
মানব উন্নয়ন সূচকে এ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯
——————————————————————
এ কথা এখন আমরা সকলেই অনুভব করি যে উন্নয়নের মূলসূচক কেবল আয় নয় বরং মানব উন্নয়ন কতটা হয়েছে তার বিভিন্ন দিক। গতকাল প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘের Human Development Report, 2021-22. এবছরের রিপোর্টের শিরোনাম করা হয়েছে, Uncertain Times, Unsettled Lives: Shaping our Future in a Transforming World”. জাতিসংঘ প্রায় প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানব উন্নয়নের নানামুখী সূচক পরিমাপ করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী তিনটি উৎস থেকে মানবজীবনে নানারকম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এগুলো হলো: ১। জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব এবং এর সাথে নানা ধরনের বৈষম্যের টানাপোড়েন, ২। শিল্প পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সাথে সাথে সৃষ্ট নানামুখী পরিবর্তন এবং ৩। রাষ্ট্রীয় ও আন্তঃদেশীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মেরুকরণ এবং নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্প্রসারণের সাথে সাথে বিভিন্ন রকম তথ্য ও মানুষ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সম্প্রসারণ।
মানব উন্নয়ন সূচকে এ বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৯১ টি দেশের মধ্যে ১২৯। আমরা মধ্যম মানের মানব উন্নয়ন সূচকের অধিকারী, এবং ২০২০ এর মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের সাথে তুলনা করলে আমাদের মানব উন্নয়ন সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার দুটো পত্রিকাতেই এ বিষয়ে ড.নাজনীন আহমেদ এর মতামত প্রকাশিত হয়েছে ।
সার্বিকভাবে বিশ্বের মানব উন্নয়ন সূচকের যেখানে অবনতি হয়েছে সেখানে আমাদের এই উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক। তবে মনে রাখতে হবে মানব উন্নয়ন সূচকে আমাদের অগ্রগতির মূল কারণ হলো মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি ।তবে এটিও মনে রাখতে হবে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি হলেই মানব উন্নয়ন ঘটে না বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জেন্ডার সমতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ -এ সবকিছুর উপরই নির্ভর করে মানবসম্পদ উন্নয়ন ।
এবছর রিপোর্টের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে জোর দেয়া হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের উপর ।কারণ অস্থির মানসিকতায় দৈনন্দিন জীবনযাপন যেমন ব্যাহত হয় সে অস্থিরতা যায় সমাজে। আজকের উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা যদি আগামীর উন্নয়নের পথ ব্যাহত করি তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে কিনা তা চিন্তার বিষয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাজ করা আমাদের জন্য জরুরী ।এই রিপোর্ট অনুযায়ী তিনটি দিকে এখন বেশি বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তা হলো বিনিয়োগ, নানা ধরনের ইন্সুরেন্স বা নিরাপত্তা এবং সেই সাথে নতুন উদ্ভাবন। দায়িত্বহীন উৎপাদন ও ভোগের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করে আগামী প্রজন্মের যেন ক্ষতি না করি এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
লেখিকাঃ ড.নাজনীন আহমেদ, কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট, ইউএনডিপি,বাংলাদেশ। অর্থনীতি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। টিভি টকশোতে অর্থনীতির জটিল বিষয়গুলো সাবলিলভাবে উপস্থাপন করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লেখাগুলো ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এই পোস্টটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/১১.০৯.২০২২/ সন্ধ্যা ৬.৫০