
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লেবাননের সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ লেবানিজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াবে না এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভাজন বা গৃহবিবাদ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিষদের প্রধান শেখ আলি দামুশ। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বৈরুতের দক্ষিণ উপশহর দাহিয়েহর সাইয়্যেদা জায়নাব মসজিদে জুমার নামাজে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ আলি দামুশ বলেন, ‘লিটানি নদীর দক্ষিণে লেবানিজ সেনাবাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ হবে এবং দখলকৃত এলাকা থেকে ইসরাইল সরে যাবে—এমন যে দাবি করা হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে পড়েছে।’তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী তথাকথিত ‘প্রথম ধাপ’ বাস্তবায়নের প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছালেও ইসরাইলি হামলা বন্ধ হয়নি, বরং আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে কোনো দখলকৃত এলাকা থেকেও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্টো, ইসরাইল সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আগ্রাসন জোরদার করেছে।
আল-মানার টিভির ইংরেজি ওয়েবসাইট জনিয়েছে, শেখ দামুশ লেবাননের কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, চুক্তির আওতায় লেবাননের করণীয় বিষয়গুলোকে ইসরাইলের বাধ্যবাধকতা থেকে আলাদা করে দেখানো একটি বড় ভুল সিদ্ধান্ত। এর ফলে চুক্তিটি একতরফাভাবে বাস্তবায়নের দায় লেবাননের ওপর পড়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, লিটানির দক্ষিণে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো পারস্পরিক; লেবানন যদি তার অঙ্গীকার পূরণ করে থাকে, তবে ইসরাইলকেও অবশ্যই তা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল দখলকৃত অবস্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা, হামলা বন্ধ না করা, বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের ঘরে ফেরার সুযোগ না দেওয়া এবং পুনর্গঠনের পথ খুলে না দেওয়া পর্যন্ত তথাকথিত ‘প্রথম ধাপ’ সম্পন্ন হয়েছে বলা যায় না। কেবল সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, যখন ইসরাইল স্থল, নৌ ও আকাশপথে লেবাননের ভূখণ্ড লঙ্ঘন অব্যাহত রাখছে।
শেখ দামুশ সতর্ক করে বলেন, চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন এবং লেবাননের গৃহীত পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের উপেক্ষার পরও ধারাবাহিকভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তিনি ইসরাইলি গোলাবর্ষণের মধ্যেই লিটানির উত্তরে অগ্রসর হওয়ার আহ্বানকে সমালোচনা করে বলেন, হামলা বন্ধ বা সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে কোনো কার্যকর চাপ প্রয়োগ না করেই এসব দাবি তোলা হচ্ছে।
তিনি তথাকথিত ‘দ্বিতীয় ধাপে’ যাওয়ার পক্ষে যারা কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, লেবাননের ওপর চাপ না বাড়িয়ে বরং ইসরাইলকে তার অঙ্গীকার পালনে বাধ্য করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আগ্রাসন বন্ধে চাপ দেওয়া উচিত।
তার মতে, ওয়াশিংটন ইচ্ছা করলেই হামলা বন্ধ ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে পারে। তিনি দাবি করেন, ইসরাইলি আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমন্বয়েই পরিচালিত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিনের হামলা ও হুমকির সরাসরি অংশীদার।
শেখ দামুশ বলেন, চলমান সামরিক হামলা, গুপ্তহত্যা, রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক ও আর্থিক অবরোধ এবং অভ্যন্তরীণ উসকানির উদ্দেশ্য হলো লেবানন, তার সেনাবাহিনী ও প্রতিরোধ শক্তিকে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং হিজবুল্লাহকে পশ্চাদপসরণ বা আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের অভ্যন্তরীণ সহযোগীরা সব ধরনের উপায় ব্যবহার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যারা মনে করছে রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী বা প্রতিরোধের সামাজিক ভিত্তিকে ব্যবহার করে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে, তারা ভুল করছে। প্রতিরোধ কখনোই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে যাবে না, অভ্যন্তরীণ বিভাজন হতে দেবে না এবং পিছু হটবে বা আত্মসমর্পণও করবে না। ভাষণের শেষাংশে শেখ আলি দামুশ বলেন, যতদিন আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে, ততদিন প্রতিরোধের অধিকার থেকে হিজবুল্লাহ সরে যাবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামলা, গুপ্তহত্যা, অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা বা মিডিয়া প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিরোধের এই অধিকার কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, শহীদদের রক্তের প্রতি অঙ্গীকার রক্ষা করে প্রতিরোধের সমর্থকরা সব চাপ ও কষ্টের মধ্যেও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। ইসরাইলি দখলদারিত্ব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এবং তাদের অভ্যন্তরীণ মিত্রদের ধারাবাহিক লক্ষ্যবস্তু করা জনমত পরিবর্তন করতে পারবে না; বরং প্রতিরোধের সংকল্প আরও দৃঢ় করবে।
আয়শা/২৭ ডিসেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৪৫






