ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

অর্থনীতিতে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা যেমন ছিল

Ayesha Siddika | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ - ১১:০২:০৩ পিএম

ডেস্ক নিউজ : মানব ইতিহাসে ইবনে খালদুনের অনন্য স্থান আছে। তিনি ইতিহাসবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদ (Sociologist) ছিলেন। জ্ঞানের অন্য ক্ষেত্রেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান (Sociology)  দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা অত্যন্ত প্রভাবশালী, যা তাঁর দর্শনের বিস্তৃতি এবং তাঁর যুগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে পূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বিখ্যাত অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ জে জে স্পেংলার  (J.J Spengler) Zuvi eB ‘Economic Thoughts of Islam’-এ তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন যে ইবনে খালদুন নিঃসন্দেহে একজন মহান অর্থনীতিবিদ এবং ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তাধারার সর্বোত্তম প্রবক্তা ছিলেন। (খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৬৮)

অ্যাডাম স্মিথের  (Adam Smith)  বহু আগে ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন’ গ্রন্থে লিখেছেন যে সম্পদের একমাত্র উৎস হলো উৎপাদন। একটি দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে তার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। (আল মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠা-২৭২)

 

তিনি ভাগ্যের প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন না এবং দারিদ্র্য দূর করার জন্য উৎপাদনশীল কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রম বিভাজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং এ বিষয়ে তিনি ‘মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

যখন একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় মানুষের কার্যক্রম শামিল হবে, তখন এর মজুরি বা লাভ নির্ধারিত হয় তার শ্রমের উৎপাদনশীলতার (মূল্য) ওপর ভিত্তি করে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যত বেশি শ্রম বৃদ্ধি হবে, মজুরি তত বেশি হবে। তবে মজুরিতে সমতা সম্ভব নয়। (আল মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠা-২৭৫)

ইবনে খালদুন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে জোগান ও চাহিদায় বিশ্বাস করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইবনে খালদুন স্বর্ণ ও রৌপ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতেন না, এগুলোকে শুধু ধাতু হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তাঁর মতে, সম্পদ শুধু উৎপাদন।

ইবনে খালদুন লাভবর্ধককে অর্থনৈতিকের একমাত্র ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং তাঁর সমগ্র অর্থনৈতিক দর্শন এটিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি আয়ের  (Tax)  ন্যূনতম স্তরে বিশ্বাস করেন, তবে উচ্চ করকে লাভবর্ধক এবং উৎপাদনশীলতার ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁর দৃষ্টিতে একটি সুস্থ অর্থনীতি হলো, যেখানে ব্যবসা মুনাফা অর্জন করবে এবং লাভবর্ধক অর্থনৈতিক কার্যক্রম অগ্রগামী করবে।

ইবনে খালদুন অবকাঠামো নির্মাণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন প্রকল্পকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করেন। তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ধ্বংস করে দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা ও রাষ্ট্রের আলোচনায় তিনি রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় ক্রেতা মনে করেন এবং বলেন যে সরকার যত বেশি ক্রয় করবে উৎপাদন প্রক্রিয়া তত বৃদ্ধি হবে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তত বাড়বে। তাঁর মতে, সরকার কেনাকাটা বন্ধ করে দিলে অর্থনীতিতে সংকট দেখা দেবে।

রাষ্ট্র সম্পর্কে পশ্চিমা চিন্তাবিদদের মতো ইবনে খালদুনেরও একটি সংশয় আছে, জাতির উত্থান-পতনের আলোচনায় তিনি রাষ্ট্রীয় করকে (Tax)  পতনের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন এবং লিখেছেন যে রাষ্ট্র তার নিজস্ব ব্যয়ের জন্য কর আরোপ করে থাকে। কেননা কর যত বেশি হবে, ব্যয়ও তত বেশি হবে। আর এভাবেই সরকারের মধ্যে বেশি ধন-সম্পদ সংগ্রহ ও উচ্চ করের সাহায্যে অধিক ব্যয় করার লোভ দেখা দেয়। সে জন্যই তাদের কর বৃদ্ধির প্রণোদনা আছে।

যদি কর কম হয় এবং ব্যাবসায়িক কর্মপদ্ধতিতে মুনাফা বেশি হয়, তাহলে অর্থনীতির উন্নতি হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সরকারকে সার্বিকভাবে বেশি কর  (Tax) দেবে, যা উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি করবে। এভাবেই বেশি উৎপাদন আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে, এটিই উন্নতির একমাত্র উপায়।

অধঃপতনের পথ হলো রাষ্ট্র যদি তাড়াহুড়া বা লোভ বা অন্য কোনো কারণে কর (Tax) বাড়ায়। কর বৃদ্ধির ফলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে মুনাফা কমে যায়। মুনাফা হ্রাসের ফলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম হ্রাস পায়, ব্যাবসায়িক কার্যক্রম হ্রাসের ফলে আয়ের (Tax) পরিমাণ হ্রাস পায়।

সুতরাং এ ধরনের ব্যবসায় লোকসান আছে। ফলে রাষ্ট্র অন্যান্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে উচ্ছেদ করে দেয় এবং নিজস্ব একচেটিয়া প্রতিষ্ঠান দাঁড় করায়। এতে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম আরো ব্যাহত হয় এবং সরকারি কর আরো হ্রাস পায়। এভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ আরো দরিদ্র থেকে দরিদ্র হয় এবং জাতি অধঃপতনের কবলে পড়ে। সেখান থেকে তাদের একমাত্র মুক্তির পথ হলো কর হ্রাস করা, ব্যবসার সুযোগ প্রসারিত করা, উৎপাদনশীলতা ত্বরান্বিত করা এবং সরকারের উচিত যুক্তিসংগত কর ও ব্যয়ের মাধ্যমে চাহিদা বৃদ্ধি করা। আর দেশে শতভাগ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা।

তথ্যঋণ

মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন/আল্লামা ইবনে খালদুন

The Economic Thought of Ibn Khaldun/Mohammad Abdul Qadir  

Economic Thoughts of Islam: Ibn Khaldun/J.J Spengler

Ibn Khaldun’s Analysis of Economic Issues/Charles Issawi

 

 

কিউটিভি/আয়শা/০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ১০:৫৫

▎সর্বশেষ

ad