ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

কারবালার যুদ্ধের পর ইয়াজিদের কী হয়েছিল?

Ayesha Siddika | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ - ০৫:০৪:৫৪ পিএম

ডেস্ক নিউজ : কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হজরত জুবাইর ইবনে বাক্কার (রহ.) বলেন, হোসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে তিনি শহীদ হন।

তাকে সিনান ইবনে আবি আনাস নাখায়ি হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে খাওলি ইবনে ইয়াজিদ আসবাহি হিময়ারি। সে হোসাইন ইবনে আলীর মাথা শরীর থেকে দ্বিখণ্ডিত করে ওবায়দুল্লাহর দরবারে নিয়ে যায়।
 
কারবালার প্রান্তরে সে অশুভ দিনে পাপিষ্ঠরা যে নির্মমতা ও নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছে, তা পাষণ্ড হৃদয়েও ব্যথা ও যাতনা সৃষ্টি করে। শাহাদাতের পর হজরত হোসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শা ও ৩৪টি তরবারির আঘাত দেখা যায়। শরীরে ছিল অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন। তার সঙ্গে মোট ৭২ জনকে হত্যা করে তারা।
কেনো সংঘটিত হয় কারবালার যুদ্ধ

হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন।  


১. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক। ২. তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক। ৩. ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।  

কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী হজরত হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়। খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার ইচ্ছা।’

কখন শুরু হয় কারবালার যুদ্ধ

ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম হজরত হোসাইন (রা.) এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া ৭০ থেকে ৭২ জন শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে তিনি শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালা প্রান্তরে তাকে কবরস্থ করা হয়।

 
ইতিহাস সাক্ষী, হজরত হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, মাত্র ৫০ বছরের ব্যবধানে করুণ পন্থায় তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। (সূত্র: কারবালার ইতিহাস, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)। )
 

ইয়াজিদ কে?

ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন খিলাফত ব্যবস্থা শুরু করেন মুয়াবিয়া (রা.)। উমাইয়াদের প্রথম খলিফা হচ্ছেন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-কে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়।

 
ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান। (২০ জুলাই ৬৪৭-১৪ নভেম্বর ৬৮৩) সাধারণভাবে প্রথম ইয়াজিদ বলে পরিচিত তিনি। উমাইয়া খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা। উত্তরাধিকার সূত্রে খিলাফত লাভকারীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম খলিফা হন। তার পিতার প্রথম মুয়াবিয়া মৃত্যুর পর ৬৮০ সনের এপ্রিল মাসে মসনদে আরোহণ করে। তিনি ৬৮০ থেকে ৬৮৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর শাসন করেন।
কারবালার যুদ্ধের পর ইয়াজিদের কী হয়েছিল?ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেদনার ঘটনার নাম ‘কারবালা’। এই দিন মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন ও তার ৭২ জন সঙ্গীকে হত্যা করা হয়। 

 এই হত্যাকাণ্ডের  জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তিনজন ব্যক্তি। এরা হলেন শিমার বিন জুলজওশান  যিনি নিজ হাতে খুন করেছিলেন ইমাম হোসাইনকে, এরপর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ যিনি ছিলেন তখনকার কুফার গভর্নর। ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া যার নির্দেশেই সম্পন্ন হয়েছিল কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা। কিন্তু এমন জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পর শেষ পরিণতি কী হয়েছিল এই তিন ব্যক্তির?
 
