ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

নবীজি (সা.)-এর জুমার খুতবা যেমন ছিল

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ - ১২:৪৭:৫৭ পিএম

ডেস্ক নিউজ : নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জুমার দিন খুতবা চলা অবস্থায় যদি তোমার পাশের জনকে বলো, ‘চুপ করো’ তাহলে তুমিও একটি অনর্থক কাজ করলে।’ (বুখারি: ৯৩৪) আরেক হাদিসে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে জুমার জন্য মসজিদে এলো, তারপর চুপ থেকে খুতবা শুনলো তার দশ দিনের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে নুড়ি স্পর্শ করলো সে অনর্থক কাজ করলো।’ (মুসলিম: ৮৫৭) খুতবা শোনা এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, খুতবা চলাকালে পাশের ব্যক্তি কথা বললে তাকেও চুপ থাকার জন্য কথা বলার অনুমতি দেননি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। খুতবা চলাকালীন এ কাজকেও অনর্থক ও গোনাহের কাজ বলা হয়েছে।

নবীজি (সা.)-এর জুমার প্রথম খুতবা সম্পর্কে ইবনে ইসহাক বলেন- নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার প্রথম যে খুতবাটি দিয়েছিলেন তা আমার নিকট আবু সালামা বিন আব্দুর রাহমানের সূত্রে পৌঁছেছে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি, আমরা তার দিকে ওই সব কথা সম্পৃক্ত করা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিনি মুসলমানদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তার গুণাগুণ বর্ণনা করলেন। অতঃপর তিনি বলেন-

أَمّا بَعْدُ أَيّهَا النّاسُ فَقَدّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ تَعْلَمُنَّ وَاللهِ لَيُصْعَقَنَّ أَحَدُكُمْ ثُمّ لَيَدَعَنّ غَنَمَهُ لَيْسَ لَهَا رَاعٍ ثُمّ لَيَقُولَنّ لَهُ رَبّهُ وَلَيْسَ لَهُ تُرْجُمَانٌ وَلَا حَاجِبٌ يَحْجُبُهُ دُونَهُ أَلُمْ يَأْتِكَ رَسُولِي فَبَلّغَكُ وَآتَيْتُك مَالًا وَأَفْضَلْتُ عَلَيْك فَمَا قَدّمْتَ لِنَفْسِك فَلَيَنْظُرَنّ يَمِينًا وَشِمَالًا فَلَا يَرَى شَيْئًا ثُمّ لَيَنْظُرَنّ قُدّامَهُ فَلَا يَرَى غَيْرَ جَهَنّمَ فَمَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَقِيَ وَجْهَهُ مِنْ النّارِ وَلَوْ بِشِقّ مِنْ تَمْرَةٍ فَلِيَفْعَلْ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيّبَةٍ فَإِنّ بِهَا تُجْزَى الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَالسّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

অর্থ: আম্মা বাদ। হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের মুক্তির জন্য আমল করো। আল্লাহর শপথ! তোমরা তখন অবশ্যই পরকালের উদ্দেশ্যে আমল করার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে যখন তোমাদের কেউ শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার আওয়াজ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। সে তার ছাগলের পালকে রাখাল বিহীন অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবে, অতঃপর তার প্রভু তার সঙ্গে কথা বলবেন, তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোন দোভাষী থাকবেন না। সরাসরি কথা হবে এবং তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না। 

তিনি বলবেন তোমার কাছে কি আমার রসুল এসে আমার হুকুম-আহকাম পৌঁছে দেয়নি? আমি তোমাকে দুনিয়ার সম্পদ দিয়েছিলাম এবং তোমার উপর অনুগ্রহ করেছিলাম। সুতরাং তুমি নিজের জন্য কি প্রেরণ করেছো? তখন সে ডান দিকে তাকাবে, বাম দিকে তাকাবে। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সামনে তাকাবে। কিন্তু সে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। 
সুতরাং যে ব্যক্তি এক টুকরা খেজুর দান করার বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সামর্থ্য রাখে; সে যেন জাহান্নাম থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি তারও ক্ষমতা না রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলার মাধ্যমে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। কেননা এর বিনিময়েও সওয়াবের সংখ্যা এক থেকে দশ গুণ আর দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওআস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন- এই বলে তিনি প্রথম খুতবা শেষ করেছেন। অতঃপর নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় খুতবা দিয়েছেন।
নবীজি (সা.)-এর জুমার দ্বিতীয় খুতবায় বলেন-

