দাবদাহ ইউরোপের নীরব ঘাতক

Anima Rakhi | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ - ০৬:১৫:৩১ পিএম

ডেস্ক নিউজ : তীব্র তাপপ্রবাহ যখন ইউরোপজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মাত্র ১২টি বড় শহরে এই তাপপ্রবাহে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৩০০ জনের।

এই তথ্য এসেছে তাপপ্রবাহের এক সপ্তাহের মধ্যেই, যা সচরাচর দেখা যায় না। ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফ্রিডেরিকে অটো বলেন, এটা একটি সতর্ক সংকেত, যাতে আরও মৃত্যু এড়ানো যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মে ইউরোপে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান তাপদাহে। কিন্তু তাপের এই ‘নীরব হত্যাকাণ্ড’ জনসচেতনতা তৈরি করতে পারে না। কারণ মৃত্যু ঘটে ধীরে ধীরে, এবং প্রমাণ করতে সময় লাগে অনেক।

এবার বিজ্ঞানীরা একটি ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। তারা শুধু তাপমাত্রার পরিবর্তন নয় বরং এর ফলে কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন এতে কতটা দায়ী, সেই প্রশ্নে আলোকপাত করেছেন।

ড. অটো বলেন, মানুষ ভাবে ৩০ ডিগ্রি হলে কী হবে, ২৭ তো হয়েই থাকে! কিন্তু আমাদের জানা আছে—এই সামান্য পার্থক্যই জীবন-মৃত্যুর ফারাক গড়ে দিতে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা ২৩ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ১২টি ইউরোপীয় শহরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এই তাপপ্রবাহে অতিরিক্ত ২৩০০ জন মানুষ মারা গেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ মৃত্যু ঘটত না যদি মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন না থাকত।

এখনো পর্যন্ত গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ অর্থাৎ পর্যালোচনার ধাপ অতিক্রম করেনি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময়মতো সতর্কতা পৌঁছানোই আসল উদ্দেশ্য।

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ র‌্যাচেল নুনেস বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব তথ্য দেওয়াই এখন জরুরি, যাতে নীতিনির্ধারকরা প্রস্তুতি নিতে পারেন।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এর ভিত্তি ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলও এই মডেল অনুসরণ করে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের গুজরাটে প্রথম হিট অ্যাকশন প্ল্যানে কাজ করা স্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অভিয়ন্ত তিওয়ারি বলেন, এই ধরণের গবেষণা ভবিষ্যতে আরও বেশি হবে বলে আমি আশাবাদী।

ইতিমধ্যে তুরস্ক, গ্রিস ও বুলগেরিয়ায় নতুন তাপপ্রবাহ এবং দাবানল দেখা দিয়েছে। স্পেন ও পর্তুগালে পৌঁছেছে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ড. অটো বলেন, আমরা যদি গ্রীষ্ম শেষে এই গবেষণা প্রকাশ করতাম, তখন কেউ তাপপ্রবাহ নিয়ে ভাবত না। তাই এখনই সতর্ক হওয়া দরকার।

বিশ্বব্যাপী যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে, তখন এই ‘নীরব ঘাতক’ সম্পর্কে সময়মতো জানা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হতে পারে হাজারো প্রাণ বাঁচানোর চাবিকাঠি।

সূত্র: এএফপি

কুইকটিভি/অনিমা/৩১ জুলাই ২০২৫/সন্ধ্যা ৬:১৫

▎সর্বশেষ

ad