ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

দুনিয়ার জীবন বনাম পরকালের সত্য

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৯:২১:৩৫ পিএম

ডেস্ক নিউজ : মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

এই সূরার ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বড় জালেম বা অন্যায়কারী কারা, তাদের পার্থিব জীবনের বাস্তবতা এবং মৃত্যুর মুহূর্তে তাদের চূড়ান্ত অসহায়ত্বের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যা প্রত্যেক চিন্তাশীল মানুষের জন্য এক গভীর শিক্ষা।
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ أُولَـٰئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ الْكِتَابِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوا أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالُوا ضَلُّوا عَنَّا وَشَهِدُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ অনুবাদ: সুতরাং (বল), তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে? এরূপ লোকদের ভাগ্যে (রিযিকের) যতটুকু অংশ লেখা আছে, তা তাদের নিকট (দুনিয়ার জীবনে) পৌঁছবেই।
অবশেষে যখন আমার প্রেরিত ফিরিশতাগণ তাদের রূহ কবজ করার জন্য তাদের নিকট আসবে তখন তারা বলবে, তারা কোথায়, আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে তোমরা ডাকতে?” তারা বলবে, “তারা আমাদের থেকে অন্তর্হিত হয়েছে। এবং তারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, আমরা কাফের ছিলাম।
সবচেয়ে বড় জুলুম

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুইটি কাজকে সবচেয়ে বড় জুলুম বা অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, তিনি যা বলেননি তা তার নামে চালিয়ে দেওয়া অথবা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানানো। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করা। যে ব্যক্তি এই দুটি কাজ করে, সে কেবল আল্লাহর সাথেই নয়, বরং নিজের আত্মার সাথেও চরম অন্যায় করে।
পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষা, পুরস্কার নয়

আয়াতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, কাফের বা আল্লাহর আয়াত অস্বীকারকারীদেরও দুনিয়াতে তাদের জন্য নির্ধারিত রিযিক বা জীবিকা পৌঁছানো হয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় রিযিক দেওয়ার ক্ষেত্রে মুমিন ও কাফেরের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না। এটি একটি বড় পরীক্ষা। দুনিয়ায় কারও প্রাচুর্য বা সফলতা দেখে এটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই, আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট। বরং এই প্রাচুর্য তার জন্য পরীক্ষা হতে পারে, যা তাকে আল্লাহর অবাধ্যতায় আরও ডুবিয়ে দেয়। প্রকৃত সত্য মৃত্যুর সময়ই উন্মোচিত হয়।
মৃত্যুর সময়কার কথোপকথন ও চূড়ান্ত স্বীকারোক্তি

আয়াতের শেষাংশে মৃত্যুর ভয়াবহ মুহূর্তের চিত্র আঁকা হয়েছে। যখন আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতারা অবাধ্য ব্যক্তির আত্মা নিতে আসেন, তখন তাদের দুনিয়ার অহংকার চূর্ণ হয়ে যায়। ফিরিশতারা তাদের উপহাস করে জিজ্ঞেস করেন, 

আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে, তারা আজ কোথায়?” সেই কঠিন মুহূর্তে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, তাদের সেই উপাস্যরা উধাও হয়ে গেছে এবং কোনো কাজেই আসছে না। পরিশেষে, তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা কাফের বা অবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু সেই স্বীকারোক্তি তাদের কোনো উপকারে আসে না।

দুনিয়ার জীবন মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফেরের জন্য জান্নাতস্বরূপ।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত। (সহিহ মুসলিম: ২৯৫৬) এই হাদিসটি আয়াতের এই শিক্ষাকেই সমর্থন করে যে, দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়। কাফেররা এখানে সাময়িক আনন্দ থাকলেও মুমিন পরকালের তুলনায় দুনিয়াকে কারাগারের মতোই মনে করে।

সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো শিরক
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি: ৪৪৭৭)

এই হাদিসটি আয়াতের প্রথম অংশের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপকে সবচেয়ে বড় জুলুম বলা হয়েছে। শিরক হলো আল্লাহর ওপর সবচেয়ে বড় মিথ্যা আরোপ।
সুরা আল-আরাফের এই আয়াতটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, পার্থিব জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা আল্লাহর সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির মাপকাঠি নয়।
এটি কেবলই একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। সবচেয়ে বড় অন্যায়কারী হলো তারা, যারা আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ ও তার প্রেরিত বিধানকে অস্বীকার করে। মৃত্যুর মুহূর্তে যখন সকল মিথ্যা উপাস্য হারিয়ে যাবে এবং সত্য প্রকাশিত হবে, তখন তাদের আফসোস করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। সুতরাং, দুনিয়ার চাকচিক্য দ্বারা প্রতারিত না হয়ে আমাদের উচিত আল্লাহর আয়াতকে আঁকড়ে ধরা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।

 

 

আয়শা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ৯:১৯

▎সর্বশেষ

ad