
ডেস্ক নিউজ : ক্যানসারে আক্রান্ত জাতীয় নারী ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণা চাকমার মা বসুপতি চাকমা। লড়ছেন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে; কিন্তু আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। সম্ভব হচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার। এর প্রয়োজনীয় সামর্থ্য নেই পরিবারের।
জানা যায়, দেড় বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ঋতুর মা বসুপতি। এর আগে ২০১৫ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঋতুপর্ণার বাবা ব্রজ বাঁশি চাকমা। এখন ঋতুর মায়ের প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সবার সহায়তা চেয়েছেন তার পরিবার ও গ্রামবাসী।
সম্প্রতি এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ম্যাচে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এ দুটি দলের বিপক্ষে জোড়া গোল করে দেশের সাফল্য এনেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ২ জুলাই মিয়ানমারের থুউন্না স্টেডিয়ামে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে বাংলাদেশ দলের ২০২৬ সালে এশিয়া কাপ খেলার নিশ্চিত হয়েছে।
ঋতুপর্ণার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাইছড়ি নামক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে। ঋতুপর্ণা এখন দেশের নারী ফুটবল দলের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার পেশাগত আয় দিয়ে চলে তাদের পরিবার। তাই পরিবারের একমাত্র ভরসা এখন ঋতুপর্ণা। তিন বোনের মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ভাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন তিন বছর আগে। বর্তমানে ফুটবলের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা।
স্থানীয়রা জানান, এই নারী ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণার একদিকে পারিবারিক নানা সংকট, তার ওপর মায়ের দূরারোগ্য কঠিন রোগ ক্যানসার চিকিৎসায় আরও মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর সরকারের তরফ থেকে ঋতুপর্ণার জন্য নতুন ঘর নির্মাণ, এলাকায় রাস্তার উন্নয়ন ও বেকার বোনদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা আজও অনুপস্থিত। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছেন মা বসুপতি; কিন্তু অর্থের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার।
বাড়িতে অসুস্থ থাকা ঋতুর মা বসুপতি চাকমা বলেন, অনেক দিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় আছি। আমার শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। খুব কষ্টে দিন কাটছে। তবু আমি গর্বিত মেয়ের জন্য। কষ্টের মাঝেও আনন্দ অনুভূতি খুঁজে পাই মনে। আমি গর্বিত সে যে দেশের হয়ে খেলে। মেয়ের খেলা নিয়মিত দেখি; কিন্তু খুব কষ্ট লাগে- আমি যে এখন জীবন-মৃত্যুর মাঝে। মেয়েকে ভরসা দিতে পারি না। আমার চাওয়া- ঋতু যেন দেশের হয়ে বিশ্ব জয় করতে পারে। আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র ঋতুর হাতে। চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খাই; কিন্তু ঋতুর যে আয় তা দিয়ে পরিবার চালানো কষ্টকর। তাই আমার নিয়মিত চিকিৎসার খরচ জোগানো তার পক্ষে কঠিন।
ঋতুপর্ণার বড় বোন পাম্পী চাকমা বলেন, মা দেড় বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার জন্য অর্থের অভাব আমাদের। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন মায়ের চিকিৎসা, ঋতুপর্ণার নিরাপদ আবাসন এবং বোনদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মানবিক বিবেচনার।
ঋতুপর্ণার প্রাথমিক শিক্ষক ও রাঙামাটির ক্রীড়া সংগঠক বীর সেন চাকমা বলেন, ঋতুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তায় একটি সরকারি চাকরি জরুরি। পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসা এবং বাড়ি নির্মাণে সরকারের প্রতিশ্রুত দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ মারুফ বলেন, ঋতুপর্ণা আমাদের সবার গর্ব। তার মায়ের অসুস্থতার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি। জেলা প্রশাসন সব সময় ঋতুপর্ণার পাশে আছে। তার বাড়ির জন্য জায়গা ও বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কিউটিভি/আয়শা//০৭ জুলাই ২০২৫,/রাত ৯:২৩