ব্রেকিং নিউজ
চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু

যুদ্ধ নয় শান্তি, সংঘাত নয় সন্ধি

Anima Rakhi | আপডেট: ১১ মে ২০২৫ - ০৬:২৫:২২ এএম

ডেস্ক নিউজ : ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক পর্যন্ত ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। একজন মুসলিম শুধু তার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের প্রতিই নয়, তার প্রতিবেশীর প্রতিও দায়বদ্ধ। এই প্রতিবেশী হতে পারে একজন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা একটি রাষ্ট্র।

যখন প্রতিবেশীদের মধ্যে মতানৈক্য, সংঘাত বা যুদ্ধ শুরু হয়—তখন ইসলাম এর ন্যায়সংগত সমাধানে স্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করে।

যুদ্ধ নয় শান্তি, সংঘাত নয় সন্ধি—এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নীতি।

বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বহুকাল ধরে জড়িয়ে আছে সংঘাত ও প্রতিযোগিতায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধা, আবেগ ও মতানৈক্য।

কারণ একদিকে পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ, যা আমাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় অনুভূতির অংশ। অন্যদিকে ভারত ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবেশী, সেখানেও বিপুলসংখ্যক মুসলিম আছে। এই জটিল বাস্তবতায় একজন সচেতন বাংলাদেশি মুসলিমের করণীয় নিচে আলোচনা করা হলো—
ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে শান্তি, ন্যায় ও সহনশীলতা

ইসলাম যুদ্ধপ্রিয় নয়; বরং ইসলামের মূল লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। কোরআনে বলা হয়েছে : ‘আর যদি তারা শান্তির দিকে ঝোঁকে, তবে তুমিও তার দিকে ঝুঁকে পড়ো এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।’ (সুরা আল-আনফাল, আয়াত : ৬১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও যুদ্ধের চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। হুদাইবিয়ার চুক্তি তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একজন বাংলাদেশি মুসলমানের দায়িত্ব হওয়া উচিত শান্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং আবেগময় পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত থাকা। অতএব, যুদ্ধকে সমর্থন করা নয়, বরং শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করাই হবে ইসলামী অবস্থান। এ ক্ষেত্রে একজন বাংলাদেশি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে শান্তির জন্য দোয়া ও চেষ্টা করা, উসকানিমূলক বক্তব্য বা মতাদর্শ থেকে বিরত থাকা, মিডিয়ার ভুল ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা এড়িয়ে চলা।

ধর্মীয় অনুভূতি ও ভৌগোলিক সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা

‌পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ভ্রাতৃত্বের দাবি রাখে। তবে সেই ভ্রাতৃত্ব হতে হবে ইনসাফপূর্ণ আবেগময় সমর্থনে নয়। কারণ যুদ্ধে মাজলুম হলেও মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনি যদি কখনো পাকিস্তান জুলুম করে সে ক্ষেত্রেও তাকে থামানোই নবীর শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভাই যদি জুলুম করে, তবে তাকে থামানোই তোমার পক্ষ থেকে সাহায্য।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৪)

অর্থাৎ মুসলিম ভাই হলেও যদি তারা অন্যায় করে, সেটাকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়; বরং থামানোই প্রকৃত সহানুভূতি।

‌ভারত অমুসলিম দেশ হলেও আমাদের প্রতিবেশী। আর ইসলাম অমুসলিম প্রতিবেশীকেও সদাচরণের হকদার হিসেবে দেখেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয় প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী এবং তোমাদের সাথি… সবার সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬) 

এই আয়াত নির্দেশ করে, ধর্ম ভিন্ন হলেও প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব শেষ হয় না। সেই সঙ্গে আমাদের এ কথাও ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই যে ভারত অমুসলিম রাষ্ট্র হলেও সমগ্র ভারতে গোটা পাকিস্তান থেকেও বেশিসংখ্যক মুসলিম বসবাস করে। সুতরাং যুদ্ধ হলে ভারতের অন্য সব নাগরিকের মতো ভারতীয় মুসলিমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর এই ভারতীয় মুসলিমদের প্রতিও আমাদের ভ্রাতৃত্বের দায় ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি দুই দেশের সংঘর্ষ চরম পর্যায়ে পৌঁছালে আমাদের দেশও বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আবেগ নয়, প্রজ্ঞা দরকার

বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল। একদিকে ভারতের সঙ্গে তিন দিক ঘেরা সীমান্ত আর গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক। এই দুই বাস্তবতার মাঝে হঠকারী আবেগ নয়, কূটনৈতিক ভারসাম্য ও ইনসাফপূর্ণ অবস্থানই হওয়া উচিত বাংলাদেশের একমাত্র পথনির্দেশক।

আমাদের করণীয়

১. শান্তি-ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান : উসকানিমূলক মত বা বক্তব্য থেকে বিরত থেকে সব পক্ষকে শান্তির বর্তা দেওয়া। মুসলিম হোক বা অমুসলিম—যেই অন্যায় করুক, তার বিরুদ্ধেই অবস্থান নেওয়া।

৩. মানবিক সহানুভূতি : যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নিরপরাধ মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়ানো।

৪. ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার : পরিবার, সমাজ ও অনলাইন মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামী চিন্তা ছড়িয়ে দেওয়া। সকল প্রকার উসকানি ও অবান্তর মিডিয়ার হটকারী সংবাদ প্রচার থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

ন্যায়ের দৃষ্টিতে অবস্থান নির্ধারণ

পাক-ভারত যুদ্ধ আমাদের সরাসরি যুদ্ধ না হলেও আমাদের চিন্তা-চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলে। একে নিছক ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ভেবে আবেগতাড়িত অবস্থান গ্রহণ নয়; বরং ইসলামী ন্যায়ের মানদণ্ডে দাঁড়িয়ে বিবেক, বুদ্ধি ও মানবিকতার ভিত্তিতে অবস্থান নেওয়া আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, ইসলাম বলে— ‘তোমরা ইনসাফ করবে—এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি।’ (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮)

একজন বাংলাদেশি মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব—পক্ষপাত নয়, ইনসাফ।

লেখক :  প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস

কিউটিভি/অনিমা/১১ মে ২০২৫, /সকাল ৬:২৫

▎সর্বশেষ

ad