
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে কোনোভাবেই পরাজিত হতে দেওয়া যাবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে চীন। এক ব্যতিক্রমী ও সরাসরি মন্তব্যে বেইজিং জানিয়েছে, রাশিয়ার পরাজয় হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক মনোযোগ পুরোপুরি চীনের দিকে চলে আসতে পারে, যা তারা কোনোভাবেই চায় না।
চলমান এই যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশ্যে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে থাকলেও সম্প্রতি ব্রাসেলসে ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস-এর সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর চার ঘণ্টাব্যাপী এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তার বরাতে এই খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় চীনের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের মোকাবিলায় তাদের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করবে, যা বেইজিং এড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা, বিরল খনিজ, বাণিজ্য ভারসাম্য, তাইওয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যু নিয়ে ‘কঠিন কিন্তু সম্মানজনক’ আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ওয়াং ই-এর এই মন্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে, বেইজিং হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হোক এমনটিই চাইছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোযোগ দিতে না পারে।
বিশ্লেষকেরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের ভূ-রাজনৈতিক হিসাব অনেক জটিল। বেইজিং যা-ই বলুক, বাস্তবে তাদের অনেক কিছু হারানোর ঝুঁকি রয়েছে রাশিয়া যুদ্ধ হেরে গেলে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘চীন ইউক্রেন ইস্যুর পক্ষ নয়। আমরা সব সময়ই বলে আসছি—আলোচনা, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চাই। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আমরা রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে গঠনমূলক ভূমিকা রেখে যাব’। তবে চীনের এসব প্রকাশ্য বিবৃতির আড়ালে যুদ্ধ নিয়ে রয়েছে আরও অনেক জটিল হিসাব। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন অংশীদারত্ব’ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে দুদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।
চীন নিজেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করলেও বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বেইজিংয়ের অনেক কিছু চাওয়া পাওয়ার আছে—বিশেষ করে রাশিয়া পরাজিত হলে তারা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক মিত্রকে হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে পরোক্ষ সামরিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও বেড়েছে। ইউক্রেন ইতোমধ্যে চীনের কয়েকটি কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে, যেগুলো ড্রোন উপাদান এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ করছে রাশিয়াকে।
শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলার পর দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা দাবি করেন, রাশিয়ার ব্যবহার করা একটি ‘গেরান ২’ ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে দেখা গেছে সেটি চীনে তৈরি—এ বছরের ২০ জুন তারিখের উল্লেখও রয়েছে। তিনি বলেন, ওই হামলায় ওডেসায় অবস্থিত চীনা কনসুলেট ভবনও সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিবিহা এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এটাই প্রমাণ করে পুতিন কিভাবে তার আগ্রাসন আরও ছড়িয়ে দিচ্ছেন—উত্তর কোরীয় সেনা, ইরানি অস্ত্র ও কিছু চীনা কোম্পানিকে জড়াচ্ছেন এই যুদ্ধে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত’। চলতি বছর আরও অভিযোগ উঠেছে যে, চীনা নাগরিকরাও ইউক্রেনে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করছে। বেইজিং এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা তাদের নাগরিকদের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
কিউটিভি/আয়শা//০৭ জুলাই ২০২৫,/রাত ৯:২৩