
ডেস্ক নিউজ : মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
পুরুষদের জন্য সোনা পরা ইসলামে স্পষ্টভাবে হারাম। এটি শুধু কোরআনের ব্যাখ্যাই নয়, বরং বহু সহিহ হাদিসে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে এসেছে। হজরত আলী (রা.) বলেন,
রসুলুল্লাহ (সা.) আমার ডান হাতে সোনার আংটি পরা দেখে তা খুলে ফেলে দেন এবং বলেন, ‘পুরুষের জন্য এটি নিষিদ্ধ।’ চার ইমামসহ ইসলামের প্রধান মাজহাবগুলোও পুরুষদের জন্য সোনা পরার অনুমতি দেননি। অন্যদিকে, রুপার আংটি পরা ইসলামে বৈধ, এমনকি এটি নবী করিম (সা.)-এর সুন্নত। রসুলুল্লাহ (সা.) একটি রুপার আংটি পরতেন, যাতে মুহাম্মাদ রসুলুল্লাহ খোদাই করা ছিল। সাহাবারাও এ আমল অনুসরণ করতেন। তাই আজও অনেক মুসলিম পুরুষ রুপার আংটি পছন্দ করেন।
পুরুষের গলায় চেইন, কানে দুল, হাতে ব্রেসলেট বা পায়ে পায়েল পরা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ এসব অলংকার নারীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করে, সে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত। নারীর সাজসজ্জা অনুকরণ পুরুষদের জন্য হারাম বলে গণ্য করা হয়। ফলে এ ধরনের অলংকার পরা ইসলামের দৃষ্টিতে অনুচিত ও নিষিদ্ধ।
অনেক সময় গয়নায় আল্লাহর নাম বা কোরআনের আয়াত খোদাই করা দেখা যায়। এগুলোর ব্যবহারেও সতর্কতা জরুরি। টয়লেটে প্রবেশ, অপবিত্র অবস্থায় থাকা কিংবা অবহেলায় রাখা, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর নাম অমর্যাদার শিকার হতে পারে। তাই এমন গয়না ব্যবহার করা উচিত নয়। ইসলামে অলংকার ব্যবহার করা যেতে পারে শুধুমাত্র পছন্দ বা শালীন সৌন্দর্যবোধের কারণে। তবে তা যেন অহংকার, আত্মপ্রদর্শন বা মানুষকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে না হয়। অনেকেই গয়নাকে তাবিজের মতো নিরাপত্তা বা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। এটি বিশ্বাস করা শিরকের কাছাকাছি এবং তাওহীদের পরিপন্থী।
ইসলাম পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম করলেও শর্তসাপেক্ষে রুপা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। রুপা ব্যবহারের প্রধান শর্তটি হলো- রূপার পরিমাণ এক মিসকালের চেয়ে কম অর্থাৎ সাড়ে চার মাশার চেয়ে কম হতে হবে। গ্রামের হিসাবে এক মিসকালের পরিমাণ হলো ৪.৩৭৪ গ্রাম। (ফতোয়ায়ে কাজি খান: ৩/৪১৩) এক ব্যক্তি পিতলের আংটি পরে নবী (স.) এর নিকট আসলে তিনি তাকে বলেন, ব্যাপার কি, আমি তোমার থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? এ কথা শুনে সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দেয়।
এরপর সে একটি লোহার আংটি পরে আসলে, তিনি তাকে বলেন, আমি তোমাকে জাহান্নামিদের অলংকার পরা অবস্থায় দেখছি! তখন সে তা খুলে ফেলে দেয় এবং বলে- ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি কী ধরনের আংটি ব্যবহার করবো? তিনি (সা.) বলেন, এক মিসকাল (৪.৩৭৪ গ্রাম) ওজনের কম রুপা দিয়ে আংটি তৈরি করে তা ব্যবহার করো। (আবু দাউদ: ৪২২৩ তিরমিজি: ১৭৮৫ নাসায়ি: ৫১৯৫) বিয়ের আংটি নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধা থাকে। কেউ কেউ ভাবেন এটি কি বিদআত? ইসলামি দৃষ্টিতে যদি কেউ বিয়ের আংটিকে ফরজ বা ইসলামের আবশ্যিক অংশ মনে করে, তাহলে সেটি বিদআত হবে।
তবে কেবল দাম্পত্য প্রতীক বা সাংস্কৃতিক রীতি হিসেবে এটি ব্যবহার করলে তা বিদআত নয়। বরং অনেক ইসলামি স্কলার এ ধরনের প্রতীকী আংটিকে উৎসাহিত করেছেন—যতক্ষণ না তা অতিরঞ্জিত বিশ্বাস বা অহংকারের কারণ হয়। পুরুষের জন্য সোনা পরা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। রুপার আংটি বৈধ, নবীজির সুন্নতও বটে। অন্যদিকে, নারীসুলভ অলংকার পুরুষদের জন্য পরিহারযোগ্য। গয়না ব্যবহার যেমন হতে হবে বিনয় ও শালীনতার মধ্যে, তেমনি আকিদাহর সঠিক অবস্থান রক্ষা করাও অপরিহার্য।
কিউটিভি/আয়শা/০৬ মে ২০২৫, /বিকাল ৫০:২০