
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘অপরাধ দমনে’ এবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরে সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব আরও তীব্র আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।
এমন এক সময় ট্রাম্প সেনা মোতায়েনের হুমকি দিলেন, যার কয়েক দিন আগে তাকে বাল্টিমোরে ‘সেফটি ওয়াক’ বা নিরাপত্তা পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট গভর্নর ওয়েস মুর।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য ঘিরে দেশটিতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্প্রতি তার বিরোধীপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য মোতায়েন করতে দেখা যাচ্ছে।
যদিও ট্রাম্প বলছেন যে, শহরগুলোতে ‘অপরাধ দমনে’র অংশ হিসেবেই সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় ১৭০০ সদস্যকে মোতায়েন করা হতে পারে বলে মার্কিন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়।
গভর্নর মুর বরাবরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন কড়া সমালোচক। অপরাধ দমনের নামে সেনা পাঠানোর যে হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন, সেটাকে ‘অজ্ঞতাপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন মুর। তিনি বলেন, তারা আমাদের রাস্তায় হাঁটেনি, তারা এখানকার মানুষের সঙ্গেও থাকেনি। ফলে তারা আমাদের সম্পর্কে বারবার এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে নিজেরা মজা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি চাইবো, আমার হাঁটতে যাওয়ার আগে তিনি সেখানকার অপরাধ দমন করুন।
ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রায় দুই হাজার সেনা মোতায়েন করেছেন।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপরাধ দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েকশ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, অভিযান শুরু করার পর ওয়াশিংটন ডিসি এখন ‘পুরোপুরি নিরাপদ’। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ডিসি রীতিমত একটা নরকে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা নিরাপদ।
এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মোতায়েন করা সৈন্যরা আগে নিরস্ত্র অবস্থায় থাকলেও এখন তাদের সঙ্গে অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো ওইসব সেনারা এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের অভিযানে অংশ নিতে শুরু করেননি। তারা বর্তমানে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর কাছে অবস্থান নিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটন পুলিশের (এমপিডিসি) প্রকাশিত তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে সেখানে অপরাধের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর বছর খানেকের মধ্যেই সেটা আবারও কমে আসে।
ওয়াশিংটন ডিসির মতো নিউইয়র্ক ও শিকাগোতেও সেনা মোতায়েন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে ডেমোক্র্যাট নেতারা অবশ্য সেটার তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
শিকাগোতে সেনা পাঠানোর যে হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন, সেটিকে রীতিমত ক্ষমতার অপব্যবহার বলে বর্ণনা করেছেন ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও শার স্কুলের যৌথ এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের বাসিন্দারা সেনা মোতায়েনের বিষয়টি পছন্দ করছেন না। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দাই শহরে ফেডারেল ও ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েন এবং পুলিশি কড়াকড়ির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
আয়শা/২৫ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৬:২০