
সাহিত্য ডেস্ক : গাড়ি, বাড়ি, স্বর্ণ, হীরা, টাকা নয়, জীবনে সবচেয়ে দামি জিনিস হলো, জ্ঞান! শিক্ষা দান করা যায়, তবে জ্ঞান দান করা সম্ভব নয়। জ্ঞান অর্জন করতে হয়, নিজেরই। সেই জন্য একটি শ্রেণিকক্ষে একই শিক্ষক পাঠদান করার পরও বিভিন্ন শিক্ষার্থীর শিখনফল হয় ভিন্ন ভিন্ন।
জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে- বই পড়া। বই মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। বইয়ের মাধ্যমেই আদিযুগের জ্ঞানও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্থানান্তরিত হচ্ছে। বইয়ের গুরুত্ব ও প্রভাব ছড়াতেই প্রতিবছর বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বইমেলার আয়োজন করা হয়।

আমাদের দেশে বইমেলার সূত্রপাত হয়, বাংলার ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে। বাঙালিরাই প্রথম ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে ১৯৫২ সালে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে মিছিল নেমে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বাংলার যুবকদের সেই আন্দোলন বারুদ-গুলি দিয়েও ঠেকানো যায়নি। নিজের বুকের রক্ত দিয়ে আন্দোলন সফল করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্বে এই প্রথম কোনো দেশ নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। সে কারণে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে নির্মাণ করা শহীদ মিনারে ফুল অর্পণ করা হয় এইদিন।

ভাষা আন্দোলনের মাসেই বাংলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়- ’অমর একুশে বইমেলা’। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে মাসের শেষদিন অবধি চলে এই মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের নতুন সব বই নিয়ে বসে বাংলা একাডেমি ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। পুরো একটি মাস জুড়ে বইয়ের যে মেলা বসে, এর তাৎপর্য কী! বই কেন আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ! এ রকম অনেক প্রশ্ন হয়ত অনেকের মনেই আসতে পারে!

বই শুধু জ্ঞান অর্জনেই সাহায্য করে না, ব্যক্তিত্ব গঠনে নানারকম অভ্যাসও গড়ে ওঠে বই পড়ার মাধ্যমে। সময় কাটানোর একটি বেশ ভালো মাধ্যমও এটি। মানুষ সাধারণত এমন বন্ধু খোঁজে, যে তাকে আনন্দ দেবে এবং তাকে বুঝবে। তার একাকীত্ব দূর করতে পারবে, বাস্তব জীবনের পীড়া থেকে তাকে মুক্ত করবে। ভালো মানের একটি বই, সেরকমই এক বন্ধু।
যারা প্রতিদিন কোনো না কোনো বই পড়েন, তাদের ভাষার ভিত্তি মজবুত হয়। তাছাড়া, শব্দ ভাণ্ডার উন্নত হয়। ব্যাকরণজনিত সমস্যাও সমাধান হয়, বিনোদন গ্রহণের সাথে সাথেই। বই হচ্ছে এমন এক বন্ধু, যাকে যেকোনো সময় পাশে পাবেন। সাধারণত যারা বই পড়ে অভ্যস্ত, তারা যুক্তিবাদী হন। তারা যে কোনো কথোপকথনে বইয়ের উদাহরণ টানতে পারেন।

বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। এছাড়া, চিন্তা করা ও লেখার দক্ষতাও বাড়ে। বই সবচেয়ে উন্নতমানের বিনোদনের একটি মাধ্যম। মন খারাপ হলে ভালো বই পড়লে মন ভালো হয়ে যায়। পারিপার্শ্বিক ঝামেলা থেকে মস্তিষ্ককে মুক্ত রাখা যায়। বই পড়ার মাধ্যমে বিশ্বের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা পরিবর্তন হয়। ভালো বইয়ে ডুবে থাকলে আমরা নিজেদের নতুন জগত অনুভব করতে পারি। নিজের ভেতর একটি অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হয়।

শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ বই পড়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তবে আপনি চাইলে যেকোনো জায়গাতেই বই পড়তে পারেন। কাগজের বই বহন করতে অসুবিধা হলে অনলাইনেও বইয়ের পিডিএফ ভার্সন পড়তে পারেন। সব বইয়ের ভেতরেই কিছু না কিছু শেখার মতো আছে। তাই, প্রতিবার একটি নতুন বই পড়ুন আর নতুন কিছু শিখুন। এর মাধ্যমে নিজের মানসিক উন্নয়ন ঘটান।
কিউটিভি/আয়শা/০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:২১