
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন। আজ শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হচ্ছেন—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন, সমাজ বা জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও এসএম আব্রাহাম লিংকন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে সর্বশেষ ১০ নং তালিকায় স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪’ পদকপ্রাপ্ত এস এম আব্রাহাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার লক্ষ্যে কুইকটিভিবিডি.কম দ্রুততার সাথে একটি অনিসন্ধিৎসু প্রতিবেদন তৈরী করে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভারতের তিন রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের সন্তান এড.এসএম আব্রাহাম লিংকন। ছোট বেলা থেকেই এক সংগ্রামী জীবন শুরু করেন ,
এস এম আব্রাহাম লিংকন (জন্ম ১৪ নভেম্বর ১৯৬৬) বাংলাদেশের একজন আইনজীবী ও সমাজসেবক। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করেন।
এস এম আব্রাহাম লিংকন ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর বকসীপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমদ এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। বাবা মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এই দম্পতির সাত ছেলের মধ্যে পঞ্চম হচ্ছেন আব্রাহাম লিংকন।
এস এম আব্রাহাম লিংকনের প্রথম বিদ্যাপীঠের নাম খলিলগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর কিছুদিন তিনি কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। খলিলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি এবং কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশের পর লিংকন ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি এবং এলএলএম পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন ১৯৮৮ সালে রাকসুর সহকারী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়াও আব্রাহাম লিংকন ফিলিপাইন থেকে গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এর উপর ডিপ্লোমা শেষ করেন।
১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর থেকে কুড়িগ্রামে আইনজীবী হিসেবে শুরু করেন তার কর্মজীবন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবেও তালিকাভুক্ত আছেন। ১৯৯২ সালে তিনি কুড়িগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সাল থেকে আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত আছেন।[
আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এস এম আব্রাহাম লিংকন বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬১টি ছিটমহল বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ বর্ডার ভিকটিমস রেসকিউ লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ফোরামের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য অবদান রাখা বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির পুনর্বাসনে সহায়তা করেন এস এম আব্রাহাম লিংকন।২০১২ সালে আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অনন্য সংগ্রহশালা ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪’ পদকপ্রাপ্ত এস এম আব্রাহাম লিংকনের সংগে কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে তিনি দেশবাসী ও বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে নিরীহ মানুষের জনপদ উত্তরবঙ্গের মানুষকে আলোকিত মানুষ করার প্রচেষ্টায় যে সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি, তার প্রাপ্য সব সম্মানের সবটুকুই এই মানুষ গুলোর জন্যে পাওয়া বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাষ্ট্র কর্তৃক শ্ৰেষ্ঠ দুটি পদক লাভে এস এম আব্রাহাম লিংকনের সম্মানে সম্মানিত ও আনন্দবোধ করছে কুড়িগ্রামবাসী। এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কুড়িগ্রামের অনেকেই।
নাহিদা ১৫.০৩.২০২৪/রাত ১১.২৫