
স্পোর্টস ডেস্ক : এই মামলা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ঐতিহাসিক অ্যান্টিট্রাস্ট (একচেটিয়া ব্যবসা বিরোধী) রায়ের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে উয়েফা তার আধিপত্যের অপব্যবহার করে ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এক সময় ইউরোপীয় সুপার লিগকে ‘ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রকল্প’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হতো। এবার সেটি আবার শিরোনামে এবং এবার ঝুঁকিটা আরও মারাত্মক হতে পারে।
সংবাদমাধ্যম এএস’র রিপোর্ট অনুযায়ী, রিয়াল মাদ্রিদ ও এ২২’র দাবি, এই ৪.৫ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ হারানো মুনাফা, সুনামের ক্ষতি এবং উয়েফা’র একচেটিয়া দখলদারির কারণে সৃষ্ট প্রতিযোগিতাগত ক্ষতির প্রতিফলন।
দুই পক্ষের আইনজীবীরা এরই মধ্যে মামলার খসড়া প্রস্তুত করছেন। বহু মাসের ব্যর্থ আলোচনা ও অকার্যকর বৈঠকের পর তারা অবশেষে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি মাদ্রিদের একটি আদালত উয়েফার আপিল খারিজ করে দিয়ে রায় দিয়েছে যে, সংস্থাটি (উয়েফা) ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুক্ত প্রতিযোগিতা আইন গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। এই রায়ের পর ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এটিকে তার বহু বছরের লড়াইয়ের ‘সবুজ সংকেত’ হিসেবে দেখেছেন। তার মতে, এখন সময় এসেছে ন্যায়বিচার পাওয়ার ও উয়েফার ‘অবৈধ বাধার’ কারণে হারানো অর্থ পুনরুদ্ধার করার।
২০২১ সালের এপ্রিলে ইউরোপের ১২টি বড় ক্লাব যেমন: রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবগুলো মিলে ‘ইউরোপীয় সুপার লিগ’ গঠনের পরিকল্পনা করে। এই টুর্নামেন্টের লক্ষ্য ছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প তৈরি করা, যেখানে ক্লাবগুলো আরও বেশি আয় এবং স্বাধীন প্রতিযোগিতার কাঠামো পেত।
কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রকল্পটি ধাক্কা খায়। ভক্তদের প্রতিবাদ, সরকারগুলোর নিন্দা, এবং উয়েফা ও ফিফার হুমকির মুখে ইংল্যান্ডের ‘বিগ সিক্স’ ক্লাবগুলো দ্রুত সরে যায়। শেষ পর্যন্ত শুধু রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা লড়াই চালিয়ে যায়। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বারবার বলেছেন যে উয়েফা ‘একচেটিয়া আধিপত্যের মাধ্যমে উদ্ভাবন ও ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে ধ্বংস করছে।’
এ২২’র সিইও বের্ন্ড রাইখার্টের সহায়তায় তারা আইনি লড়াই শুরু করে। তাদের অধ্যবসায় ফলপ্রসূ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, যখন ইউরোপীয় বিচার আদালত (সিজেইইউ) ঘোষণা করে যে উয়েফার অনুমোদন প্রক্রিয়া ইউরোপীয় আইনের পরিপন্থী। পরবর্তীতে স্পেনের অডিয়েন্সা প্রোভিন্সিয়াল এই রায়কে আরও জোরদার করে জানায় যে উয়েফা তার প্রভাবের অপব্যবহার করেছে। এই রায়ই এখন ৪.৫ বিলিয়ন ইউরোর মামলার ভিত্তি।
সিজেইইউ’র রায়ের পর উয়েফা ও এ২২ সমঝোতার চেষ্টা করে। কয়েক দফা বৈঠকে সম্প্রচারের অধিকার, টুর্নামেন্ট কাঠামো এবং আয়ের ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফরম্যাট নিয়ে মতবিরোধে আলোচনা ভেঙে যায়। মাদ্রিদ ও এ২২ অভিযোগ তোলে যে উয়েফা ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে এবং আসলে কোনও সমাধান চায় না।
বার্সেলোনা সভাপতি জোয়ান লাপোর্তা সম্প্রতি উয়েফার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছেন এবং পিএসজির প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফি ও উয়েফা প্রধান আলেকজান্ডার সেফেরিন উপস্থিত এক সভায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য, যাতে সমঝোতা সম্ভব হয়।’
অন্যদিকে, পেরেজ উয়েফার বিরুদ্ধে রায়কে নিজের বিজয় হিসেবে দেখছেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। রিয়াল মাদ্রিদের দাবি, উয়েফার একচেটিয়া ক্ষমতা ক্লাবগুলোর উদ্ভাবন, আয় বৃদ্ধি ও স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে। তারা যে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে তার মধ্যে রয়েছে— হারানো বাণিজ্যিক সুযোগ, সম্প্রচার আয় এবং ২০২১ সাল থেকে উয়েফার পদক্ষেপের কারণে সৃষ্ট ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিপূরণ।
উয়েফা জানিয়েছে, আদালতের রায় সুপার লিগ প্রকল্পকে বৈধতা দেয় না। সংস্থাটি বলেছে যে তাদের ‘২০২২ সালে গৃহীত নতুন অনুমোদন নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’তারা স্পষ্ট করেছে যে উয়েফা ইউরোপীয় ফুটবলের ঐক্য ও প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। চূড়ান্তভাবে, এই মামলা শুধু অর্থ নয়—শক্তি ও নীতির লড়াই। যদি রিয়াল মাদ্রিদ জেতে, তাহলে ইউরোপীয় ফুটবলের আর্থিক ও প্রশাসনিক কাঠামো এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারে।
আয়শা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৫:৫৩