إنّ الْحَمْدَ لِلهِ أَحْمَدُهُ وَأَسْتَعِينُهُ نَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَسَيّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إلَهَ إلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ إنّ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَيّنَهُ اللهُ فِي قَلْبِهِ وَأَدْخَلَهُ فِي الْإِسْلَامِ بَعْدَ الْكُفْرِ فَاخْتَارَهُ عَلَى مَا سِوَاهُ مِنْ أَحَادِيثِ النّاسِ إنّهُ أَحْسَنُ الْحَدِيثِ وَأَبْلَغُهُ أَحِبّوا مَا أَحَبّ اللهُ أَحِبّوا اللهَ مِنْ كُلّ قُلُوبِكُمْ وَلَا تَمَلّوا كَلَامَ اللهِ وَذِكْرَهُ وَلَا تَقْسُ عَنْهُ قُلُوبُكُمْ فَإِنّهُ مِنْ كُلّ مَا يَخْلُقُ اللهُ يَخْتَارُ وَيَصْطَفِي قَدْ سَمّاهُ اللهُ خِيَرَتَهُ مِنْ الْأَعْمَالِ وَمُصْطَفَاهُ مِنْ الْعِبَادِ وَالصّالِحِ مِنْ الْحَدِيثِ وَمِنْ كُلّ مَا أُوتِيَ النّاسُ مِنْ الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ فَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَاتّقُوهُ حَقّ تُقَاتِهِ وَاصْدُقُوا اللهَ صَالَحَ مَا تَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ وَتَحَابّوا بِرُوحِ اللهِ بَيْنَكُمْ إنّ اللهَ يَغْضَبُ أَنْ يَنْكُثَ عَهْدَهُ وَالسّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তার প্রশংসা করছি, তার কাছেই সাহায্য চাচ্ছি, আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং খারাপ আমল থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি যাকে হেদায়াত করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারেনা। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে সঠিক পথ দেখাতে পারেনা। আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সঠিক কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।

নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি সফল হবে, যার অন্তুরকে মহান আল্লাহ কোরআনের মাধ্যমে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন এবং কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার পর তাকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের কথাগুলো বাদ দিয়ে সে আল্লাহর কালামকে বেছে নিয়েছে। কেননা আল্লাহর কথাই হচ্ছে সর্বোত্তম কথা ও তার বাণীই হচ্ছে সর্বোচ্চ বাণী। আল্লাহ যা ভালোবাসেন তোমরা তাই ভালোবাসো এবং তোমাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহর ভালবাসা দিয়ে ভরে দাও।

আল্লাহর কালামকে পাঠ করতে এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে তোমরা ক্লান্তিবোধ করো না। তোমাদের অন্তর যেন কোরআন  ছেড়ে দিয়ে পাষাণ না হয়ে যায়। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সকল সৃষ্টি থেকে উত্তমটিই বাছাই করেন এবং তা নিজের জন্য নির্বাচন করেন। মহান আল্লাহ তার বান্দাদের আমলসমূহ থেকে কোরআন তিলাওয়াতকে সর্বোত্তম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বান্দাদের আমল থেকে তা পছন্দ করেছেন, তাকে সর্বোত্তম বাণী বলে ঘোষণা করেছেন এবং তার মাঝে মানুষের জন্য সকল হালাল ও হারাম বিষয় বর্ণনা করেছেন।

সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করোনা এবং তাকে যথাযথভাবে ভয় করো। তোমরা মুখ দিয়ে যে সমস্ত কথা উচ্চারণ করে থাকো, তা থেকে সর্বোত্তম কথার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সত্যতার ঘোষণা প্রদান করো। মহান আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধন রচনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মোটেই পছন্দ করেন না। ওয়াস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। (আল্লামা হাফেজ ইবনুল কাইয়িম (রহ.) সংকলিত মুখতাসার জাদুল মাআদ থেকে নেয়া।) 

কিউটিভি/অনিমা/২৬ জুলাই ২০২৪,/দুপুর ১২:৪৩

▎সর্বশেষ

ad