
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, নিরাপত্তা জটিলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। প্রতিক্রিয়ায় বড় বড় রাষ্ট্রগুলো বাড়াচ্ছে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট। এ পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানির মতো প্রভাবশালী দেশগুলো এখন বিশ্ব অস্ত্র বাজারে নিজেদের আধিপত্য ক্রমেই মজবুত করছে।
এই প্রেক্ষাপটে সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ের বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে শীর্ষ দশ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এ দেশগুলো কেবল সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহেই নয়, ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১. যুক্তরাষ্ট্র: আধিপত্যের শীর্ষে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৪৩%-এর উৎস এই দেশটি। প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র রপ্তানি করে তারা। মার্কিন অস্ত্রের প্রধান ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ইউক্রেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও পোল্যান্ড। উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান (এফ-৩৫, এফ-১৬), ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এদের মূল পণ্য।
মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। ছবি: মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর
২. ফ্রান্স: রাফালের দাপটে দ্বিতীয়
বিশ্ব অস্ত্র বাজারের প্রায় ৯.৬% রপ্তানি ফ্রান্সের দখলে। গড়পড়তা বছরে তারা ৫-৬ হাজার কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করে। ভারত, কাতার ও গ্রিস ফরাসি অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। রাফাল যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, ফ্রিগেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রান্সের রপ্তানিযোগ্য মূল সামগ্রী।
৩. রাশিয়া: যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় ব্যাহত রপ্তানি
বিশ্ব অস্ত্র রপ্তানির ৭.৮% সরবরাহ করে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি কমছে। প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে দেশটি। ভারত, চীন ও কাজাখস্তান রাশিয়ার প্রধান গ্রাহক। সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান, এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ট্যাংক তাদের মূল রপ্তানিপণ্য।
রাশিয়ার মিগ যুদ্ধবিমান। ছবি সংগৃহীত
৪. চীন: কৌশলগত কম দামে বাজারে প্রভাব
চীনের অংশীদারিত্ব ৫.৯%। প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে দেশটি। পাকিস্তান, সার্বিয়া ও থাইল্যান্ড চীনা অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। জেএফ-১৭ ও জে-১০ যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও রকেট লঞ্চার চীনের রপ্তানির মূল পণ্য। কম দামে অস্ত্র দিয়ে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন।
৫. জার্মানি: টেকসই ও উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র
জার্মানির বাজার অংশীদারিত্ব ৫.৬%। প্রতি বছর তারা প্রায় ১৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে। ইউক্রেন, মিসর ও ইসরাইল প্রধান গ্রাহক। লেপার্ড ট্যাংক, টাইপ-২১২ সাবমেরিন ও সাঁজোয়া যান তাদের বিখ্যাত রপ্তানিপণ্য।
৬. ইতালি: প্রযুক্তি ও আঞ্চলিক জোটের সুবিধা
ইতালির অংশীদারিত্ব ৪.৮%। বছরে গড়ে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে। কাতার, মিসর ও কুয়েত প্রধান ক্রেতা। হেলিকপ্টার, ক্ষেপণাস্ত্র, ফ্রিগেট ও বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহ করে তারা।
আরও পড়ুন
৯ যাত্রীকে বাস থেকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা
৭. যুক্তরাজ্য: ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র শক্তি
যুক্তরাজ্য বৈশ্বিক বাজারের ৩.৬% অস্ত্র সরবরাহ করে। বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন তাদের বড় গ্রাহক। টাইফুন যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও রাডার সিস্টেমে তারা বিশেষায়িত। বিএই সিস্টেমস বড় অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।
৮. ইসরাইল: পরীক্ষিত প্রযুক্তির প্রতি আস্থা
ইসরাইলের অংশীদারিত্ব ৩.১%। তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (আয়রন ডোম), ড্রোন, নজরদারি প্রযুক্তি রপ্তানি করে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন তাদের প্রধান ক্রেতা। বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত হওয়ায় ইসরাইলি অস্ত্রের কদর বাড়ছে।
৯. স্পেন: ধীরে ধীরে বাজারে শক্ত অবস্থান
স্পেনের অস্ত্র রপ্তানির অংশ ৩%। সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও তুরস্ক প্রধান গ্রাহক। যুদ্ধজাহাজ, প্রশিক্ষণ বিমান ও হালকা অস্ত্রে স্পেনের চাহিদা বাড়ছে।
১০. দক্ষিণ কোরিয়া: দ্রুত বিকাশমান প্রতিযোগী
দক্ষিণ কোরিয়ার অংশীদারিত্ব ২.২%। পোল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভারত প্রধান ক্রেতা। কে-৯ কামান, হালকা ট্যাংক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রপ্তানি করে। অল্প সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া অস্ত্র বাজারে প্রতিযোগী শক্তি হয়ে উঠেছে।
আয়শা//১১ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৫:১৪