ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

গাজার যুদ্ধবিরতি মানে ক্ষণিক বিরতি, শেষ নয়

Ayesha Siddika | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:৪২:১৫ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই বছরের নৃশংসতা শেষে অবশেষে প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চলছে গাজায়। ধাপে ধাপে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা থাকলেও তাতে শঙ্কা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে। কিন্তু অভিজ্ঞাতা বলছে, গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতিই স্থায়ী হয় না! প্রতিটি যুদ্ধবিরতিই ছিল ভঙ্গুর, ক্ষণিক বিরতি, কিন্তু শেষ নয়। আমি বিশ্বাস করি, যুদ্ধ আবার ফিরে আসবে! ইসরাইল কখনোই সত্যিকারের কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সম্মান করেনি। এই সংঘাত অন্তহীন বলে মনে হয়। কারণ এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক বিরোধ নয়, এটি ভূমি ও অস্তিত্বের লড়াই।

শিক্ষাজীবনের স্কুল-কলেজও আমার জন্মভূমির মাটিতেই। চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রি নেওয়ার জন্য প্রথমবার মিশরে এসেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। এখানকার আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিগ্রি নিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম আমার নিজ দেশে। যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর থেকে দক্ষিণ— গাজার সব হাসপাতালেই আমি শেষ পর্যন্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। গাজা সিটির আল নাসর এলাকার আল হেলু ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল, আল শিফা হাসপাতাল (সবচেয়ে বৃহৎ হাসপাতাল), দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে বহুবার হামলার মুখে পড়েছি। বর্তমানে আমি কায়রোর নাসর শহরের জায়দা হাসপাতালে কর্মরত। এখান থেকেই আমি আমার জন্মভূমির সেবা করছি। উন্নত চিকিৎসায় মিশরে আসা মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি প্রতিদিন। পাশাপাশি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছি। কারণ মিশরের ভিসানীতি হলো— বসবাসের বৈধতা পেতে হলে স্টুডেন্ট ভিসা থাকতে হবে।

কিন্তু আমি প্রতি মুহূর্তেই উপলব্ধি করি— পরদেশে শিক্ষাজীবন আর নির্বাসন জীবনে আকাশ-পাতাল ফারাক! ভীষণ কঠিন! কোনো স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেই। কাজ করার বা নতুন কিছু শুরু করার আইনি অনুমতি নেই। আমরা যারা বাধ্য হয়ে পিতৃভূমি ছেড়েছি, সবাই এখানে ছোট ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি। কোনো ধরনের আর্থিক বা মানবিক সহায়তাও পাই না। নিজের জন্মভূমি ছেড়ে চলে আসা আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। এটা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নয়, বরং বেঁচে থাকার লড়াই। প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হচ্ছিল, যেন আমরা নিজেদের শিকড় ও অস্তিত্ব থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। আমি এখন নিরাপদ। কিন্তু সেই নিরাপত্তা ফাঁপা মনে হয়। প্রতি মুহূর্তেই এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। আমি বেঁচে আছি, অথচ অনেকে সেই সুযোগটুকুও পায়নি। সবাই শুধু ‘যুদ্ধবিরতি’র কথা বলছে, কিন্তু যখন অবরোধ অব্যাহত থাকে, পরিবারগুলো এখনো ঘরছাড়া, আর ভয় কখনোই দূর হয় না— তখন এটাকে শান্তি বলা যায় না।

বর্তমানে গাজার চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারেই ভয়াবহ অবস্থায় আছে। হাসপাতালগুলো আর আগের মতো নেই। সেগুলো এখন আহত, বাস্তুচ্যুত ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক, রক্তের ব্যাগ, বিদ্যুৎ, এমনকি বিশুদ্ধ পানিও নেই। অনেক ডাক্তার জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ও কোনো ব্যথানাশক ছাড়াই অস্ত্রোপচার করছেন। আমি একজন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ। আমি যা দেখেছি, তা বর্ণনা করার মতো নয়। নারীরা মাঠের তাঁবুতে ধুলো, বালু ও সংক্রমণের মধ্যেই সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। আমি এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, যা কোনো চিকিৎসকের কখনো দেখা উচিত নয়। গাজার পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত জটিল। অনেকেই হামাসকে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ হিসাবে দেখছে। এত ক্ষতির পরও বেশির ভাগ গাজাবাসীই আবার শুধু স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবন চাইছে। অধিকাংশেরই মনোযোগ এখন আর রাজনীতিতে নেই— বেঁচে থাকার দিকে, গাজা পুনর্গঠনের দিকে।

 

 

আয়শা/১৭ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:৪০

▎সর্বশেষ

ad