ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু কুড়িগ্রামে নবগঠিত জেলা বিএনপির আহবায়কের বিরুদ্ধে মশাল মিছিল

বন্ধু মাস্কই এখন বড় শত্রু ট্রাম্পের

Ayesha Siddika | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ - ১১:৩৪:৩৫ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েকদিন আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আতিথেয়তায় ছিলেন বিশ্বসেরা ধনকুবের টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক। মার-এ-লাগোর রাজকীয় ডাইনিং টেবিলে বসে একসঙ্গে করেছেন নৈশভোজ। আলোচনায় এসেছে রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে পারিবারিক গল্পও। একসময় ট্রাম্পের ‘সরকারি ব্যয় হ্রাস’ অভিযানে মাস্ক ছিলেন ঘরের ছেলে। বিশ্বাসভাজন দক্ষতার দূত। ট্রাম্পের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ৪ মাস। অথচ হঠাৎ করেই বদলে গেল সম্পর্কের সমীকরণ। গলায় গলায় বন্ধুত্ব ছেড়ে এবার সম্মুখ সমরে নেমেছেন তারা। ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নিয়েই বেঁধেছে দ্বন্দ্ব।

ট্রাম্প বলছেন, এই বিল কর ও ব্যয় সংকোচন ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের আত্মনির্ভরতা গড়ে তুলবে। অন্যদিকে, মাস্ক বলছেন, এ বিল অর্থনীতির গায়ে নতুন ঋণের দাগ বসাতে চলেছে। মাস্ক শুধু সমালোচনাই করেননি বরং, সিনেটরদের ধমকি দিয়ে বলেছেন, এই বিল পাশ হলে পর দিনই তিনি গঠন করবেন নতুন রাজনৈতিক দল- ‘আমেরিকান পার্টি’। অর্থাৎ দিন শেষে, বন্ধু মাস্কই হয়ে উঠলেন বড় শত্রু। ট্রাম্পও অবশ্য থেমে থাকেননি। কটাক্ষ করেন মাস্ককে বলেছেন, ‘ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি খাওয়া ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক! তার পুরো ব্যবসা দাঁড়িয়ে আছে করদাতাদের পয়সায়। ভর্তুকি বন্ধ হলে ওকে টেসলা ফ্যাক্টরি নয়, লাগেজ গুছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হবে।’ বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতার এই দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মার্কিন রাজনীতি। এএফপি, সিএনএন, আলজাজিরা, সিবিএস।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময় সোমবার) ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাজেট বিল নিয়ে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে চলেছে এ ‘ভোট-এ-রামা’। সিনেটররা একের পর এক ভোটে অংশ নেন।  ফলাফল কবে নাগাদ হতে পারে তা এখনো নিশ্চিত করেনি দেশটি। তবে ট্রাম্প ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বিলটিতে স্বাক্ষর করে সেটিকে আইনে পরিণত করতে চান। আর এই নিয়েই মূলত রেষারেষি। একের পর এক তোপ ছাড়ছেন ইলন। ট্রাম্প প্রশাসনের পদ ছাড়ার সময় (৩০ মে) নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও সোমবার আবারও রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠেন মাস্ক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই মার্কিন ধনকুবের লিখেছেন, ‘যেসব কংগ্রেস সদস্য সরকারের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, আর পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের উচিত লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকা। আর আমি যদি এই পৃথিবীতে আমার শেষ কাজ হিসাবেও কিছু করি তাহলেও নিশ্চিত করব যে, তারা যেন পরবর্তী নির্বাচনে প্রাথমিক বাছাইয়েই হেরে যান।’ এর কিছুক্ষণ পরে মাস্ক আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিল’ সিনেটে পাস হলে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামের নতুন দল গঠন করবেন তিনি। মাস্কের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান মিলিয়ে একদলীয় শাসন চলছে। দেশটিতে এমন একটা নতুন রাজনৈতিক দল দরকার, যেখানে সাধারণ মানুষের সত্যিকারের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে।

মাস্ক আরও বলেছেন, ‘এই বিলের আওতায় পাগলাটে খরচের কারণে ঋণের পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এতেই স্পষ্ট হয় যে আমরা এখন একটা ‘একদলীয়’ দেশে বসবাস করছি। যেটাকে বলা যায় ‘পর্কি পিগ পার্টি!’ যেখানে জনগণের প্রকৃত কোনো কণ্ঠ নেই। এখন এমন একটা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার সময় এসেছে, যারা সত্যিকারভাবেই মানুষের কথা ভাববে।’মাস্ক দাবি করেছেন, বিলটি দেশের ঋণ বাড়িয়ে দেবে, সবুজ জ্বালানি প্রকল্প ব্যাহত করবে এবং অতীতের শিল্পগুলোকে সুবিধা দেবে। যেগুলো ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। মাস্কের এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময়ে এল যখন মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের এই বিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই বিল নিয়ে মাস্কের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন বেশ তিক্ত।

পালটা গলা ছেড়েছেন ট্রাম্পও। মঙ্গলবার (সিনেটের বাজেট ভোটাভুটির মধ্যেই) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ইলনের ‘ফুলেফেঁপে কলাগাছ’ হয়ে ওঠার গোমড় ফাঁস করেন। বলেন, ‘ইলন যে পরিমাণ সরকারি ভর্তুকি নিচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কেউ কখনও এত পরিমাণ ভর্তুকি পায়নি। সব ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে তাকে ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হবে।’ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, মাস্কের ব্যবসায় নজর দেওয়ার জন্য ডজকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি আরও লেখেন, ‘আর কোনো রকেট উৎক্ষেপণ, স্যাটেলাইট বা ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন নয়। এতে আমাদের দেশের বিরাট অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে। হয়তো ডজকে বলা উচিত, এগুলো নিয়ে ভালো করে তদন্ত করুক। প্রচুর অর্থ বাঁচানো যাবে।’ জবাবে আবার মাস্ক বলেছেন, ‘সব ভর্তুকিই তুলে নিন। এখনই বন্ধ করুন।’

প্রসঙ্গত, বিলটিতে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের কর ছাড়গুলো স্থায়ী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ‘অবৈধ’ অভিবাসী ফেরতের কর্মসূচিতে অর্থায়নের কথাও বলা হয়েছে। তবে এর সমালোচকরা বলছেন, এটি দেশের ঋণ কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বাড়াবে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করতে বাধ্য করবে। গত বছর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের পক্ষে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছেন মাস্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের নথি অনুযায়ী, ইলন মাস্কের রাজনৈতিক কার্যনির্বাহী কমিটি ‘আমেরিকা পিএসি’ সর্বশেষ মার্চ মাসে ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত দুটি বিশেষ নির্বাচনের জন্য অর্থ দিয়েছে। র‌্যান্ডি ফাইন ও জিমি পেট্রোনিস নামের দুই রিপাবলিকান প্রার্থী ওই অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। যা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নীতি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় বসার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প তার ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিলকে’ নিজের রাজনৈতিক জীবনের বড় সাফল্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। বিলটি পাস হলে তার প্রথম মেয়াদে দেওয়া কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়বে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তাও জোরদার হবে। তবে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রিপাবলিকানদের মধ্যেই এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কারণ, বিলটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ বেড়ে যাবে এবং লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

 

কিউটিভি/আয়শা//০১ জুলাই ২০২৫,/রাত ১১:৩০

▎সর্বশেষ

ad