ইসলামে ইয়াজিদ একমাত্র খলিফা যার দ্বারা ইসলাম সবচেয়ে বেশি অবদমিত হয়েছে। ৬৮০ সালের মে মাসে ক্ষমতা গ্রহণের চার মাসের মাথায় শুরু করে যুদ্ধ । কারবালার যুদ্ধ। হত্যা করে শেষ নবীর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইনকে। এরপর দ্বিতীয় বছরে আক্রমণ করে মদিনা। লন্ডভন্ড করে দেয় মসজিদে নববী। 
 
আর জীবনের শেষ বছরে এসে ইয়াজিদ আগুন লাগিয়ে দেয় মুসলমানের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা ঘরে। এই তিন বড় অপরাধের জন্য মুসলমানদের কাছে ইয়াজিদ এক ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়।

কাবা ঘরে আগুন লাগানোর ১১ দিনের মাথায় রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় ইয়াজিদের। শেষ হয় তার তিন বছর নয় মাসের ক্ষমতা। সময়টা ১২ নভেম্বর ৬৮৩। ইসলাম মুক্ত হয় এক জালেম শাসকের হাত থেকে।

কীভাবে মৃত্যু হলো ইয়াজিদের?  

এই নিয়ে আছে নানা মত। তার মৃত্যুর অনেক কয়েকটি কারণ সন্দেহ করা হয়। কেউ কেউ বলেন, এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন ইয়াজিদ। অজানা এই রোগের কোনো ধরনের চিকিৎসা দিতে পারেনি চিকিৎসকেরা। কেউ কেউ বলে এসময় তিনি প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় ভুগতেন কিন্তু পানি দিলেই খেতে পারতেন না সেই পানি। এমনভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পানির তৃষ্ণায় শেষ পর্যন্ত মারা যায় ইয়াজিদ।

আবার অনেকে বলেন, গোসলখানায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ইয়াজিদ। মৃত্যুর পর অস্বাভাবিকভাবে তার পুরো শরীর কালো কুচকুচে হয়ে গিয়েছিল।

আবার অনেকে বলেন, ঘোড়া থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ইয়াজিদের। ডাক্তারের পরামর্শে তার প্রিয় বানরকে নিয়ে শিকারে বের হয়েছিল ইয়াজিদ। হঠাৎ বানরটি হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে এক গহিন পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছায়। এমনসময় ঘোড়া থেকে পড়ে যায় ইয়াজিদ কিন্তু ছুটন্ত ঘোড়া আর না থেমে আরো দ্রুত ছুটতে থাকে। তার শরীর ঘোড়ার সাথে বাঁধা থাকায় পাথরের আঘাতে মৃত্যু বরণ করে ইয়াজিদ। আর ঘোড়াটি অস্বাভাবিকভাবে ছুটতে থাকায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় ইয়াজিদের শরীর।
 
এছাড়া হত্যার আরো অনেক কারণ পাওয়া যায়। কিন্তু কোনটি সঠিক এ বিষয়ে আছে নানা মত। তবে ইতিহাসবিদের মতে প্রথম ও তৃতীয় কারণটিই ইয়াজিদের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরা হয়।

ইয়াজিদের মৃত্যুর পর ছেলে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া ক্ষমতায় আসে ২১ বছর বয়সে। তিন মাসের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে মারা যান তিনি। শেষ হয় উমাইয়াদের শাসনামল। শেষ হয় ইসলামের এক ঘোরতর অন্ধকারের যুগ।
ইয়াজিদের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা বা বিশ্বাস কী?জমহুর আহলে সুন্নাতের মতে ইয়াজিদ ফাসিক। তাকে কাফের বলা যাবে না। তার উপর লানত করা থেকে নীরব থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলাই তার জন্য যথেষ্ট। ইয়াজিদের উপর সালাফের কেউ লানত বর্ষণ করেননি। রাফেজী, খারেজি এবং কতিপয় মুতাজিলা ছাড়া। যারা বাচালতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘণকারী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তার ব্যাপারে চুপ থাকাই নিরাপদ। (শরহুল আমালি, মোল্লা আলী কারীকৃত-২৭-২৮)

এ কারণেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হল, এজিদের উপর লানতও বর্ষণ করা হবে না। আবার হজরত হুসাইন (রা.) এর বিপরীতে তার প্রশংসাও করা হবে না। (আপ কি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৪০২-৪০৩)

 

 

কিউটিভি/আয়শা/১৫ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৫:০০

▎সর্বশেষ

ad