
ডেস্ক নিউজ : স্বর্ণ রেকর্ড ভাঙা দামে ছুটে চলেছে। আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ইতিহাস গড়ে ৪ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়েছে। ২০০৮ সালের পর এটি সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক উত্থান। খবর রয়টার্স
চলতি সপ্তাহে স্বর্ণের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। যা ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক বৃদ্ধি। সে সময় লেহম্যান ব্রাদার্সের পতনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট শুরু হয়েছিল।
জার্মানির হেরাউস মেটালসের মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জুম্ফে বলেন, সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং ব্যাংক খাতের উদ্বেগ সব মিলিয়ে স্বর্ণের জন্য পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত অনুকূল। তবে দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় স্বল্পমেয়াদে কিছুটা স্থিতি আসতে পারে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে দেখা গেছে, স্বর্ণের রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স বা আরএসআই এখন ৮৮-তে দাঁড়িয়েছে, যা নির্দেশ করে দাম অতিরিক্ত ক্রয় অবস্থায় আছে।
অন্যদিকে, স্পট মার্কেটে রূপার দাম ০.৪ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ৫৪ ডলারে নেমে এসেছে। তবে এর আগে এটি ৫৪.৪৭ ডলারে উঠে ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছুঁয়েছিল। চলতি সপ্তাহে রূপার দাম বেড়েছে ৭.৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর শেয়ারে ধস নামায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে চাপ দেখা দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছেড়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার আরও একটি সুদের হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। বাজারে ধারণা করা হচ্ছে, ফেড ২৯-৩০ অক্টোবরের বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমাতে পারে এবং ডিসেম্বরেও আরও এক দফা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, চীন বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অযথা আতঙ্ক সৃষ্টির’ অভিযোগ তুলেছে এবং রপ্তানি সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় বৃদ্ধি, ডি-ডলারাইজেশন এবং শক্তিশালী এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড প্রবাহ এই উত্থানের মূল কারণ। সোসিয়েত জেনেরালের পণ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান মাইকেল হেইগ বলেন, ‘বাজারে ইটিএফ প্রবাহই মূলত দামের ঊর্ধ্বগতি টানছে।’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণভিত্তিক ইটিএফ এসপিডিআর গোল্ড ট্রাস্ট জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের মজুত বেড়ে ১ হাজার ৩৪.৬২ টনে পৌঁছেছে, যা জুলাই ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি ২০২৫ সালের স্বর্ণের গড় মূল্যপ্রত্যাশা ১০০ ডলার বাড়িয়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪৫৫ ডলার করেছে। ব্যাংকটি বলেছে, ২০২৬ সালে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে।
অন্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে প্লাটিনামের দাম ৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬৪৪.৭৫ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২.২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫৭৮.০৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম পড়বে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। পাশাপাশি ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকা।
দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০৫ টাকায়। যা দেশের ইতিহাসে এক ভরি রুপার সর্বোচ্চ দাম। এছাড়াও ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ৩ হাজার ৮০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আয়শা/১৭ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:০০