ডেস্ক নিউজ : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের সময় ঘনিয়ে আসবে তখন মুমিনের স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তবায়িত থাকবে। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আর নবুয়তের কোনো কিছুই অসত্য হতে পারে না।’
বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ কথা বলা হয় যে, স্বপ্ন তিন প্রকার, মনের কল্পনা, শয়তানের তরফ থেকে ভয় দেখানো এবং আল্লাহর তরফ হতে সুসংবাদ। তাই যদি কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখে তবে সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। বরং উঠে যেন (নফল) নামাজ আদায় করে নেয়।’
বর্ণনাকারী আরও বলেন, ‘স্বপ্নে শিকল দেখা অপছন্দনীয় মনে করা হত এবং পায়ে বেড়ি দেখাকে তারা পছন্দ করতেন। কেননা, স্বপ্নে পায়ে বেড়ি দেখার ব্যাখ্যায় দীনের ওপর অবিচল থাকা বলা হতো।’ (বুখারি ৭০১৭)
স্বপ্নের প্রকারভেদ
নবীগণ আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে আসা স্বপ্ন দেখেছেন। আল্লাহ তাদের স্বপ্নকে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন। কল্পনা থেকেও আল্লাহ তাদের স্বপ্নকে রক্ষা করেছেন। নবীদের স্বপ্ন তাই অহি হিসেবে গণ্য করা হয়। যেমন হজরত ইবরাহীম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে স্বপ্ন সাধারণ মুসলমানগণও দেখতে পারেন। একজন মুসলমান আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস যত দৃঢ় হবে তার স্বপ্ন ততটাই বাস্তবায়িত হবে।
কল্পনা থেকে উদ্ভূত স্বপ্নকে বলা হয় হাদিসুন নাফস। ধরা যাক, ঢাকা শহরের আপনি একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে চান। এ নিয়ে সব সময় আপনি ভাবছেন। স্বপ্ন দেখলেন, আপনি একটি ফ্ল্যাটে বাস করছেন। এটা আপনার কল্পনা থেকে উদ্ভূত স্বপ্ন।
শয়তানের পক্ষ থেকে যে স্বপ্ন আসে তা আসলে দুঃস্বপ্ন। আরবিতে একে বলা হয় আল হুলম। আল হুলম মানে অশুভ স্বপ্ন। এ ধরনের স্বপ্ন দেখার পর মনে ভয় বা আতঙ্কের জন্ম হয়। এ ধরনের স্বপ্নের মাধ্যমে শয়তান অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এ ধরনের স্বপ্ন নিয়ে পড়ে থাকা ঠিক নয়।
স্বপ্ন দেখলে করণীয়
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন কেউ এমন কোনো স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তবে মনে করবে যে তা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এজন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে।
আর যখন এর বিপরীত কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, মনে করবে তা শয়তানের তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনও ক্ষতি করবে না। (বুখারি ৭০৪৫)
কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে এ কাজগুলো করবেএক. এই স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়বে। (মুসলিম ২২৬২)
এ ক্ষেত্রে এই দোয়াও পড়া যায়: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিন শাররি হাজিহির রুইয়া।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এই স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ চাই।
দুই. বাঁদিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম ২২৬১)
তিন. যে কাতে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে, তা পরিবর্তন করে অন্য কাতে শুতে হবে। (মুসলিম ২২৬২)। অবস্থা বদলে দেয়ার ইঙ্গিতস্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে।
চার. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না। (বুখারি ৬৫৮৩)
পাঁচ. স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। (মুসলিম ২২৬৩)
কিউটিভি/আয়শা/৩১ অগাস্ট ২০২৪,/রাত ৮:১২