাইবেরিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হন। নির্বাসনে তিনি কেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময়ে সিটিব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও ইকুয়েটর ব্যাংকে উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন সারলিফ।
১৯৮৫ সালে তিনি দেশে ফিরে সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে স্যামুয়েল ডো’র সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনা করার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯৮৬ সালে তিনি ক্ষমা পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন। তবে একই বছর আবার গ্রেফতার হন এবং দ্বিতীয়বার মুক্তির পর গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান।
এই সময়ে (১৯৯২–১৯৯৭) তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আফ্রিকা-বিষয়ক আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে লাইবেরিয়ায় ফিরে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। তবে সাবেক যুদ্ধবাজ নেতা চার্লস টেলর-এর কাছে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। নির্বাচনের পরপরই টেলরের সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনে, ফলে তিনি আবারও নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। তখন তিনি আইভরি কোস্টের আবিদজান শহরে বসবাস শুরু করেন এবং সেখান থেকে লাইবেরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
২০০৩ সালে চার্লস টেলর দেশত্যাগে বাধ্য হলে এলেন জনসন লাইবেরিয়ায় ফিরে আসেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গভর্ন্যান্স রিফর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০০৫ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি ২০০৬ সালে আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখন তিনি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও নারী নেতৃত্বের একজন সক্রিয় প্রবক্তা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আলাসনে আউত্তারা
আইভরি কোস্টের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলাসনে আউত্তারা, যিনি ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে কয়েক দফায় নির্বাসনের মুখোমুখি হন তিনি। তার এই নির্বাসনের পেছনে মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক ও জাতিগত উত্তেজনা।
আউত্তারার নির্বাসনের প্রধান কারণ ছিল তার নাগরিকত্ব ও জাতিগত পরিচয় ঘিরে বিতর্ক, যা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া থেকে তাকে বিরত রাখতে ব্যবহার করেন। ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফুয়ে-বোয়ানির মৃত্যুর পর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হলে আউত্তারা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান আইভরি কোস্টে প্রথম গৃহযুদ্ধের সূচনা করে। এই সময় আউত্তারার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তিনি প্রথমে ফরাসি দূতাবাসে আশ্রয় নেন, পরে ফ্রান্সে নির্বাসনে চলে যান। দেশটি তখন বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চল ও সরকার-নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলে বিভক্ত থাকায় তিন বছরেরও বেশি সময় বিদেশে অবস্থান করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পাওয়ার পর ২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি ফ্রান্স থেকে আবিদজানে ফিরে আসেন। ২০১০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় বিজয়ী হলেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরাঁ গবাগবো তার জয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এর ফলে দেশজুড়ে পাঁচ মাসের রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গবাগবো গ্রেফতার হন এবং ২০১১ সালের ২১ মে আউত্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে আলাসনে আউত্তারা বিতর্কিতভাবে চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনটি প্রধান বিরোধী নেতাদের বাদ পড়া এবং তুলনামূলকভাবে কম ভোটার উপস্থিতির কারণে সমালোচিত হয়।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, নির্বাসন অনেক সময় রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতা নয়, বরং কৌশলগত পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দেয়। অনেক নেতার প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে যে, রাজনীতিতে নির্বাসন শেষ কথা নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি ক্ষমতায় ফেরার দীর্ঘ পথের একটি অধ্যায় মাত্র।
সূত্র: এনপিআর, ব্রিটানিকা, ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, ইরাবতী, আল জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, ওয়াফা এজেন্সি, সিবিসি, আরব নিউজ, পিবিএস, মিডল ইস্ট আই, দ্য নেশন
আয়শা/২৬ ডিসেম্বর ২০২৫,/দুপুর ১:০৪






