কোরআন হাদিসের আলোকে নিয়তের পরিচয় ও তাৎপর্য

Ayesha Siddika | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ - ০৭:২৬:১৯ পিএম

ডেস্ক নিউজ : মুফতি জাকারিয়া হারুন

কোরআনে নিয়তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ বা ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা সঠিক নিয়তের সাথে করতে হয়। নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত পূর্ণাঙ্গ হয় না, কারণ ইবাদতের মূল শর্তই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইচ্ছা।বান্দা তার প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا أُمِرُوا إلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ অর্থ: তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে। (সুরা বাইয়্যিনাহ: ৫)

মহান আল্লাহ আরও বলেন-

وَمَا لأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى* إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الأَعْلَى অর্থ: এবং তার উপর কারও এমন কোনো অনুগ্রহ নেই, যার বিনিময় প্রদান করা হচ্ছে; বরং তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই। (সুরা লাইল: ১৯-২০)

মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لاَ نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُورًا অর্থ: তারা বলে আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে আহার প্রদান করি। তোমাদের পক্ষ হতে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সুরা ইনসান: ৯)

মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ অর্থ: যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। আর পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না। (সুরা শুরা: ২০)

হাদিসের আলোকে নিয়তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

হাদিসে নিয়তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে, নিম্নলিখিত হাদিসটি নিয়তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ–

أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ
অর্থ: হজরত আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি আমি আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে। (বুখারি: ০১; মুসলিম: ১৯০৭)
এই হাদিসটি স্পষ্ট করে দেয় যে, কোনো কাজ বা আমল করার পেছনে নিয়ত যদি সৎ না হয় তবে সেই আমল মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

হাদিসের ব্যাখ্যা

উক্ত হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় নিয়তের উপর ভিত্তি করে। যদি একজন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন, তাহলে তিনি তার প্রতিদান পাবেন। তবে যদি কারও নিয়ত ভিন্ন কিছু হয়, যেমন দুনিয়াবি স্বার্থ বা খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে হয়, তবে তার সেই কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। নিয়তের তাৎপর্য ইবাদতের শুদ্ধতা নির্ভর করে নিয়তের উপর: নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত, যেমন নামাজ, রোজা, হজ বা দানখয়রাত ইত্যাদি কার্যকর হয় না। কারণ ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

নিয়ত মানুষের মনের অবস্থা প্রকাশ করে: মানুষ বাহ্যিকভাবে যা করে, তা নিয়তের উপর নির্ভর করে। আল্লাহ তা’আলা শুধু বাহ্যিক কাজ দেখেন না, মানুষের অন্তর ও নিয়তও বিচার করেন। নিয়তের মাধ্যমে সাধারণ কাজও ইবাদতে পরিণত হয়: সঠিক নিয়তের সাথে যদি কোনো কাজ করা হয়, তবে সাধারণ কাজও ইবাদতে পরিণত হতে পারে। যেমন, পরিবারের জন্য রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়, তবে তা ইবাদতের মর্যাদা পায়।

 

 

কিউটিভি/আয়শা/১২ অক্টোবর ২০২৪,/সন্ধা ৭:২৫

▎সর্বশেষ

ad