ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

ভবিষ্যৎ ‘বিক্রি’ করে বর্তমান টিকিয়ে রাখছে পাকিস্তান

Ayesha Siddika | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ - ০৬:৫৯:৪৭ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঋণ, বাজেট ঘাটতি ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা এই তিনটি গভীর বিভাজনরেখা আজ পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট এখন পুনরাবৃত্ত এক উপাখ্যান বর্ধিত সরকারি ঋণ, কর আদায়ের ব্যর্থতা, স্থবির প্রবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার এক দুষ্টচক্র। 

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ৩ শতাংশ যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৪.২ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)ও ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ (এফবিআর) এর সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছে। এই পরিসংখ্যানগত ব্যবধান কেবল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দুর্বলতা নয়, বরং প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতারও এক ভয়াবহ সংকেত। 

ঋণের ভার এখন পাকিস্তানের রাজস্ব সার্বভৌমত্বকে ক্ষয় করছে। বাজেটের বৃহত্তম অংশ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে, ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোর মতো মৌলিক খাতগুলো ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। উন্নয়ন ব্যয় প্রায় নিয়মিতভাবেই ঋণ পরিষেবায় উৎসর্গিত হচ্ছে একটি রাষ্ট্র যেন নিজের ভবিষ্যৎ বিক্রি করে বর্তমান টিকিয়ে রাখছে। 

অর্থনৈতিক পরিসরে এই সংকটের চেয়েও ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে। করব্যবস্থার বৈষম্য সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি করেছে। করের বোঝা বহন করছে বেতনভুক্ত ও কর্পোরেট শ্রেণি, অথচ কৃষি, রিয়েল এস্টেট ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো প্রায় করমুক্ত থেকে যাচ্ছে। জনগণের চোখে রাষ্ট্রটি পরিণত হয়েছে একদল সুবিধাভোগীর সম্পত্তিতে যেখানে ত্যাগ সবসময় দুর্বলদের ভাগ্য, আর সুবিধা শক্তিশালীদের অধিকার। 

আন্তর্জাতিক পরিসরেও পাকিস্তানের অবস্থান ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বারবার আইএমএফ ও মিত্র রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে বেইলআউট চাওয়ার সংস্কৃতি ইসলামাবাদের কৌশলগত স্বাধীনতাকে ক্ষয় করছে। একসময় যে দেশ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভারসাম্যে ভূমিকা রাখত, আজ সে দেশ অর্থনৈতিক টিকে থাকাকেই প্রধান লক্ষ্য করে নিচ্ছে। 

এই সংকটের মূল কারণ প্রযুক্তিগত নয় এটি গভীরভাবে রাজনৈতিক। পাকিস্তানের অর্থনীতিকে যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা একই সঙ্গে রাজনীতিরও চালিকাশক্তি। ভূমিমালিক, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব এতটাই শক্তিশালী যে, তারা যেকোনো সংস্কার উদ্যোগকে প্রাথমিক পর্যায়েই স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম। ফলস্বরূপ, কর সংস্কার বছরের পর বছর কেবল স্লোগান হিসেবেই টিকে থাকে। 

রাজনীতির স্বল্পদৃষ্টিও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। প্রতিটি সরকার টিকে থাকার তাগিদে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পরিবর্তে জনপ্রিয় কিন্তু ক্ষণস্থায়ী পদক্ষেপ ভর্তুকি, ঋণ পুনঃতফসিল বা আর্থিক উদারতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই ক্ষতির বোঝা বাড়ায়, অথচ তাদের সংস্কার রাজনৈতিক ঝুঁকির ভয়ে অনাদৃত থেকে যায়। এফবিআর আধুনিকায়নের প্রতিটি উদ্যোগ প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেছে। 

ফলে অর্থনীতির প্রাণশক্তি আস্থা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা সবই ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যে রাষ্ট্র একসময় শিল্পোন্নয়ন ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় শক্তি হয়ে উঠতে পারত, আজ সে রাষ্ট্র নিজের নীতিগত অচলাবস্থার বন্দি। 

এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সাহসী রাজনৈতিক সদিচ্ছা। করের আওতা বিস্তৃত করতে হবে, ব্যয় ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কারকে রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রে স্থাপন করতে হবে। কারণ, কোনো একক দল বা সরকার এই সংকট থেকে এককভাবে বের হতে পারবে না। 

পাকিস্তানের অর্থনীতির এই দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা কেবল পরিসংখ্যানের বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্রচিন্তার এক দার্শনিক সংকট। যখন একটি জাতি নিজের করব্যবস্থা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা ন্যায্যতার ভিত্তিতে দাঁড় করাতে পারে না, তখন ঋণ, ঘাটতি ও অচলাবস্থা কেবল অর্থনীতির নয় তা পরিণত হয় নৈতিক পতনের প্রতীকেও। 

তবু সম্ভাবনার দরজা একেবারে বন্ধ নয়। পাকিস্তান যদি রাজনৈতিক সাহস ও প্রজ্ঞা দিয়ে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে পারে, তবে সে আবারও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারে। কারণ ইতিহাস বলে ‘যে জাতি নিজের ভুল স্বীকার করতে জানে, তার পুনর্জন্ম অনিবার্য’। 

 

 

আয়শা/০৯ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৫৫

▎সর্বশেষ

ad