
ডেস্ক নিউজ : কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হজরত জুবাইর ইবনে বাক্কার (রহ.) বলেন, হোসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে তিনি শহীদ হন।
হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন।
১. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক। ২. তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক। ৩. ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।
কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।
অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী হজরত হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়। খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার ইচ্ছা।’
কখন শুরু হয় কারবালার যুদ্ধ
ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম হজরত হোসাইন (রা.) এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া ৭০ থেকে ৭২ জন শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে তিনি শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালা প্রান্তরে তাকে কবরস্থ করা হয়।
ইয়াজিদ কে?
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন খিলাফত ব্যবস্থা শুরু করেন মুয়াবিয়া (রা.)। উমাইয়াদের প্রথম খলিফা হচ্ছেন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-কে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়।
কাবা ঘরে আগুন লাগানোর ১১ দিনের মাথায় রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় ইয়াজিদের। শেষ হয় তার তিন বছর নয় মাসের ক্ষমতা। সময়টা ১২ নভেম্বর ৬৮৩। ইসলাম মুক্ত হয় এক জালেম শাসকের হাত থেকে।
কীভাবে মৃত্যু হলো ইয়াজিদের?
এই নিয়ে আছে নানা মত। তার মৃত্যুর অনেক কয়েকটি কারণ সন্দেহ করা হয়। কেউ কেউ বলেন, এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন ইয়াজিদ। অজানা এই রোগের কোনো ধরনের চিকিৎসা দিতে পারেনি চিকিৎসকেরা। কেউ কেউ বলে এসময় তিনি প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় ভুগতেন কিন্তু পানি দিলেই খেতে পারতেন না সেই পানি। এমনভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পানির তৃষ্ণায় শেষ পর্যন্ত মারা যায় ইয়াজিদ।
আবার অনেকে বলেন, ঘোড়া থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ইয়াজিদের। ডাক্তারের পরামর্শে তার প্রিয় বানরকে নিয়ে শিকারে বের হয়েছিল ইয়াজিদ। হঠাৎ বানরটি হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে এক গহিন পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছায়। এমনসময় ঘোড়া থেকে পড়ে যায় ইয়াজিদ কিন্তু ছুটন্ত ঘোড়া আর না থেমে আরো দ্রুত ছুটতে থাকে। তার শরীর ঘোড়ার সাথে বাঁধা থাকায় পাথরের আঘাতে মৃত্যু বরণ করে ইয়াজিদ। আর ঘোড়াটি অস্বাভাবিকভাবে ছুটতে থাকায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় ইয়াজিদের শরীর।
ইয়াজিদের মৃত্যুর পর ছেলে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া ক্ষমতায় আসে ২১ বছর বয়সে। তিন মাসের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে মারা যান তিনি। শেষ হয় উমাইয়াদের শাসনামল। শেষ হয় ইসলামের এক ঘোরতর অন্ধকারের যুগ।
কিউটিভি/আয়শা/১৫ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৫:০০