
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ইন্টারনেট জগতে ডিপফেক এখন পরিচিত শব্দ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে যেসব ছবি ও ভিডিও বানানো হয় তাই ডিপফেক। ডিপফেক এজন্যই বলা হয় যে বাস্তবের সঙ্গে এসব ভিডিও, ছবি মিল থাকে। অর্থাৎ এগুলো যে এআই দিয়ে বানানো সেটা বোঝা কঠিন।
মহামারি করোনার সময় লকডাউনে মাইলস ফিশার নামের এক টিকটকার একটি ডিপফেক ভিডিও তৈরি করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। হলিউড স্টার টম ক্রুজ়কে সে সময় ডিপফেকের টার্গেট করা হয়েছিল।
এখন বুঝতে পারছেন তো, এই প্রতারণা এমন কোনো হেলাফেলার বিষয় নয় যে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক হাজার টাকা গায়েব হল আর আপনি তাতে গুরুত্ব দিলেন না।
ডিপফেক আপনার সম্ভ্রম নিয়ে টানাটানি করতে পারে। যেখানে টম ক্রুজ়, রশ্মিকা মান্দানা বা ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকাদের নিস্তার নেই, সেখানে আপনি-আমি কোথায়?
ফটোশপ করা ছবির থেকে ডিপফেক কতটা আলাদা
ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার জন্য উন্নত মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডিপফেক। তার ফলে এমনই কিছু তৈরি হয়ে যায়, যা ভিডিওর মুখ্য চরিত্র হয়তো আগে কখনও করেনইনি।
জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় ডিপফেক ভিডিও বা চিত্র। যেখানে দুটি মেশিন লার্নিং মডেল একসঙ্গে কাজ করে। তাদের একটি জাল মুহূর্তগুলো তৈরি করে, আর একটি শনাক্তকরণের কাজ করে। এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে ভুয়া ভিডিওগুলো এতটাই বিশ্বাসযোগ্য হয় যে, তা ফটোশপ করা ছবিগুলোকেও হার মানায়।
ডিপফেক করা ভিডিও, ছবি বুঝবেন কীভাবে
একটি ডিপফেক ভিডিও চিহ্নিত করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে তা অসম্ভব নয়। ডিপফেক ভিডিয়োর ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় একটি খুঁটিয়ে দেখতে বলছেন। মুখ্য চরিত্রের চোখের পলক ফেলার ধরন অপ্রাকৃতিক হবে, মুখের বিকৃতি বা কণ্ঠস্বর, এমনকি ঠোঁটের নড়াচড়াও কখনও অস্বাভাবিক হতে পারে। আর এই সব অসঙ্গতিগুলোকেই ডিপফেক ভিডিওর মূল লক্ষণ।
এমন অনেক টুলস ও সফটওয়্যার রয়েছে, যা মেশিন লার্নিং কাজে লাগিয়ে একাধিক সুক্ষ্ম সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করার মধ্যে দিয়ে ডিপফেক শনাক্ত করে। সাধারণত সেই সুক্ষ্ম বিষয়গুলো মানুষের চোখে স্পষ্ট হয় না।
ডিপফেক ধরার ৫ মোক্ষম উপায়
১. চোখের দিকে তাকান: ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ডিপফেক ভিডিওতে একটা চরিত্রের মুখ সাধারণ মানুষের মতো ব্লিঙ্ক করে না। এখানে রশ্মিকা মান্দানার ভিডিওতে যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন তিনি দুই বার ব্লিঙ্ক করেছেন। তার চোখ দুটোও একটু অন্যরকম দেখাচ্ছিল।
২. ঠোঁটটা ভালো করে দেখুন: একটু খারাপ মানের ডিপফেক ভিডিও ধরে ফেলাটা খুব সহজ। আর তা ধরতে পারবেন চরিত্রের খারাপ লিপ-সিঙ্কিং থেকে। রশ্মিকার ভিডিওতেই যদি আপনি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন অডিওর সঙ্গে তার লিপ-সিঙ্কিং খাপ খাচ্ছে না। ডিপফেক ভিডিওতে কিছু না কিছু অসঙ্গতি দেখাতেই থাকবে।
৩. ত্বক: আসল ব্যক্তি আর ভুয়া ব্যক্তির স্কিনের টোন নিশ্চয়ই এক হবে না। যদিও একটা ভিডিও থেকে একনজরে তা বোঝাটা একটু অসম্ভবই বটে। ডিপফেক ভিডিওতে চরিত্রের এমনই ত্বক দেখানো হয়, যাতে কোনও দাগ নেই। এছাড়াও শরীরের অদ্ভুত নড়াচড়াও সেক্ষেত্রে একটি বড় লক্ষণ।
৪. চুল ও দাঁত: ডিপফেক ভিডিওতে চুল এক্কেবারে নিখুঁত রাখা হয়। তার কারণ মূল চরিত্রের হুবহু নকল করা একটা উচ্চমানের সফটওয়্যারের জন্যও ভালোভাবে রেন্ডার করাটা কঠিন করে তোলে। চুল ও দাঁত অনেক সময় ডিপফেক ভিডিও ডিকোড করতে সাহায্য করে। কারণ, সেগুলো কখনই স্বাভাবিক দেখাতে পারে না।
৫. গয়নার দিকেও নজর রাখুন: যদি সেই ব্যক্তি গহনা পরে থাকেন, তাহলে আলোর প্রভাবে সেগুলো অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। ডিপফেকের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা প্রবল।
আয়শা/২২ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ৯:০০