
‘আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাই’ – জগজিৎ সিং
———————————————————
গানের শ্রোতাদের মাঝেও শ্রেণী বিন্যাস আছে। অভিজাত শ্রেণীর সংগীত প্রেমীদের কাছে প্রথম অবস্থানেই আছেন জগজিৎ সিং ও চিত্রা সিং। এই দুই সংগীত জীবনের বাইরে ছিলেন স্বামী স্ত্রী। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরির পিছনে অনেক কাঠখড় পড়াতে হয়েছে দুজনকে। যে ঘটনার অবতারণা হয়েছিল তা শুনলে চমকে যেতে হয়।
‘হোশ ওয়ালো কো খবর ক্যায়া বেখুদি ক্যায়া চিজ হ্যায়..’ এই গায়কীর সঙ্গেই কার্যত প্রেমের প্রবল আকর্ষণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন জগজিৎ সিং। প্রেম যে কোনও বাধাকে মেনে নিতে চায়না , তার আবেগী রূপ যেমন রয়েছে, তার সঙ্গে প্রেমের রাস্তায় এসে পড়া বহু চ্যালেঞ্জের বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয়! এই দুইয়ের সমাহার নিয়েই চিত্রার সঙ্গে জগজিতের প্রথম দেখা হয়। ১৯৬৭ সালের এক দিনে একটি রেকর্ডিং স্টুডিওতে প্রথমবার চিত্রাকে দেখেন জগজিৎ।
চিত্রা চাননি জগজিতের সঙ্গে রেকর্ডিং করতে! শোনা যায়, প্রথম সাক্ষাতেগানের রেকর্ডিংএ জগজিৎ সিং চিত্রার সঙ্গে অনেকক্ষণ সময়ই কাটান। তবে জগজিতের কণ্ঠস্বর ভারী হওয়ায়, চিত্রা জগজিতের সঙ্গে গান গাইতে চাইছিলেন না। শেষমেশ বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল গাওয়া দিয়ে শুরু হল এক মধুর সফরের পথ চলা।
শোনা যায়, চিত্রা সিংয়ের স্বামী দেবপ্রসাদ দত্ত এক নামী বিস্কিট কম্পানির বড় অফিসার ছিলেন। সেই দাম্পত্যে চিত্রা ও দেবপ্রসাদের এক কন্যা সন্তানও ছিল। এই সংসারের অংশ চিত্রাকে আপন করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বহু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন জগজিৎ।
কীভাবে শুরু প্রেম পর্ব ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন বলছে, রেকর্ডিং শেষ হলে প্রায়ই চিত্রা জগজিতকে গাড়িতে লিফ্ট দিতেন। একবার লিফ্ট দিয়ে নিজের বাড়িতে চায়ের নিমন্ত্রণ করেন চিত্রা। শোনা যায়, সেই দিন বাড়ির গানের আসরে স্বনামধন্য এই শিল্পী জগজিতের গান শুনে মুগ্ধ হন চিত্রা। দুজনের অজান্তেই বিকশিত হতে থাকে বসন্তের ডালপালা!
পরবর্তীকালে চিত্রার সঙ্গে জগজিৎ সিংয়ের বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। দেখা সাক্ষাতের পর্বও বাড়তে থাকে বলে জানা যায়। এদিকে, স্বামী দেবপ্রসাদ দত্তর সঙ্গে চিত্রার সম্পর্কে চিড় ধরে। শোনা যায়, দূরত্বও বাড়তে শুরু করে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার খবর অনুযায়ী, মেয়েকে নিয়ে দেবপ্রসাদ আলাদাও থাকতেন। তবে সেখবরের সত্যতা জানা যায় না।
এদিকে, ততদিনে দেবপ্রসাদের সঙ্গে চিত্রার দূরত্ব প্রবল হারে বাড়তে থাকে। শেষে একদিন চিত্রাকে বিয়ে করার জন্য তাঁর স্বামীর কাছে প্রস্তাব দেন জগজিৎ সিং। বলেন, ‘আমি আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাই’। এমনই গুঞ্জন ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে শোনা যায়।
১৯৬৯ সালে চিত্রার সঙ্গে বিয়ে হয় জগজিৎ সিংয়ের। এরপর তাঁর ঘর আলো করে জন্মান বিবেক। সুস্থির দাম্পত্যে সুখে সঙ্গীত চর্চায় মাতেন জগজিৎ ও চিত্রা। ১৯৯০ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় এরপর মৃত্যু হয় জগজিৎ ও চিত্রার সন্তান বিবেকের। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন জগজিৎ সিং। এক বছরের জন্য গানের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হন তিনি। এখানেই শেষ নয়, চিত্রার প্রথম বিয়ের কন্যা সন্তানও ২০০৯ সালে আত্মহত্যা করেন। কার্যত ভেঙে পড়েন চিত্রা ।
২০১১ সালে একলা হয়ে পড়েন চিত্রা। মেয়ের মৃত্যুর ঠিক ২ বছর পর ২০১১ সালে জগজিৎকেও হারান চিত্রা সিং। শেষ হয় এক দাম্পত্যের বাস্তব সফর। তবে এক চির অমর প্রেমের আবেগী সফরের ছবি বুকে নিয়ে এগিয়ে যায় চিত্রার জীবন পট।
লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে দুটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত।
বিপুল/০৮.১২.২০২৩/ রাত ৮.৪২